শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ঝিনাইদহে ৭০০ বছরেরও বেশি পুরোনো ৯ মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ আফফান: ঝিনাইদহ যশোর জেলার একটি মহাকুমা। ঝিনাইদাহ জেলাটি ১৮৬২ সালে মহাকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে এটি একটি পৃথক জেলা হয়। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে তিন বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত প্রাচীন শহর মোহম্মদাবাদ৷ ১৯৯৩ সালে মাটি খুঁড়ে সেখানে ১৫টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান মেলে৷ বেশিরভাগই ৭০০ বছরেরও বেশি পুরোনো মসজিদ৷ তার মধ্যে এখানে নয়টি মসজিদের কথা উল্লেখ্য করা হলো।

শহর মোহাম্মদাবাদ: শহর মোহাম্মদাবাদের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, প্রাচীনকালে বারোবাজারের নাম ছিল ছাপাইনগর৷ বারোজন সহচর নিয়ে খানজাহান আলী সেখানে যান৷ সেখান থেকেই এর নাম বারোবাজার৷ সেখানে খানজাহান আলী বেশ কিছু মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন৷ যুদ্ধ কিংবা মহামারিতে একসময় ধ্বংস হয়ে যায় বারোবাজার৷ থেকে যায় প্রাচীন ইতিহাস৷

পাঠাগার মসজিদ: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এক গম্বুজ বিশিষ্ট পাঠাগার মসজিদ৷ লাল ইটের তৈরি এই মসজিদ আকারে ছোট৷ দীর্ঘদিন মাটি চাপা পড়ে থাকার পর ২০০৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কার করে৷ জনশ্রুতি আছে সুলতানী আমলে নির্মিত এই মসজিদ কেন্দ্রীক একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল৷ মসজিদের পাশেই বড় আকারের একটি দিঘি, নাম পিঠেগড়া পুকুর৷

পীর পুকুর মসজিদ: পাঠাগার মসজিদের পশ্চিম দিকের সড়কে দুটি বাঁক ঘুরলেই বিশাল দিঘি, নাম পীর পুকুর৷ এ পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে বড় আকৃতির একটি মসজিদ৷ ১৯৯৪ সালে খনন করে মাটির নীচ থেকে বের করা হয়েছে স্থাপনাটিকে৷ এই মসজিদে ছাদ নেই, শুধু দেয়াল আছে৷ মসজিদটি লাল ইটের তৈরি৷

গোড়ার মসজিদ: পীরপুকুর মসজিদের পাশের তাহেরপুর সড়ক ধরে সামান্য পশ্চিম দিকে হাতের বাঁয়ে আরেকটি প্রাচীন মসজিদের দেখা মিলবে৷ এর নাম গোড়ার মসজিদ৷ এ মসজিদটি চার গম্বুজ বিশিষ্ট৷ মসজিদের মিহরাব ও দেয়ালে পোড়ামাটির ফুল, লতাপাতা ফলের নকশাসহ নানান কারুকার্য মণ্ডিত৷ বাইরের দেয়ালও লাল ইটে মোড়ানো৷

গলাকাটা মসজিদ: ২১ ফুট লম্বা ও ১৮ ফুট চওড়া এই মসজিদ খনন করা হয় ১৯৯৪ সালে৷ ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব আছে৷ এর দেয়ালগুলো প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া৷ মাঝখানে আছে লম্বা দুটি কালো পাথর৷ জনশ্রুতি আছে, বারোবাজারে এক অত্যাচারী রাজা ছিল৷ প্রজাদের বলি দিয়ে মসজিদের সামনের দিঘির মধ্যে ফেলে দিত সে৷ এ কারণেই এর নাম হয় গলাকাটা৷

জোড় বাংলা মসজিদ: মসজিদটি খনন করা হয় ১৯৯৩ সালে৷ খননের সময় এখানে একটি ইট পাওয়া যায়, তাতে আরবি অক্ষরে লেখা ছিল, ‘শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে হুসাইন, আটশো হিজরী’৷ জনশ্রুতি আছে মসজিদের পাশে জোড়া কুড়েঘর ছিল বলেই এর নাম জোড় বাংলা মসজিদ৷

সাতগাছিয়া আদিনা মসজিদ: বড় একটি পুকুরের দক্ষিণ পাশে সাতগাছিয়া আদিনা মসজিদের ধ্বংসাবশেষ৷ এটির শুধু দেয়াল আর নীচের অংশই অবশিষ্ট আছে৷ জানা যায়, সর্বপ্রথম গ্রামের লোকজনই মাটিচাপা পড়ে থাকা এই মসজিদ উদ্ধার করে৷ আকারে এ এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি৷ প্রায় ৭৭ ফুট লম্বা ও ৫৫ ফুট চওড়া মসজিদের ভেতরে আছে ৪৮টি পিলার৷ পশ্চিম দেয়ালে লতা-পাতার নকশা সমৃদ্ধ তিনটি মিহরাব আছে৷

নুনগোলা মসজিদ: বারোবাজারের হাসিলবাগ গ্রামে বড় দিঘির পশ্চিম পাশে রয়েছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট নুনগোলা মসজিদ৷ বর্গাকৃতির এ মসজিদে তিনটি অর্ধ বৃত্তকার মিহরাব আছে৷ এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ এটি৷ স্থানীয়রা একে লবণগোলা মসজিদও বলে থাকেন৷ তবে এ নামকরণের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না৷

হাসিলবাগ মসজিদ:নুনগোলা মসজিদের সামান্য পশ্চিমে এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ এটি৷ হাসিলবাগ মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদের আরেক নাম শুকুর মল্লিক মসজিদ৷ পোড়া মাটির তৈরি মসজিদটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ৷

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ