শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে পদত্যাগের চ্যালেঞ্জ মাওলানা আনাস মাদানীর’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের বিতর্কিত মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর পক্ষ নিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দ বিরোধী অবস্থান নেয়ায় মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর ‍চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদরাসার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা স্থগিত করেছে হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে হাউআতুল উলয়ার এমন সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছেন আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী। লালখান বাজার মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি হারুন ইজহার বিষয়টির সুরাহা করতে বোর্ড নেতাদের ফোন দিলে মাওলানা আনাস মাদানীর সঙ্গে ঝামেলা মেটানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে চলছে তীব্র সমালোচনা।

লালখান বাজার মাদরাসার বোর্ড পরীক্ষা স্থগিতের কী কারণ? হাটহাজারী আর লালখান বাজারের পুরনো দ্বন্দ্ব? নাকি ভিন্ন কিছু এসব জানতে হাটাহাজারী মাদরাসার সহকারী শিক্ষাসচিব মাওলানা আনাস মাদানীর সঙ্গে কথা বলেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব

লালখান বাজার মাদরাসার পরীক্ষা স্থগিতে আপনার ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ, বিষয়টি একটু পরিস্কার করুন।

চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর তাবলিগ ইস্যুতে ভূমিকা জনসম্মুখে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় হাইআতুল উলয়ার বৈঠকে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন সদস্যরা। এখানে আমার ব্যাপারে কোনো বিষয় যুক্ত নেই। আমি মিটিংয়ে লালখান মাদরাসা নিয়ে কোনো কথাই বলিনি। তার দেওবন্দ বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় সদস্যরা এ সিদ্ধান্ত নেন।

একই সঙ্গে বৈঠকে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের মারদাসার বিষয়ে আলোচনা ওঠে। তবে উনার অবস্থান যেহেতু এখনো ক্লিয়ার না তাই সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কমিটি করা হয়েছে।

মাওলানা আনাস মাদানী বলেন, মুফতি হারুন ইজহার যে অভিযোগ করেছেন আমি চ্যালেঞ্জ করছি এমন কোনো কথা মিটিংয়ে হোক বা ইনফেরাদি কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমার প্ররোচনায় এটা হয়েছে তাহলে আমি হাইআতুল উলয়া থেকে পদত্যাগ করবো।

তিনি আরও বলেন, লালখান মাদরাসার মারকাজ বন্ধ করা হয়েছে। ছাত্রদের পরীক্ষা বন্ধ করা হয়নি। তারা অন্য কোনো মারকাজ থেকে পরীক্ষা দিতে পারবে। ছাত্রদের তো কোনো দোষ নেই। তারা কেন ভোগান্তির শিকার হবে?

তাছাড়া লালখান বাজারের মহিলা মাদরাসা শাখার মারকাজ এখনো বহাল রয়েছে। মহিলা মাদরাসার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

কিন্তু তারা আপনার প্রতি এমন অভিযোগ কেন করবে? পুরনো কোনো রেষারেষি থেকে কি এমনটা হতে পারে?

আমি যেটা মনে করি, আমি আহমদ শফী সাহেবের ছেলে হয়ে আমি কেন হাইআতুল উলয়ার সদস্য হলাম। এটাই আসলে ওদের টার্গেট। এটা থেকেই তারা আমার নামে এমনটা করে।

তাহলে এর পেছনে আপনি কোনোভাবে জড়িত নন?

না, এমনকি আমার বাবাও এটি নিয়ে আগে কথা বলেননি। বৈঠকে বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস উত্থাপন করলে সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে লালখান বাজার মাদরাসার ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত হয়।

মুফতি হারুন ইজহার যে অভিযোগ করলেন আপনার সাথে সমস্যা মেটাতে হবে, এটার আসলে কী কারণ?

মুফতি হারুন ইজহারের সাথে আমার কোনো দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। উনি আমার সিনিয়র। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। তাই এরকম কিছু হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি মনে করি এটা অসত্য কথা। অসত্য তথ্য।

হাইআতুল উলইয়া বা বেফাকের কোনো নেতা এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ দিতে পারবে না। উড়াল বা ধারণাপ্রসুত কথা টেনে আমাকে বিতর্কে জড়ানো হয়েছে। কোনো রকম প্রমাণ দিতে পারলে হাইআতুল উলয়ার পদ থেকে আমি পদত্যাগ করবো। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বা দারুল উলুম দেওবন্দের বিরোধী অবস্থানে যারা রয়েছেন তাবলিগ ইস্যুতে তাদের ব্যাপারে আপনাদের কী সিদ্ধান্ত?

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব যেহেতু একটা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সে বোর্ডের সেক্রেটারি মুফতি মুহাম্মদ আলী উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে যেহেতু বিষয়টি বড় তাই অনেকেই প্রস্তাব করেছেন এটি নিয়ে আরও যাচাই করা হোক। সে জন্য কমিটি করা হয়েছে। তারা যাচাই বাছাই করে অবস্থান জানাবে।

এছাড়া অন্য কোনো মাদরাসা যদি এতাতি বা দারুল উলুম দেবওন্দের অবস্থান পরিপন্থী হয় তাহলে তাদের বোর্ডে রাখা হবে না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো একক কোনো সিদ্ধান্ত নয়।

বেফাক বা হাইআতুল উলয়া শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষা বিষয়ের বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াটাকে আপনি কতটা যুক্তিসঙ্গত মনে করেন?

তাবলিগের এ ইস্যু আলেমদেরই ইস্যু। মাদরাসার ইস্যু। আর তাবলিগের চলমান ইস্যুতে যেহেতু মাদরাসা ও উলামায়ে কেরাম অনেক আগে থেকেই সক্রিয় তাই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক। কারণ উলামায়ে কেরামের সাথে তাবলীগের লোকদের উতপ্রোতভাবে সম্পর্ক, এটাকে নষ্ট করতে অন্যরা কাজ করতে পারে তাই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।

এতায়াতি বা দেওবন্দের বিরোধী কোনো মুহতামিমের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে নিষেধাজ্ঞা কি শুধু মুহতামিমের উপর আসবে নাকি পুরো মাদরাসা ও ছাত্রের উপর?

শুধু মুহতামিমের উপরই নিষেধাজ্ঞা ‍থাকবে। ছাত্রদের উপর এর কোনো দায় চাপবে না। তারা এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ