শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘মেননরা অন্ধকার জগতের মানুষ, সেখান থেকে আলোটা দেখতে পান না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী অঙ্গনে বেশ কিছু ইস্যুতে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। মাওলানা সাদ ইস্যু, কাদিয়ানি এবং সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হয়েছে রাশেদ খান মেননের সংসদে দেয়া ইসলামবিদ্বেষী ভাষণ।

তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ইসলাম ও আলেম উলামাদের গালিগালাজ করেছেন। এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। দাবি তুলেছেন, তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল এবং তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার।

বিষয়গুলোর সুন্দর সমাধান কী হতে পারে এসব নিয়ে হেফাজতের ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন হুমায়ুন আইয়ুব

উল্লেখ্য, গতবছর মুফতি ফয়জুল্লাহর বাবা ও মা ইন্তেকাল করায় তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই মর্মাহত সময় পার করছেন। নিজেও অসুস্থ থাকলেও সাম্প্রতিক এ বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বললেন। দেশবাসীর কাছে তিনি সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

আওয়ার ইসলাম: হঠাৎ করে এমপি রাশেদ খান মেনন কেন সংসদে দাঁড়িয়ে উলামা বিদ্বেষী বয়ান দিলেন?

মুফতি ফয়জুল্লাহ: আমি মনে করি রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিত্ব বাতিল হওয়ায় তার ভাতের ভেতর পিঁপড়ে পড়েছে। এ কারণে তার মনের মধ্যে একটা ক্ষোভ, তার যে কষ্ট এবং মনবেদনা এটা যেহেতু তিনি অন্য কোথাও ঝাড়তে পারে না তাই আলেম ওলামা, কুরআন শিক্ষা, কওমি মাদরাসা, ইসলাম এবং মুসলমান যাদেরকে তার কাছে দুর্বল মনে হয় তাদের ওপর নিজের ক্ষোভ মিটিয়েছেন।

তিনি যে আসলে সব দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছেন, মনপীড়ায় ভুগছেন এ থেকেই তার এমন বিষোদগার বলে আমি মনে করি।

আওয়ার ইসলাম: রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিত্ব বাতিল হয়েছে এবং এ জন্য তার রুটি রুজিতে ভাটা পড়েছে, তাই আলেম ওলামাদের প্রতি ক্ষোভের প্রকাশ করলেন বিষয়টা কি এমনই?

মুফতি ফয়জুল্লাহ: হ্যাঁ, সরকারি পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তার বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে। তিনি দেখছেন- সরকার আলেম ওলামাদের প্রতি একটু নমনীয়। এ কারণেই সে আলেম ওলামাদের বিষদগার করেছেন।

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি আলেম ওলামাদের বেশ আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ কষ্ট থেকে রাশেদ খান এই কথা বলছে বলে আপনি মনে করেন?

মুফতি ফয়জুল্লাহ: আমার মনে হয় আল্লামা আহমাদ শফী তার পুরো জীবন ইসলামের পথে ব্যয় করেছেন। আলোকিত মানুষ গড়ার পেছনে জীবন ক্ষয় করেছেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সমাজে ন্যায় নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। মাদক ও নারী নির্যাতন বন্ধ করার জন্য কাজ করেছেন। শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়বার জন্য যিনি চেষ্টা করেছেন।

বিপরীতে রাশেদ খান মেনন অন্ধকার জগতের মানুষ। আমার মনে হয় তিনি অন্ধকার থেকে আলোর এই জগৎটাকে দেখতে পারে না বা সহ্য করতে পারেন না বলেই এই কাজগুলো করছেন।

কাদিয়ানীদের দোসর রাশেদ খান মেনন মোল্লাতন্ত্রের কথা বলেছেন। তিনি আসলে এ কথা বলে দেশের মধ্যে অশান্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। যে সংসদ সংবিধান এবং দেশের আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সংবিধান বলে, কোনো কাজ বা কথা যেটা মানুষকে খারাপ কাজ করতে উৎসাহ বা উদ্বুদ্ধ করে সেটা আইন বিরোধী।

সারাদেশে মানুষের প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠা, রাস্তায় নেমে আসা, এই চিন্তা থেকেও সে কাজ করতে পারে। আমি মনে করি ইসলাম ও আলেম সমাজের প্রতি মেননের এই বিষোদগার অত্যন্ত কুৎসিত ও অমার্জিত।

সংসদের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় বসে মেননের এই বিষোদগার তাকে দেশবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্টে।

আওয়ার ইসলাম: আপনি তাকে কাদিয়ানিদের দোসর বলছিলেন। তো আসলেই কাদিয়ানিদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা?

মুফতি ফয়জুল্লাহ: ইতোপূর্বে আমরা তাকে দেখেছি কাদিয়ানিদের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। সংসদের তার বক্তব্যেও তিনি কাদিয়ানিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, এবং আমি জানি, মেনন উলামামে কেরামদের দাবিকে পাকস্তানি কায়দার দাবি বলে কটাক্ষ করেছেন।

আওয়ার ইসলাম: এই সরকারের সঙ্গে আলেমদের সুসম্পর্ক আছে এবং তার প্রভাবও আছে। কিন্তু সংসদে রাশেদ খান মেননের এ কথার প্রতিবাদ কেউ করলেন না কেন?

মুফতি ফয়জুল্লাহ: আমার মনে হয় এখানে নোংরা রাজনীতি কাজ করেছে। আসলে নোংরা রাজনীতি আমাদের দেশটাকে শেষ করে দিল। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হয়ত কেউ কথা বলেনি। কিন্তু সবার মধ্যেই একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

আসলে এ ধরনের মানুষগুলো যাদের কোনো জায়গায় মূল্য নেই। তারা উল্টা পাল্টা কথা বলে লাইমলাইটে আসতে চায়। অন্যকে কটাক্ষ করে, নীচু ভাষায় গালি দিয়ে তারা আলোচিত হতে চায়।

এদের তো অন্যের সাহায্য ছাড়া মেম্বার হওয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই। তাই তারা এভাবে আলোচনায় আসে। অন্যের কাঁধে ভর করে তারা এমপি মন্ত্রী হয়েছে।

আমি মনে করি সংসদের মধ্যে এ ধরণের কথার প্রতিবাদ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। তার বিরুদ্ধে সরকারিভাবে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। আইনশৃঙ্খলা ও সংবিধান বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় তাকে বিচারে আনা উচিত।

আওয়ার ইসলাম: প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কাছে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আপনারা কোন দাবিটা করছেন মেননের জন্য?

মুফতি ফয়জুল্লাহ: হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ একটি সংগঠন এ জন্য আমরা সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশা করবো। দ্বিতীয়ত, ব্যাপক পরিসরে তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাবো।

আওয়ার ইসলাম: সেই ব্যবস্থাটা কী হবে? বক্তব্য প্রত্যাহার বা এ ধরণের কিছু? নাকি তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা?

মুফতি ফয়জুল্লাহ: তাকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তার ভুল স্বীকার করতে হবে। আগামীতে এ ধরণের কোনো কাজ করবে না সেটাও স্বীকার করতে হবে। নিজের সম্পূর্ণভাবে সংশোধনের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।

যদি তিনি এটা করেন তাহলে বাংলাদেশের আলেম ওলামা ও আল্লামা আহমদ শফী দেখবেন তাকে ক্ষমা করা যায় কি না। কিন্তু যদি নিঃশর্ত ক্ষমা না চায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে এবং দাবি অব্যাহত থাকবে।

আওয়ার ইসলাম: সর্বশেষ আপনারা আজ শুক্রবার যে কর্মসূচি দিয়েছেন তাতে কতোটা শান্তিপূর্ণভাবে দাবিগুলো সরকারের কাছে পৌঁছাবেন। এবং সরকার এটা না মানলে আপনারা কী ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করবেন?

মুফতি ফয়জুল্লাহ: আমরা না মানার প্রশ্নে জড়াতে চাচ্ছি না। এই দাবি সরকার মেনে নিবে বলে আমরা মনে করি। কারণ আমাদের দাবি অযৌক্তিক না এবং না মানার মতো না। আমি মনে করি রাশেদ খান মেননের ইসলাম আলেমদের নিয়ে কটূক্তি করার জন্য সরকার তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ