শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


মেননকে জাতির কাছে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে: জমিয়ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের গত ৩ মার্চ জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যের কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাশেদ খান মেনন ইসলাম, আলেম-উলামা, ইসলামী শিক্ষা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্র থেকেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন এবং অমুসলিম কাদিয়ানীদের প্রতারণার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার এই ঘৃণাব্যঞ্জক বক্তব্য সংসদের কার্যবিবরণী থেকে এক্সপাঞ্জ করতে হবে এবং তাকে অনতিবিলম্বে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

আজ (৬ মার্চ) বুধবার বেলা ২টায় শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে রাশেদ খান মেননের বিতর্কিত বক্তব্যের উপর জমিয়ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, দলের সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবীব, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মুফতী মনির হোসাইন কাসেমী, অর্থসম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসঊদ প্রমুখ।

বৈঠকে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, কওমি মাদ্রাসাসমূহ সরাসরি দেশের জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। কওমি মাদ্রাসায় পবিত্র কুরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা ও পূর্ণ ইসলামী শিক্ষাদানের পাশাপাশি সৎ জীবন যাপন, সামাজিক সহাবস্থান এবং আদর্শ দেশ ও জাতি গঠনের শিক্ষা দেওয়া হয়। সৎ, যোগ্য ও ধর্মপ্রাণ নাগরিক তৈরির কওমী শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাশেদ খান মেনন ‘বিষবৃক্ষ’ বলে আলেম-উলামা, ছাত্র সমাজ ও কোটি কোটি মানুষের মনে আঘাত দিয়েছেন। মূলতঃ তিনি এমন উস্কানীমূলক ঘৃণাব্যঞ্জক বক্তব্য দিয়ে দেশবিরোধী কোন চক্রের হয়ে গোলযোগ তৈরির ষড়যন্ত্র করছেন।

জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী খতমে নবুওয়াত অস্বীকার করে নিজেকে মিথ্যা নবীর দাবি করে। তাই তার অনুসারীদের পক্ষে নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করার কোনই সুযোগ নেই। কারণ, খতমে নবুওয়াতের উপর দৃঢ় বিশ্বাসস্থাপন করা মুসলিম হিসেবে পরিচিত হওয়ার জন্য অবশ্যক কর্তব্য। হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে ‘শেষ নবী’ হিসেবে বিশ্বাস করা তথা খতমে নবুওয়াতের উপর ঈমান আনয়ন মুসলিম হওয়ার জন্য ‘ট্রেড মার্ক’ স্বরূপ।

জমিয়ত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, কাদিয়ানীরা অমুসলিম পরিচিতি নিয়ে অন্যান্য সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মতো নাগরিক অধিকার ভোগ করায় আমাদের কোন আপত্তি নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানদের মতো তারাও অমুসলিম ঘোষিত হয়ে সকল নাগরিক অধিকার ভোগ করুক। কিন্তু তারা অমুসলিম হওয়া সত্তে¡ও মুসলিম পরিচিতি ও ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করে স্বল্পশিক্ষিত ও সরলমনা সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করে যাবে, এটা মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। অথচ রাশেদ খান মেনন প্রকাশ্যে কাদিয়ানীদের মিথ্যাদাবির পক্ষে ওকালতিতে মাঠে নেমেছেন।

জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, হেফাজতে ইসলাম একটি বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন। দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে এই সংগঠনটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ঈমান-আক্বীদা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে আসছে। এই সংগঠনের ব্যানারে দেশের আলেম সমাজ ও কোটি কোটি তৌহিদী জনতা ঐক্যবদ্ধ। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের প্রশ্নেও এই সংগঠনটির সরব ভূমিকা সর্বমহলে অত্যন্ত প্রশংসিত।

অথচ রাশেদ খান মেনন সংসদে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয় এই বৃহৎ সংগঠন এবং এর আমীর সর্বজনমান্য প্রবীণ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধেও জঘন্য কটূক্তি করেছেন। তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবমাননা করেছেন। তিনি সাধারণ শিক্ষায় নাস্তিক্যবাদি পাঠ চালুর পক্ষে ওকালতি করে গণমানুষের আদর্শিক চিন্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, রাশেদ খান মেননকে অনতিবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহারপূর্বক জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং সংসদের কার্যবিরণী থেকে তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে হবে। অন্যথায় তৌহিদী জনতা এসব কট‚ক্তি, অপপ্রচার ও ধর্মবিদ্বেষী বক্তব্যের সমুচিত জবাব দেবে।

বৈঠকে আগামী কাল (৭ মার্চ) বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জমিয়তের পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে রাশেদ খান মেননের ঘৃণাব্যঞ্জক বক্তব্যের প্রতিবাদে সমমনা ইসলামী রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক আহবান করেছে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ