মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


পাক-ভারত যুদ্ধে আমরা কি ক্ষতিগ্রস্ত হবো না?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম
প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক

যুদ্ধ বা নিরাপত্তা বিশ্লেষক আমি নই। সাধারণ লেখক হিসেবে সাদা চোখে যা দেখি তা নিয়ে তথা কাশ্মীর ঘটনা থেকে শুরু হওয়া ভারত ও পাকিস্তানের টান টান উত্তেজনা এবং এ থেকে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার প্রচণ্ড ভয় থেকে দু'একটা কথা বলতে চাচ্ছি।

কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলা নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে ভরত বিমান আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। ১০০০ কেজি বোম ফেলে ৩০০ লোকের হতাহতের কথা জানানো হয়।

পাল্টা পাকিস্তান ও জবাব দিয়েছে। ৪ টি বিমান ভারতে হামলা চালিয়েছে। একইসঙ্গে ভারতের ২ পাইলটকে আটক করেছে। যদিও ইমরান খান শান্তির নিদর্শন হিসেবে পাইলটকে ছেড়ে দিয়েছেন।

পাক বর্ডারে ১৪০০০ বাংকার করেছে ভারত। মোদি শত্রু রাষ্ট্রগুলোকে সাবধান করে দিয়েছেন। সমানতালে চলছে গোলাগুলি। ভারতকে খুবই আক্রমণাত্মক মনে হয়। অনেকেই বলছেন এটি মোদির নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল।

যুদ্ধ শুরু হলে আমরাও কি রেহাই পাব? একদম না! কিন্তু টিভি টকশোগুলোতে সব বিষয়ের পণ্ডিতগণ বলেই যাচ্ছেন, এতে বাংলাদেশের নাকি কোন ক্ষতি নেই। বড় খেতাবধারী টকশো পণ্ডিতদের কথায় যাওয়ার আগে ঢাকার চকবাজারের চুরিহাট্টায় থেকে ঘুরে আসা যাক। অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে আপনাদের অনেকের কাছে। কিন্তু না।

২০ ফেব্রুয়ারি ১৯, রাত দশটার পর ঢাকার চকবাজারের চুরিহাট্টায় শাহী মসজিদের কাছে ‘ওয়াহিদ ম্যানসন’ নামের একটি ভবনে আগুন লাগার পর তা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ শুরু করে আগুন নেভায়।

সরকারি দায়িত্ব পালন কালে আমি ২টি বড় অগ্নি ঘটনার তদন্ত করেছি। একটি গুলিস্তান-নাজ সিনেমা হল পুড়ে ছাড়খার হওয়া, অপরটি রাজধানী সুপার মার্কেটের আগুন। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি (যদিও এখানে বললে উপকার হবে কিনা জানি না) চকবাজারের আগুন মোটেও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বা সিলিন্ডার থেকে নয়, কেমিক্যাল থেকেই হয়েছে।

যাক যা বলছিলাম, ওয়াহিদ ম্যানশনের কেমিক্যাল গোডাউন এর দায় বহন করতে হল আরও ৪ টি নির্দোষ ভবনকে, রাস্তার নিরীহ মানুষকে, অনেক যানবাহনকে। ৭০ টি জীবন ঝরে পড়ল। মূলে কিন্তু কেমিক্যাল গোডাউন।

ভারতের কাশ্মীর কেমিক্যাল গোডাউন হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে দুই বড় দেশের স্বার্থের দ্বন্দ্বে।কপালে তাদের স্বাধীনতা নাই । আজ সেখানে আগুন ধরে গেছে। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তানে। আজ যদি আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে তাহলে পাশের ভবন হিসেবে বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটানও কি জ্বলবে না? এর বিশ্লেষণ করবেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ।

১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার পর ভারত প্রজাতন্ত্র ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তানের বিকাশ ঘটে। তারপর ৩টি বড় যুদ্ধ হয়। ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে। যুদ্ধে কেউ জেতেনি, মানুষ মরেছে, পঙ্গু হয়েছে। ঘর-বাড়ি ছাড়া হয়েছে। সন্দেহ-সংশয়, দূরত্ব বেড়েছে।

ভারত একটি বৃহৎ শক্তিশালী দেশ। বড় হিসেবে তাদের মন যতটা বড় হওয়ার কথা ছিল ততটা না হওয়ায় পাশের ছোট্ট দেশগুলো নানা মনোকষ্ট নিয়ে আছে যা ভারত খুব একটা তোয়াক্কা করে বলে মনে করা যাচ্ছে না। সার্ক যার বড় প্রমাণ। ভারতই একদিন সার্ককে হয়ত শক্তিশালী করবে। কিন্তু আজ সার্কের বড় ভূমিকার প্রয়োজন ছিল।

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ ভারতের একটা বিশাল বাজার। নেপাল আর ভূটানও ওই রকম। আমরা তাদের সব চ্যানেল দেখি, পেয়াজ, রসুন, তেল, যানবাহন, চিকিৎসা সবই তাদের থেকে কিনি। আমরা কিন্তু বিক্রি করতে পারি কম। কি করব বড় ভাই যে।

এখন তারা যদি যুদ্ধেে জড়িয়ে পড়ে তাহলে আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হব আর্থিকভাবে। অন্যান্য ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। কারণ অস্ত্রের দিক দিয়ে কেউ কারো চেয়ে কম নয়। দুটোই পারমাণবিক অস্ত্রে সমৃদ্ধ দেশ।

পত্রিকার পাওয়া তথ্য মতে, ১৪ লাখ সেনাসদস্যের জন্য ২০১৮ সালে ভারত সামরিক খাতে বরাদ্দ করেছিল চার ট্রিলিয়ন রুপি (৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই পরিমাণ অর্থ দেশটির জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ।

অন্যদিকে পাকিস্তান তার ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ সেনাসদস্যের জন্য গত বছর ১ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি (১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাজেট বরাদ্দ করেছিল, যা দেশটির জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ইসলামাবাদ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি সামরিক সহায়তা পেয়েছে।

এসআইপিআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানের ১৪০ থেকে ১৫০টি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র আছে। অন্যদিকে ভারতের আছে ১৩০ থেকে ১৪০টি।

তাহলে মোট ২৮০ টি পারমাণবিক বোমা। এশিয়া ধ্বংস হতে আর কি কিছু লাগে? প্রচণ্ড ভয় জাগে।

আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ইইউ জাতিসংঘ সবাই নড়ে চড়ে বসেছে। যুদ্ধে যেন জড়িয়ে না পড়ে, সবাই আহবান করছে। মুসলিম দেশগুলো বরাবরই চুপচাপ আছে। এদের ঘুম একটু বেশি। জাগতে জাগতে সকাল ১০ টা বেজে যায়।

নরেন্দ্র মোদি যুদ্ধে জড়াবেন না বলে মনে করতে পারি। ২ মাস পরের নির্বাচনে হারানো জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধের দামামা বাজানোয় তার ইমেজ কিছুটা ফিরেছে। নাটক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। ব্যাস এতটুকু পর্যন্ত থামলেই হল। আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে কাশ্মীরের মানুষ স্বাধীনতা পাক, নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ট হওয়া থেকে মুক্তি পাক। সেটা খুবই জরুরি।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ