শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


হিফজ বিভাগের শিক্ষক; চৌদ্দ বছরে বেতন বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক>

বারো বছরে একযুগ। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, একযুগ পরপর পৃথিবীতে সাংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনসহ নানা রদবদল হয়ে থাকে। দৃষ্টান্তসরূপ তাঁরা বলেন, আপনি নিজের দিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন। দেখবেন, কী আশ্চর্য! আমি এতো বদলে গেছি? না চাইতেও কতো পরিবর্তন এসেছে আমার ভেতর!

আন্তর্জাতিক মহলের রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের দেশের মাথাপিছু আয় দিন দিন বাড়ছে। মানুষ দরিদ্রসীমা থেকে বের হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের জন্য অবশ্যই সুখকর এবং আনন্দের।

কিন্তু মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন বাড়ছে না কোন ক্রমেই। উল্টো মাসের পর মাস বাকি থাকছে। তবুও কুরআন ও হাদিসের খেদমতে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন দেশের আলেম সমাজ।

এক্ষেত্রে বেশ কষ্টের মধ্যে দিন পার করছেন হিফজ বিভাগের শিক্ষকরা। একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন।

কিতাব বিভাগের উস্তাদগণ মসজিদে খেতাবত বা ইমামতি করে কিছুটা হলেও সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারছেন। কিন্তু চব্বিশঘন্টা ডিউটি থাকার কারণে হিফজ বিভাগের শিক্ষকরা তা করতে পারছেন না।

ধামরাইয়ের একটি মাদরাসায় হিফজ বিভাগে পড়াতেন মাওলানা আবু তাহের। এবছর ফরিদাবাদ থেকে তাকমীল শেষ করছেন। একান্ত আলাপ কালে তিনি আমাদেরকে বললেন তার অভিজ্ঞতার কথা।

তিনি বলেন, আমি যখন হিফজ বিভাগে পড়াতাম, তখন বেতন ছিল মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকা থেকে সঞ্চয় ত দূরের কথা আম্মাকে প্রতিমাসে টাকা পাঠাতে পারতাম না। দুমাস পর পর দিতে হতো। বাড়িতে যাওয়ার পর ভাতিজি এসে সামান্য চকলেট বা এ জাতীয় কিছুর আবদার করতো। কখনো কখনো ভাতিজির ক্ষুদ্র এই চাওয়াও পূরণ করতে কষ্ট হতো।

মাওলানা আবু তাহের আরও বলেন,মাদরাসার পক্ষ থেকে দুবেলা খাবারের আয়োজন করা হতো। একবেলা নিজের পক্ষ থেকে কিনে ক্ষেতে হতো। সামান্য রুটি আর ডাল দিয়ে নাস্তা করলেও মাসে পনের শো বিল হতো। এছাড়া অন্যান্য খরচ তো আছেই। তাই কখনো মাস শেষে দেখতাম হাতে আছে পাঁচশো টাকা আবার কখনো তাও থাকতো না।

মাওলানা আবু তাহের এরপর কিছুটা আশ্চর্য্য ভঙ্গিতে বললেন, ‘আমার সাথে আরো একজন উস্তাদ ছিলেন। তিনি বয়সে আমার চেয়ে বড়। আজ চৌদ্দ বছর ধরে হিফজ বিভাগে পড়াচ্ছেন। অথচ বেতন সাড়ে সাত হাজার টাকা। তিনি যখন চাকরিতে জয়েন্ট করেন, তখন বেতন ছিলো চার হাজার টাকা। হিসেব করে দেখলাম সবমিলিয়ে চৌদ্দ বছরে উনার বেতন বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা।’

প্রতিবছর শীর্ষ রেজাল্ট ঘরে আনছেন দেশের কওমি ছাত্ররা। বারবার ফাস্ট হচ্ছেন সব দেশ ডিঙিয়ে। কিন্তু যাঁরা হাফেজ তৈরির কারিগর, তাঁরা কতটা সুখে আছেন? তাঁদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? এ বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। বিশিষ্টজনরা বলছেন, হিফজ বিভাগের শিক্ষকদের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ