মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


অফিস থেকে খরচের অতিরিক্ত বিল আদায় জায়েজ কি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। আমি যে অফিসে জব করছি, সেখানে যাতায়াত ভাড়া ও দুপুরে খাবারের জন্য কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বরাদ্দ নেই। যতো টাকা খুশি খেয়ে বা যাতায়াতে যতো টাকা ইচ্ছা খরচ করে বসকে এসে বললে তিনি আর কিছু বলেন না।

এখন আমার প্রশ্ন হলো, আমি কি প্রতিদিন কিছু কম খেয়ে বা কিছু কম ভাড়া খরচ করে বসের কাছে অংকটা বেশি দেখিয়ে কিছু টাকা রেখে দিতে পারবো? যেমনঃ আমি প্রতিদিন ১০০ টাকার খাবার খাই।

এখন ৫০ টাকা খেয়ে ৫০ টাকা রেখে দিতে পারবো? এখানে দুইটি উদাহরণ দিলাম। এমন অন্যান্য ক্ষেত্রেও, যেমন কিছু কেনার পর ভাউচারে কিছু টাকা বাড়িয়ে উঠালে, সে টাকা গ্রহণ কি জায়েয হবে?

উল্লেখ্য যে, অফিসের তো অনেক বড় ইনভেস্ট ও লাভের ব্যবসা। এমন কিছু টাকা নিলে অফিসের তেমন কোন ক্ষতি হবে না, কিন্তু আমার অনেক লাভ হবে। একটু দ্রুত জবাব দিলে খুবই উপকৃত হবো।

উত্তর : ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

প্রথমত দ্বীন মেনে চলার জন্য আপনি আমাদের কাছে প্রশ্ন করেছেন, এজন্য আপনার প্রতি শুকরিয়া জানাচ্ছি। আপনার এ সদিচ্ছাকে আল্লাহ কবুল করুন।

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় এভাবে খরচের অতিরিক্ত টাকা অফিস থেকে গ্রহণ করা জায়েয হবে না। বরং খাবার, ভাড়া বা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে খরচ যা হবে, শুধু ততো টাকাই গ্রহণ করা জায়েয হবে। তার চেয়ে বেশী নেওয়া জায়েয হবে না।

ইসলামে বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতাকে সর্বোচ্চে স্থান দেওয়া হয়েছে। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখনই কোনো খুতবা দিতেন, তিনি বলতেন,

لا إِيمَانَ لِمَنْ لا أَمَانَةَ لَهُ ، وَلا دِينَ لِمَنْ لا عَهْدَ لَهُ

“যার মাঝে আমানতদারিতা নেই তার ঈমানও নেই, যার ওয়াদা ঠিক নেই তার ধর্মও ঠিক নেই।” –মুসনাদে আহমাদ : ১২৩২৪

পবিত্র কুরআনের সূরা আল-মুমিনুন-এ আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ... وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ

“মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে... যারা তাদের আমানত ও ওয়াদা রক্ষায় যত্নবান।” – সূরা আল-মুমিনুন: ১,৪

তাই, আপনি সম্ভব হলে আপনার বসের সঙ্গে প্রতিদিনের খাবার ও যাতায়াত ভাড়া বাবদ টাকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঠিক করে নেবেন। তখন আপনি চাইলে এ থেকে প্রতিদিন কিছু কিছু করে রেখে দিতে পারবেন।

উদাহরণত, আপনি অফিসের সঙ্গে আলোচনা করে নিলেন যে, অফিস আপনাকে প্রতিদিন আপনার খাবার বাবদ একশত টাকা আর যাতায়াত ভাড়া বাবদ একশত টাকা দেবে। তখন আপনার জন্য এ থেকে সঞ্চয় করা বা খরচ কম করে বরাদ্দ পুরো টাকাটা নেওয়া জায়েয হবে।

তবে যদি অফিসের গাড়ীর জন্য প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণ তেলের মূল্য দেওয়া হয়, তাহলে তেল কম কিনে টাকা বাঁচানো অথবা ভাউচারে বেশি দেখিয়ে অফিস থেকে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন জায়েয হবে না।

এসকল ক্ষেত্রে কোন অফিস বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কত ইনভেস্ট আর তাদের ক্ষতি হবে কি হবে না, সেটা তেমন বিবেচ্য কোন বিষয় না। এখানে বিষয় একজন মুমিনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতার।

আপনি আমানতদারিতা রক্ষা করলে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ আপনার অল্প উপার্জনেই বরকত দেবেন এবং তিনি আপনাকে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা মুক্ত রাখবেন।

আয় বাড়াতে ও স্বচ্ছলতা লাভ করতে আপনাকে নিচের লিংকে থাকা আমলগুলো করার পরামর্শ দিচ্ছি।

আমরা আপনার জন্য দুআ করছি, রাব্বুল আলামিন আপনার হালাল উপার্জনে বরকত দান করুন এবং আপনার রিযিককে প্রশস্ত করে দিন। আমীন।

উত্তর দিয়েছেন - মুফতি মুহাম্মাদ ফয়জুল্লাহ

আরএম/


সম্পর্কিত খবর