শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


‘আইএসে যোগ দেওয়া শামিমাকে উদ্ধার করবে না ব্রিটেন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: সিরিয়ায় আইএস উৎখাতে আশ্রয় হারিয়ে শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী শামিমা বেগমকে লন্ডনে ফেরানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ নিরাপত্তামন্ত্রী।

‘প্রত্যেক কাজেরই একটা পরিণতি আছে’ মন্তব্য করে বেন ওয়ালেক নামের ওই মন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়া কাউকে উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে আমরা ব্রিটেনের কোনো মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারি না।’

‘যুক্তরাজ্য সরকার সিরিয়া ও ইরাকের বেশ কিছু অংশে ভ্রমণের বিরুদ্ধে’ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গি কার্যক্রমে যারাই অংশ নিয়েছে তারা যদি যুক্তরাজ্যে ফেরে, তবে পুলিশি তদন্ত হবে। তারা যাতে কোনও অপরাধ না ঘটায় সেজন্য এটা করা হবে। আমরা নিশ্চিত করবো যে, তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়।’

শামিমা বেগম তার দুই বান্ধবীর হাত ধরে দেশ ছাড়ে চার বছর আগে; তার বয়স তখন ১৫। ব্রিটেন ছেড়ে সিরিয়ায় পালিয়ে এসেছিল তারা। পরে শামিমা বিয়েও করে। স্বামী প্রভাবশালী আইএস নেতা; যে এখন  সিরিয়া ডেমোক্র্যাটিক বাহিনী (এসডিএফ)-এর হাতে বন্দি। দুই সন্তানের মৃত্যুর পর তৃতীয় সন্তানকে বাঁচাতে উনিশের তরুণী এখন দেশে ফিরতে মরিয়া।

টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে জানায়, ‘আমি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগের দুই সন্তানই অপুষ্টি ও অসুখে মারা গেছে। আমিও অসুস্থ। তৃতীয় সন্তানকে বাঁচাতেই ব্রিটেনে ফিরতে চাই।’

সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবির থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামিমা জানায়, সম্প্রতি শামিমার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে সিরিয়ার সেনা। তাদের দাবি, বছর ত্রিশের ডাচ যুবক ইয়াগো রিয়েদিক প্রভাবশালী আইএস নেতা।

বেথাল গ্রিন অ্যাকাডেমি স্কুলের মেধাবী ছাত্রী শামিমা দেশ ছাড়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সঙ্গে ছিল তার দুই সহপাঠী আমিরা আবেসি ও খাদিজা সুলতানা। লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর থেকে তারা তিন জনে উড়ে যায় তুরস্ক। সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় ঢোকে।

শামিমার কথায়, ‘বাড়িতে বলে গিয়েছিলাম, তিন বন্ধু মিলে ঘুরতে যাচ্ছি। সিরিয়া পৌঁছে আইএস-এ যোগ দিই। ২০-২৫ বছর বয়সের যে কোনও ইংরেজি ভাষা জানা আইএস যুবককে বিয়ে করার জন্য অনুমতি চাই। ১০ দিন পর এক ইয়াগোর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়ে যায়।’

ব্রিটেন থেকে আইএস ঘাঁটিতে গিয়ে সংসার পাতার অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে শামিমা বলে, পাল্টে যাওয়া জীবনে সে খুব খুশিই ছিল। অনেক মৃত্যু দেখেছে, তবে কখনও ভয় পায়নি। বলে, ‘ডাস্টবিনে পড়ে থাকত শত শত কাটা মাথা। কখনও শিউরে উঠিনি। আইএসে যোগ দেওয়ায় অনুশোচনাও নেই। যারা ইসলামের বিরোধী তাদের এভাবেই হত্যা করা হতো।’

‘আমার স্বামী আত্মসমর্পন করে সিরিয়ার সেনার হাতে। তার উপর খুব অত্যাচার চলছে। আমার দুই বান্ধবীই মৃত। একজনের প্রাণ গেছে বোমা বিস্ফোরণে। অপর জনের মৃত্যুর কারণ জানা নেই। আমি পালিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম’, বলেছে শামিমা।

তার প্রথম সন্তানের মৃত্যু হয় এক বছর বয়সে অপুষ্টিতে। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই মারা যায়। তৃতীয় সন্তানকে সুস্থভাবে জন্ম দেওয়াই এখন শামিমার লক্ষ্য।

শামিমা জানায়, ‘উত্তর সিরিয়ার এই শরণার্থী শিবিরে এখন ৩৯,০০০ মানুষের বাস। তাদের অনেকেই দেশে ফিরতে মরিয়া। এখানে ঠিকমতো খাবার নেই, বাঁচার পরিবেশও নেই। আইএস এখন অনেক ছোট হয়ে আসছে। সেই লড়াকু প্রবৃত্তি হারিয়েছে। জয়ের সম্ভাবনাও অনেক কম। আমি শুধু দেশে ফিরে সুস্থভাবে সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চাই।’

কেপি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ