বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


কওমি স্বীকৃতিতে হাসি; কান্না ইজতেমা মাঠে হামলায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হামিম আরিফ

২০১৮ সালের ইসলামি অঙ্গনে অন্যতম ঘটনা ছিল কওমি স্বীকৃতি। নানা জল্পনা কল্পনা শেষে কওমি স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাসের মাধ্যমে চূড়ান্ত মাত্রা পেয়েছে। এ নিয়ে দেশের উলামায়ে কেরামের মধ্যে এসেছে স্বস্তি।

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর অধীন ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়।

এর আগে ১৩ আগস্ট এ আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল গণভবনে কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়া হয়। ১৩ এপ্রিল এ সংক্রান্ত সরকারি গেজেট প্রকাশ হলেও নানা কারণে তা চূড়ান্ত মাত্রা পাওয়া নিয়ে নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। অনেকের অভিমত ছিল চার দলীয় জোট সরকারের মতো এবারও কেবল গেজেট পর্যন্তই থেমে থাকবে। চূড়ান্ত মাত্রা পাবে না।

তবে সব জল্পনা শেষে জাতীয় সংসদে পাসের মাধ্যমে এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা শেষ হয় উলামায়ে কেরামের মধ্যে।

জাতীয় সংসদে কওমি বিল পাসের পর প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনার উদ্যোগ নেয় আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। এ নিয়েও চলে নানা বিতর্ক। শেষতক ৪ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় শুকরানা মাহফিল।

তাবলীগে অস্থিরতা

বছরজুড়ে অন্যতম আলোচিত ইস্যু হয়ে ঘুরেছে তাবলিগ জামাত। ২০১৮’র শুরুতে দিল্লির নিজামুদ্দীনের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভী বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশে আসার প্রেক্ষিতে সূচনা হয় এ ঘটনার।

কিন্তু এর আগেই তাবলিগের আমির, শুরা ইস্যুতে শুরু হয় বিবাদ। যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিতর্কিত নানা মন্তব্য। এসব মন্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দসহ উলামায়ে কেরাম আবেদন করলেও যথাযথভাবে তা সম্পন্ন না হওয়ায় বিশ্ব ইজতেমায় তাকে অংশগ্রহণ  করতে না দেয়ার দাবি জানান বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম।

সরকারের তরফ থেকেও এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত না মেনে তিনি ইজতেমায় অংশ নেয়ার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে এলে শুরু হয় উলামায়ে কেরাম ও তাবলীগের সাথীদের প্রতিবাদ।

পরে তিনি ইজতেমায় অংশ না নিয়েই কাকরাইল থেকে বিদায় নেন। কিন্তু তিনি রুজু না করায় দ্বন্দ্ব মেটানো সম্ভব হয়নি। ফলে তাবলিগে দুটি গ্রুপ দৃশ্যমান হয়। আলমি শুরার পক্ষে উলামায়ে কেরাম ওয়াজাহাতি জোড় করেন সারাদেশে। আর মাওলানা সাদ অনুসারীরা করেন আঞ্চলিক ইজতেমা।

চলতি বছরের শেষদিকে বিশ্ব ইজতেমার আগে জোর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যখন টঙ্গীর মাঠ প্রস্তুতির কাজ করছিলেন তাবলীগের সাথী ও উলামায়ে কেরাম। তখনই ঘটে গেল এ ইস্যুর সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ঘটনা।

বছরের শেষ মাসের ১ম দিনে মাঠ দখলে নিতে মাওলানা সাদের অনুসারীরা ইজতেমার গেট ভেঙ্গে মাঠে প্রবেশ করে উলামায়ে কেরাম ও সাথীদের উপর হামলা চালায়। এতে একজন নিহত হয় এবং আহত হয় কয়েক হাজার।

আহতদের যাদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অনেকেই হয়েছেন পঙ্গু। চোখ হারিয়েছেন অনেক সাথী। আর এর ফলে জোড় ও বিশ্ব ইজতেমা পড়েছে হুমকির মুখে।

তাবলীগের এমন ভয়ঙ্কর হামলাকে উলামায়ে কেরাম নেক্কারজনক বলে উল্লেখ করেছেন। রক্তের এ দাগ কখনো ভোলার নয় বলেও মতামত দিয়েছেন তারা। শান্তিপূর্ণ এ জামাতে কলঙ্ক এটে দিয়েই যেন বিদায় হলো ২০১৮।

আরআর

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ