শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


তিন তালাক বিল নিয়ে ভারতের রাজ্যসভায় তুমুল হট্টগোল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তাওহীদ আদনান
ইন্ডিয়া থেকে

ভারত পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ তথা লোকসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করিয়ে নেওয়া বিতর্কিত তিন তালাক বিল আজ উত্থিত হয়েছে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ তথা রাজ্যসভায়৷ যথাসময়ে আলোচনা শুরু হলে পক্ষে-বিপক্ষে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে লড়াই৷ ফলে আগামী দুই জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে দেয়া হয় রাজ্যসভায়৷ হয় রাজ্যসভায় তুমুল হট্টগোল।

পূর্ব সিদ্ধান্ত মতে আজ সোমবার সকালে রাজ্যসভায় বিলটি উত্থিত হলে তুমুল লড়াই চলে পক্ষে বিপক্ষে৷ অবস্থা বেগতিক হয়ে দাঁড়ালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাথমিকভাবে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সাময়িক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়৷

দুপুর দুইটায় পুণরায় কার্যক্রম ও আলোচনা শুরু হলে পক্ষে-বিপক্ষে লড়াই হয়ে পড়ে আরো নিয়ন্ত্রণহীন৷ ফলে আগামী দুই জানুয়ারি কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয় রাজ্যসভায়৷

জানা যায়, তিন তালাক বিল নিয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর লোকসভায় আলোচনা উঠলে বিরোধী দলগুলোর প্রস্তাব ছিলো, আইনটি জয়েন্ট সিলেকশন কমিটিতে পাঠানো হোক। ওখানেই পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে৷ কিন্তু মোদী সরকার তাদের মত উপেক্ষা করেই বিলটি মৌখিক ভোটে পাশ করিয়ে ফেলে লোকসভায়৷

মূলত মোদী সরকার বিরোধী দলগুলোর প্রস্তাব উপেক্ষা করায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ও এআইএডিএমকে এই দুই দলের সাংসদরা ভোটাভুটির আগেই লোকসভা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন অধিবেশন থেকে৷ ফলে তাদের অনুপস্থিতিতেই লোকসভায় পাশ হয়ে যায় বিতর্কিত তিন তালাক বিল৷

গত ২৭ ডিসেম্বর লোকসভায় বিলটি পাশ হয়ে গেলে সরকার তা রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নিতে চাচ্ছিল বারংবার৷ ফলে অল্পকয়েকদিনের ব্যবধানে আজই তা রাজ্যসভায় তোলার ঘোষণা দেয়৷ আজ যথা সময়ে রাজ্যসভায় উত্থিত হওয়ার পরে এখন দুই তারিখ পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে তিন তালাক বিল৷

জানা গেছে, আজ রাজ্যসভায় বিতর্কিত এই তিন তালাক আইনের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব ছিল প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ অন্যান্যরা৷ এর পূর্বে কংগ্রেসের সকল পার্লামেন্ট মেম্বারকে রাজ্যসভায় জরুরি ভিত্তিতে উপস্থিত থাকতে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে৷

বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্যসভায় এই বিতর্কিত তিন তালাক বিলটির পক্ষে রায় নেয়া কষ্টসাধ্য হবে মোদী সরকারের৷ কেননা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই তাদের৷ উপরন্তু মোদী সরকারের সকল পার্লামেন্ট মেম্বাররাও এর পক্ষে নন৷ যদিও বিজেপি তার সকল পার্লামেন্ট মেম্বারকেই জরুরি ভিত্তিতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল পূর্বেই৷

উল্লেখ্য, বছরের শেষ দিন আর নতুন বছরের প্রথম দিনে সংসদে ছুটির দাবি তুলেছিলেন অনেক সাংসদ। কিন্তু রাজি হয়নি সরকার। সরকার তড়িঘড়ি করে লোকসভার পরে রাজ্যসভায়ও পাশ করিয়ে ফেলতে চাইছিল তিন তালাক বিল৷

গত ২৭ ডিসেম্বর তিন তালাকের বিলটি যখন সরকার লোকসভায় আনে, তখনই কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ অন্য বিরোধীরা যৌথ সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে সেটিকে পাঠানোর দাবি তোলে।

বিরোধীদের আপত্তি উপেক্ষা করেই বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করিয়ে নেয় সরকারপক্ষ। কিন্তু রাজ্যসভায় সরকার সংখ্যালঘু। বছরের শেষ দিনে নানা দলের সাংসদ কম থাকবেন, এমনটা ভেবেই আজ বিলটি উচ্চকক্ষে আনার কৌশল নিয়েছে সরকারপক্ষ।

কিন্তু বসে নেই বিরোধীরাও। কংগ্রেস নিজের দলসহ অন্যান্য সকল বিরোধী দলের সাংসদদের উপস্থিত থাকার জন্য হুইপ জারি করে। সকালে সব বিরোধী দলকে নিয়ে রাজ্যসভায় কৌশল তৈরী করতে বৈঠকেও বসেছিল তারা।

উল্লেখ থাকে যে, সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘বেআইনি’ বলার পরেই মূলত তিন তালাককে অপরাধ বলে বিল এনেছিল মোদী সরকার।

প্রথমবার লোকসভায় বিল পাশের পরে এই রাজ্যসভাতেই তা আটকে যায়। সরকার অধ্যাদেশ আনে। বিলে কিছু সংশোধন করে ফের গত ২৭ ডিসেম্বর লোকসভায় তা পাশ করায় দ্বিতীয়বার।

সংশোধিত বিলটি লোকসভায় দ্বিতীয়বার পাশ করিয়ে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আজই আবার রাজ্যসভায় আলোচনায় আনে সরকার৷ কোনো মতে পাশ করিয়ে ফেলতে চাচ্ছিস তারা তিন তালাক বিলটিকে৷ কিন্তু আজও রাজ্য সভায় তা সম্ভব হলো না আর৷ লড়াইয়ের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্র হয়ে যাওয়ায় এখন কার্যক্রম ২ জানুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে স্থগিত৷ সূত্র: নিউজ ১৮

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ