শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


৩ উপায়ে মুক্তি পেতে পারেন আলোচিত মুসলিম নারী ড. আফিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দি থাকা পাকিস্তানি ড. আফিয়া সিদ্দিকীর বোন ড. ফাওজিয়া সিদ্দিকী বলেছেন, পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমার বোন আফিয়া সিদ্দিকীকে মুক্তির বিনিময়ে কিছু চায়, এ জন্য তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

ফাওজিয়া সিদ্দিকী দাবি করেন, আমেরিকা থেকে এ বিষয়ে আমরা ইঙ্গিত পেয়েছি তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথিত দাবিগুলির বিষয়ে বিস্তারিত এখনই জানানো যাবে না। প্রথমে এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ড. ফয়সাল এক টুইটার বার্তায় বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী সেক্রেটারি অব স্টেট এলিস ওয়েলসের সঙ্গে সফরকালে  পাকিস্তানের অনুরোধে ড. আফিয়া সিদ্দিকী ও এলিস ওয়েলসের মামলাটি গ্রহণ করেছিলেন।

বার্তাটিতে আরো বলা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি ড. আফিয়া সিদ্দিকীর বোন,  ড. ফাওজিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে ইসলামাবাদে শিগগির দেখা করবেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের জুলাই মাসে রসায়নিক উপাদান ও রসায়নিক উপাদান তৈরির কাগজপত্র রাখার অপরাধে ড. আফিয়াকে নিউয়র্ক থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয় রাসায়নিক উপাদান ও নিউয়র্ক আক্রমণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ড. আফিয়া নিরাপত্তাকর্মীর রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে গুলি করে। এতে কেউ আহত বা নিহত না হলেও তাকে পেতে হয়েছে কঠিন শাস্তি।

আফিয়ার আইনজীবী দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, আফিয়ার অবস্থা ভালো ছিলো না তাই সে অবস্থায় রাইফেল থেকে গুলি করেছেন তিনি। শুধুমাত্র রাইফেল ছিনিয়ে নেয়ায় ড. আফিয়ার সম্পর্ক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে হতে পারে না।

আমেরিকার সামরিক আদালতে আফিয়া সিদ্দিকীকে দোষী সাব্যস্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। সরকারি কর্মকর্তারা হত্যা ও হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগে সাতটি অভিযোগ দায়ের করে তার বিরুদ্ধে।

কিভাবে আফিয়া সিদ্দিকীকে পাকিস্তানে আনা যাবে?

গত কয়েকদিন পূর্বে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে যুক্তরাষ্ট্রের একজন জেনারেল নিয়মিত আফিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ রক্ষা করে অাসছেন।

তার বরাতে জানা যায়, সর্বশেষ অক্টোবরের ৯ তারিখের সাক্ষাতে তিনি পাকিস্তানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইমরান খানকে চিঠি লিখেন। আফিয়া তাতে লিখেন তিনি পাকিস্তান আসতে চান।

ইমরান খানকে লেখা চিঠিতে তিনি আরো বলেন, ইমরান খান তার হিরোদের একজন। তিনি চান ইমরান খান বিশ্বমুসলিমদের খলিফা হোক।

আফিয়া সিদ্দিকীর বোন ফাওজিয়া সিদ্দিকী বিবিসির সাক্ষাতকারে বলেন, জুন মাসে পাকিস্তানের একজন কাউন্সিলর আমাকে জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে বারবার একটি কথাই কবলছে, তুমি তোমার ধর্ম ইসলাম ত্যাগ কর, সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে মুক্ত করে দেয়া হবে।

ফাওজিয়া সিদ্দিকী বিবিসিকে আরও বলেন, আফিয়া সিদ্দিকীকে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তাকে নামাজও পড়তে দিচ্ছে না। কোনো ধরনের ইবাদত সে করতে পারছে না।

ফাওজিয়া সিদ্দিকী একটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আফিয়া সিদ্দিকীকে ফিরিয়ে আনতে বা মুক্ত করতে তিনটি উপায় রয়েছে।

প্রথমত সর্বোপরি পাকিস্তানকে এ বৈশ্বিক চুক্তির অংশ হতে হবে, যার মাধ্যমে অপরাধীদের তাদের নিজের দেশে স্থানান্তর করে নিয়ে অাসা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু পাকিস্তান এই চুক্তির সদস্য নয় এখনও। পাকিস্তান এ বৈশ্বিক বন্দি বিনিময়ে অংশ নিয়ে যদি বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি ভেবে দেখে তাহলে আফিয়াকে দেশে আনতে পারবে।

ফাওজিয়া সিদ্দিকী বলেছেন, আফিয়াকে পাকিস্তানে আনার দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের যৌথ আলোচনা।

তিনি দাবি করে বলেন, আমেরিকা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে তাকে মুক্তির ব্যাপােরে। এখন পাকিস্তান প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই তার মুক্তির আলোচনা আগে বাড়বে বলে আশা করা যায়।

ফাওজিয়া সিদ্দিকী তৃতীয় অারেকটি উপায় বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থণার মাধ্যমেও মুক্তি পেতে পারেন আফিয়া সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির  বিষয়টি আলোচনায় আসলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি পাকিস্তান সরকার। এজন্য তাকে এখনো জালেমদের কারাগারে নির্যাতনের ভেতরে নিজের জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ড. আফিয়া সিদ্দিকী আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিখ্যাত একজন মুসলিম স্নায়ুবিজ্ঞানী।একজন আলোচিত নারী। তিনি করাচির সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে ১৯৭২ সালের ২ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন।

পিএইচডি ডিগ্রি ধারী এ নারীকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ২০০৩ সালে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আল কায়েদার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে পাকিস্তানের করাচির রাস্তা থেকে তার তিন সন্তানসহ গ্রেফতার করে।

পরে প্রচলিত আইনের আওতায় না এনে পাকিস্তানের কারাগারে গ্রেফতার না রেখেই তাকে আফগানিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে ৫ বছর বন্দি করে রাখা হয়। মার্কিন আদালত তাকে ৮৬ বছর কারাদন্ড দেয়। বন্দি অবস্থায় তার ওপর ব্যাপক অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ আছে।

জন্ম ও শিক্ষাগত যোগ্যতা

জন্ম সূত্রে ড. আফিয়া সিদ্দিকী পাকিস্তানের নাগরিক। শিক্ষা জীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রী ধারী (পিএইচডি)। স্বনামধন্য এই স্নায়ুবিজ্ঞানী শিক্ষা জীবনে অসামান্য মেধার পরিচয় দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নিউরোলজি বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এছাড়াও সম্মান সূচক ও অন্যান্য ডিগ্রীর ১৪০ টিরও বেশি সার্টিফিকেট তিনি অর্জন করেন।

তিনি হাফেজে কুরআন ও আলিমা। শিক্ষা লাভের পর তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সহকর্মীরা তাকে অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী হিসেবে পরিচয় দেন।

গ্রেফতার ও অপহরণ

আলোচিত এ নারীকে করাচির রাস্তা থেকে গ্রফতার করা হয়। পরে পাকিস্তানে কোনো বিচার কার্য না করেই সরাসরি আফগানিস্তানে নিয়ে গেলে পাকিস্তান সরকার ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়।

তাকে অপহরনেরও অভিযোগ ওঠে। সে থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বন্দি আছেন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে।

বিবিসি উর্দূ থেকে আবদুল্লাহ তামিমের অনুবাদ

বেলুচিস্তানের নারীদের বেড়ে ওঠা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ