বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


‘আমি রাজনীতি করি না, বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করবেন না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইশতিয়াক সিদ্দিকী
হাটহাজারী প্রতিনিধি

কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রেখে শর্তহীনভাবে ‘কওমি সনদ’ এর সরকারি স্বীকৃতি অর্জন করতে অগ্রণি ভূমিকায় রাখায় শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি ও সেবামূলক সংগঠন আল আমিন সংস্থা।

আজ ১৩ অক্টোবর শনিবার হাটহাজারী পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে এক বিশেষ শোকরিয়া ও দোয়া মাহফিলে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক, আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমাদ শফী এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।

কওমি সমালোচনার জবাব

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আল আমিন সংস্থার উপদেষ্টা মুফতী জসীম উদ্দীন।

সভায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা নূরুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে নানা ফিতনাও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভেদ বাড়ছে। হেফাজতকে নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে। কোন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, স্যোশাল মিডিয়া বা ব্যক্তি বিশেষের কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

আল্লামা শফী বলেন, কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি আর হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার আন্দোলন এক নয়। হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা রক্ষার সংগ্রামে একটি বৃহত্তম ধর্মীয় সংগঠন। আমরা এই ঈমানি আন্দোলনের নীতি ও আদর্শ সংরক্ষণে সদা প্রস্তুত রয়েছি।

হেফাজত কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য হেফাজতের নেই। কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়নি, দিবেও না। কিন্তু কেউ যাতে এর প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। হেফাজতের নীতি আদর্শের ওপর আমরা অটল রয়েছি। ১৩ দফা দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতের আন্দোলন চলবে ইনশাআল্লাহ।

লিখিত বক্তব্যে আমীরে হেফাজত আল্লামা আহমদ শফী আরো বলেন, সনদের স্বীকৃতি কারো করুণা নয়, এটা আমাদের অধিকার। নাগরিক হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রে দেওবন্দী ওলামাদের বহু অবদান রয়েছে। সনদের স্বীকৃতির বিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানানো মানে সরকারের কাছে কওমী উলামায়ে কেরামদেরকে বিক্রি করে দেয়া নয়।

তিনি আরো বলেন, আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে এম.এ-এর সমমান প্রদানের দাবিটি দীর্ঘ দিনের। হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক মুহাদ্দিস খতীবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ রহ.ও মাওলানা শামসুল হক ফরিদ পুরী রহ. সর্বপ্রথম এই দাবীটি উত্থাপন করেন। তার পরবর্তীতে দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম বহু আন্দোলন করেছেন।

যারা আমাকে আওয়ামী লীগ বলে তারা কমবখত (নির্বোধ): আল্লামা শফী

সম্প্রতি বেফাকসহ আঞ্চলিক বোর্ডসমূহের নেতৃস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বর্তমান সরকারের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে স্বীকৃতির দাবিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাস করাতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

আমি ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে এই সনদের স্বীকৃতি আদায় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্ঠা চালিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ সফলও হয়েছি। এই জন্যে আমরা আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।

আল্লামা আহমদ শফী আরো বলেন, সনদের স্বীকৃতির বিল সংসদে পাশ হওয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে স্যোশাল মিডিয়ায় বিশেষ কিছু লোক নানা অপপ্রচার, অশ্লীল বাক্য, কটুক্তি করেই চলেছে। অনেকে বলছে, আমি নাকি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি। এত সমালোচনা হলে, মানুষ হিসেবে কতটুকু সহ্য করতে পারি?

তাই গত ১ অক্টোবর হাটহাজারী মাদরাসায় চট্টগ্রাম জেলা বেফাক কর্তৃক আয়োজিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে স্পষ্ট বলেছিলাম, আমি আওয়ামী লীগ হয়ে যাইনি। যারা আমাকে আওয়ামী লীগ বলছেন তারা মিথ্যাবাদী।

তিনি বলেন, কওমী মাদরাসা হলো, জাতীয় মাদরাসা। দল মত নির্বিশেষে সকলের সাহায্য সহযোগিতায় এসব মাদরাসা পরিচালিত হয়। আমি প্রচলিত কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নই। তাই আমার বক্তব্যকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে দেখবেন না, ভুল ব্যাখ্যা করবেন না। আমাদের যারা ভালবাসে, যারা আমাদের কাছে আসে, তাদেরকে দ্বীনের কথা বলা, নসীহত করা এবং তাদের জন্য দোয়া করা আলেম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব।

মাওলানা ইবরাহিম খলীলের সঞ্চালনায় শোকরিয়া ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন ও পরিবেশমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আল্লামা শফী আওয়ামী লীগ হলে সর্বপ্রথম আমি জানতাম। কারণ আমি স্থানীয় সাংসদ। তিনি একজন সাধারণ মনের মানুষ। আমার পিতা-মাতাও হুজুরের ভক্ত।

তিনি আরো বলেন, স্বীকৃতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য নেই। তিনি নিজ দায়িত্ব থেকে এই স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি একজন ধার্মিক ও দ্বীন প্রিয় মানুষ। তার দিন শুরু হয় ধর্মকর্মের মাধ্যমে।

ব্যবহার করুন কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

অনুষ্ঠানে মাওলানা আবু তাহের নদভী, জসীমুদ্দীন নদভী, মাওলানা কুতুবুদ্দিন নানুপুরি, মাওলানা লোকমান, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা মীর ইদরীস, মীর কফিল উদ্দিন,এ্যা ডভোকেট শামীম, মুফতি আব্দুল আজীজ, মাওলানা শফিউল্লাহ, মুহাম্মাদ আহসান উল্লাহ, রহিম শাহ সহ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং আল আমিন সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আল আমিন সংস্থার পাশাপাশি জামিয়া হামিদিয়া ফতেপুর নাছেরুল ইসলাম মাদরাসা, দারুছছুফফা মাদরাসা, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ফাউন্ডেশন, নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড, হাটহাজারী উলামা পরিষদ, হাটহাজারী মাদরাসার দাওরার ছাত্রবৃন্দ, আল হারামাইন ফাউন্ডেশন, জাগৃতি ক্লাব, জাগরণ ক্লাব, মেখল আবাবীল ইসলামী সংগঠন, ফতেয়াবাদ আনজুমানে শানে সাহাবা, হাটহাজারী বাজার ব্যবাসায়ি সমিতি, কাচারি সড়ক বণিক সমিতি, কামালপাড়া যুব সংঘ, আরব নগর মাদরাসা, রাউজান ইসলামী নবজাগরণ সংগঠন, আলীপুর ইসলাম প্রচার সংস্থাসহ প্রায় ত্রিশের অধিক সংগঠন আমীরে হেফাজত আল্লামা আহমদ শফীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।

‘শাপলার ঘটনার সঙ্গে কওমি স্বীকৃতির সম্পর্ক নেই; এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন’

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ