শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


‘স্বীকৃতির উদ্দেশ্য লেনদেন নয়, শিক্ষাকে শক্তিশালী করাই লক্ষ্য’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাজী হামদুল্লাহ
হাটহাজারী থেকে

আজ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় বাংলাদেশ বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া চট্টগ্রাম জেলা শাখা কর্তৃক মেধা পুরস্কার এবং কওমী মাদরাসার ঐতিহ্য ও অবদান শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বেলা দুইটায় হাটহাজারী মাদরাসার মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেফাক ও আল হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমিরর আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার চৌধুরী, আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী, চট্টগ্রাম লোহাগড়া-সাতকানিয়ার এমপি ড. আবু রেজা নদবী, হাটহাজারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর কফিলউদ্দিন ও বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা শায়েখ আহমাদ, বেফাকের কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আলী আহমাদ, বেফাক কক্সবাজার জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হক, বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা জোবায়ের আহমাদ চৌধুরী, বেফাকের সাবেক কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতী মাহফুজুল হক, বেফাকের বর্তমান কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতী নুরুল আমিন, বেফাক চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ছলিমুল্লাহ, বেফাক চট্টগ্রাম জেলা শাখার সেক্রেটারি মুফতী হারুন ইযহার চৌধুরী, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন, বেফাক সদস্য মাওলানা আনাস মাদানী, হেফাজতনেতা মুফতী ফয়জুল্লাহ, হাটহাজারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা নুরুল ইসলাম সাদেকসহ বেফাকের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ এবং হাটহাজারী মাদরাসা ও চট্টগ্রামের অন্যান্য উলামায়ে কেরাম এবং জাতীয় বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ।

10-10 desktop

ছাড়, উপহার ও ফ্রি শিপিংয়ে বই কিনুন উৎসব চলাকালীন

বেফাক আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তাদের মধ্যে আল্লামা শায়েখ আহমাদ বলেন, কওমী মাদরাসা মানে দেওবন্দী মাদরাসা। আর দেওবন্দ মাদরাসা মূলত চারটি মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়।

দেওবন্দের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও হাটহাজারী মাদরাসাসহ অন্যান্য কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আজকে যারা পুরস্কার নিচ্ছে, তারা যেন এই চার মূলনীতি সামনে রেখেই এগিয়ে যায়। কারণ এগুলো এই দেশে, এই উপমহাদেশে, এমন কি এই পৃথিবীতে না থাকলে ইসলামই টিকে থাকবে না।

বেফাকের কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আলী আহমাদ বলেন, বেফাকের উদ্যোগে মেধাবীদের আজকে যে পুরুস্কার দেয়া হচ্ছে, তা চট্টগ্রামেই প্রথম শুরু হয়েছে।

তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, চট্টগ্রামের এই পুরস্কার বিতরণের ধারা বেফাক কেন্দ্রিক যেন সারাদেশেও চালু করে।

তিনি আরো বলেন, সরকার কওমী সনদের যে স্বীকৃতি দিয়েছে, এর মাধ্যমে কওমীর ছাত্ররা এগিয়ে যাবে। তারা এখন কলেজ-ভার্সিটির সাথে প্রতিযোগিতা করবে এবং ইনশাআল্লাহ তারা সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে।

বেফাক কক্সবাজার জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হক বলেন, আজকের এই পুরস্কার নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। একে মূল্যায়ন করে জাতির সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। জাতিকে দেখাতে হবে আমাদের কী কাজ।

বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা জোবায়ের আহমাদ চৌধুরী বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থীরা আল্লাহর প্রিয় বান্দার। এই শিক্ষার প্রথম শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ। নবী-রাসুলরাও এই ধারার শিক্ষক। কালের ধারাবাহিকতায় আজ সেই একই শিক্ষা আমরাও শিখছি।

এই অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। এটাও আল্লাহর সুন্নাহ। রাযিআল্লাহু আনহুম ওয়ারাযূ আনহু সে কথাই বলে।

হাটহাজারী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মীর কফিলউদ্দিন বলেন, একটি জাতির শিক্ষাকাঠামো যে স্তম্ভগুলোর উপর দাঁড়িয়ে থাকে, ধর্মীয় শিক্ষা তার একটি। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ বিকশিত হয়, সমাজ বিকশিত হয়। আর সেই ধর্মীয় শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

সরকার কর্তৃক কওমী সনদের স্বীকৃতি প্রদানে অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে কওমী শিক্ষার্থীরা জাতীয়ভাবে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পেলো। এর মাধ্যমে হতে পারে তারা নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার সর্বোচ্চস্তরে উত্তীর্ণ হতে পারবে।

কওমী মাদরাসার ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বেফাকের সাবেক কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতী মাহফুজুল হক বলেন, কওমী শিক্ষার মূল ঐতিহ্য হল দুনিয়াকে স্বাভাবিকভাবে টিকিয়ে রাখা। ইতিহাসের আলোকে দেখা যায়, কওমী মাদরাসার কারণেই উপমহাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য সার্বিক পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলক স্বাভাবিক আছে। কওমী মাদরাসা ছাড়া এটা কখনই হত না।

এসে গেল যাদুকরী মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার

বেফাকের বর্তমান কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতী নুরুল আমিন বলেন, সম্প্রতি কওমী মাদরাসার দাওরার সনদকে সরকারী স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতি কওমীর প্রতি অনুদান নয়, কওমীর জন্য খুব বড় কিছু পাওয়া নয়।

আমাদের পাওয়ানা তো আরো বেশি। আমাদের আমাদের চাহিদামত দেয়া কোন অনুদান নয়, বরং দায়িত্ব। এতদিন তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছিল।

চট্টগ্রাম লোহাগড়া-সাতকানিয়ার এমপি ড. আবু রেজা নদবী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের পার্লামেন্টে কওমী স্বীকৃতির আইন পাস হয়। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশ্বরেকর্ড। কারণ পৃথিবীর অন্যকোন দেশে এর আগে কোন কওমী মাদরাসার সনদকে পার্লামেন্টে তোলা হয়নি।

পার্লামেন্টের মাধ্যমে কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির আইন পাস হয়নি। বাংলাদেশেই এক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে।

বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসও তাঁর আলোচনায় কওমী-স্বীকৃতি প্রসংগ এনে বলেন, সম্প্রতি এই স্বীকৃতির আইন পাসের জন্য আমাদের মধ্যে কোন টাকা-পয়সার লেনদেন, কারও ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ এখানে নেই। কেবল আসমানী শিক্ষাকে শক্তিশালী করাই আমাদের লক্ষ।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার চৌধুরী বলেন, কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতির ফলে এখন কওমী মাদরাসারর সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো ভাল হবে। আমরা আরো কাছে আসতে পারবো। কওমী অনেকেই আমাদের ভার্সিটিতে আসতে পারবে।

এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। তিনিও বলেন, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে নিজেদের চিনিয়ে দেবার সুযোগ এসেছে। এবার কওমী-ছাত্ররা দেখা পারবে যে, তারাও কোন অংশে কম নয়।

অনুষ্ঠানের বিশেষ বক্তা হিসেবে বেফাকের সিনিয়র কেন্দ্রীয় সদস্য ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী কওমী মাদরাসার ইতিহাস-ঐতিহ্য অবদান নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করেন।

তিনি বলেন, কওমীর চারটি মূলনীতির মধ্যে এ'লায়ে কালিমাতুল্লাহ একটি। এটা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের সকল ক্ষেত্রে কালিমার ঝাণ্ডা ওড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর বক্তব্যের পরে শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

এ সময় চট্টগ্রাম জেলা থেকে বেফাক ও আল হাইয়াতুল উলয়া ২০১৭-২০১৮ইং শিক্ষাবর্ষের মেধা সিরিয়াল অর্জনকারী মুমতায (জিপিএ-৫ সমমান প্রাপ্ত) শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় নগদ টাকা ও গিফট প্যাক।

এছাড়া বেফাকের চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পক্ষ থেকেও সম্মিলিত মেধাতালিকায় স্থান অর্জনকারীদেরকে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে নগদ টাকা তুলে দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আল্লামা শাহ আহমদ শফী এবং বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার চৌধুরীর হাতে শিক্ষার্থীরা এসব পুরস্কার গ্রহণ করে।

পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে এ সময় ব্যাপক আনন্দ-উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যায়। উল্লেখ্য, কয়েক ক্যাটাগরিতে মোট ১৫০ শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।

চালু হয়েছে কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

পুরস্কার বিতরণী শেষে সকল শিক্ষার্থী ও মুসলিম মিল্লাতের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও মুনাজাত পরিচালনা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আমিরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকে যেই হাইয়াতুল উলয়ার পুরস্কার দেয়া হচ্ছে, সেই হাইয়াতুল উলয়া তথা কওমী মাদরাসার সরকারী স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে কয়েকদিন আগেই। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসের সাথে আমার লিখে দেয়া পদ্ধতিতেই আমাদের সনদ নিয়েছে।

একটি শব্দও তারা এদিক-ওদিক করেনি। এ জন্য আমরা তাঁর শুকরিয়া আদায় করি। এই স্বীকৃতির মূল্যায়ন তোমাদেরকে করতে হবে। এর মাধ্যমে তোমরা অনেক বড় ডিগ্রি পেয়েছো।

একসময় কওমী মাদরাসার ছাত্ররা চুপি চুপি সরকারী মাদরাসায় গিয়ে সনদের জন্য পরীক্ষা দিতো। এখন আর সেটার দরকার হবে না। ওরাই এখন এখানে এসে পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করবে ইনশাআল্লাহ।

সাথে সাথে এ কথাও বলে দিতে চাই যে, অনেকেই বলছে, আমি নাকি স্বীকৃতির জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। কথাটা সম্পর্ণ মিথ্যা। আমার ব্যাপারে না জেনেই তারা এমনটা বলছে।

কথাপ্রসঙ্গে তিনি আরো আশা করেন, যেন হাটহাজারী থেকে মদ-জুয়া, মাদক-সন্ত্রাস ইত্যাদি দূর হয়ে যায়। সামাজিক বদনামের হাত থেকে যেন হাটহাজারী রক্ষা পায়। সবশেষে দেশ-বিদেশের সকল মুসলমান, বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি এবং সকল শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।

এখন সরকারি মাদরাসার ছাত্ররা কওমিতে এসে পরীক্ষা দেবে: আল্লামা শফী

হাইআতুল উলইয়ার বৈঠক; প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা এ মাসেই

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ