বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


তারুণ্যের অহংকার ‘আবু তাহের মিছবাহ’, কিছু অজানা কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মনসূর হাবীব
তরুণ আলেম

বাংলাভাষার ওপর প্রবল আগ্রহ নিয়ে বেড়ে উঠছে এমন বর্তমান তরুণদের মধ্যে খুবই কম সংখ্যক ছেলে পাওয়া যাবে, যারা ‘আবু তাহের মিছবাহ’ নামটার সাথে পরিচিত না। অনেকের হৃদয়রাজ্যে তো তিনি ‘প্রতিবিম্ব’ হয়েই থাকেন সর্বদায়। আমার ক্ষেত্রে হয় কী! যখন তার কোন রচনা পড়ি, মনে হয় তিনি যেন আমার পাশেই বসে আছেন!

আরবিতে কিংবা তাদরিসের ক্ষেত্রে তার মাদানি নেসাব এবং তার কার্যফল তাকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে আহলে এলেমদের কাছে।

আর বাংলা ভাষায় তার গদ্যশৈলী তার ব্যক্তিত্বকে সর্বসাধারণের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে এবং এখনো রাখছে। তার বই মানেই ভিন্ন কিছু। নিজের কয়েকটা সফর বৃত্তান্ত লিখেছেন। সেখানেও রেখেছেন জ্ঞানের বিশাল সমুদ্র।

ইচ্ছে হলে সাঁতরানো যাবে এবং সেখান থেকে কিছু সলিল সেঁচে জ্ঞানের ভাণ্ডার ভরাট করা যাবে, ইনশা-আল্লাহ!

তাকে এখন শুধু লেখক হিসাবে নয় বরং একজন আল্লাহওয়ালা হিসাবেই শ্রদ্ধা-ভক্তি করি। তার জীবনচরিত কিছু অধ্যয়নের সুযোগ হয়েছে। যা এখন সংক্ষিপ্ত পরিসরে বন্ধুদের সমীপে পেষ করছি।

তিনি ছিলেন মোহাম্মদুল্লা হাফেজ্জী হুজুর এবং হযরত পাহাড়পুরী রহ-এর পরম স্নেহধন্য একজন। হাফেজ্জী হুজুর তাঁকে অনেক স্নেহ করতেন। বহুবার হুজুর তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার আবু তাহেরকে জামানার রাজি, গাজালি বানাইয়া দেন!’

একদিন আসরের পর মিছবাহ সাহেব মসজিদের এককোণে বসে লিখছিলেন। হাফেজ্জী হুজুর রহ. ধীরেধীরে তার কাছে এলেন। বেশকিছু মুহুর্ত তিনি তার স্নেহের আবু তাহের-এর হস্তলিপি দেখলেন। আবু তাহের মিছবাহ হুজুরের আগমনের বিষয় বুঝতে পারায় কিছুটা বিব্রতবোধ করলে হাফেজ্জী হুজুর তাকে বললেন, ‘ভাই! লিখখো, খুব লিখখো!’

শুকরিয়া জ্ঞাপন করে এখন মিছবাহ সাহেব নিজেই বলেন, ‘হয়তো সেই কথারই বরকত, আজ পর্যন্ত লিখছি। যখন প্রবাহ আসে তখন তো ঝর্ণাধারার মতোই লিখে যাই। আর যখন প্রবাহ থাকে না তখন হৃদয়টাকে নিংড়ে ফোঁটা ফোঁটা রস বের করে লিখি। তাতেই সুন্দর কিছু লেখা তৈরি হয়!’

মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ বলেন, একবার হাফেজ্জী হুজুর রহ. আমাকে তলব করলে আমি উৎকণ্ঠা নিয়ে হাজির হই। তখন তিনি বলেন, ‘তোমার ভেতর ‘কিবরের মরজ’ আছে! এসলাহ হওয়া দরকার।’ আর আমিও এসলাহের জন্য রাজি হয়ে গেলাম।

হুজুর তখন খুশী হয়ে এই বলে এসলাহ দিলেন, সাতদিন আসরের নামাজের পর মেহরাবের সামনে দাঁড়িয়ে এ’লান করতে হবে, ‘আমার মধ্যে কিবরের মরজ আছে। দোয়া চাই আল্লাহ যেন এই মরজ থেকে পাকসাফ করে দেন!’

এখন ব্যবসার হিসাব হবে সফটওয়ারে – বিস্তারিত জানুন

হাফেজ্জী হুজুরের আদেশে আদীব হুজুর তাই করলেন। আর এসবের বদৌলতে তিনি আজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। চিন্তা করুন, নামাযের পর হাজার হাজার ছাত্র-মানুষের সামনে এভাবে আমি আপনি বলতে পারবো!? আল্লাহ তাঁদের দিবেন না তো কাদের দিবেন!

আমার সর্বপ্রথম পড়া বইয়ের মধ্যে রয়েছে গুরুদত্ব সিং রচিত ‘তোমাকে ভালোবাসি হে নবি’ বইটি। যার অনুবাদ করেছেন প্রিয় আবু তাহের মিছবাহ। বইটা পড়ার পর যেমন রাসুল সা.-এর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে তেমন এই প্রিয় কেখকের প্রেমেও পড়তে দেরি হয়নি!

পরপর তার অনেকগুলো বই ক্রয় করি। তার বই পড়েই কিছুটা লিখনশৈলী অর্জন করি। তিনি আমার অদেখা একজন শিক্ষক! একজন রাহবর! একজন মুরুব্বীও!

এমন একজন মানুষকে সচক্ষে দেখার জন্য দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষা করছি, যিনি হাফেজ্জী হুজুরের সীনার নূর পেয়েছেন, হযরত পাহাড়পুরীর সোহবত পেয়েছেন, আলী নদবী রহ.-এর সান্নিধ্য পেয়েছেন! জানি না এই আশা পূর্ণ হবে কি না...

আরও পড়ুন

আমাদের সে বাড়ির নাম ছিলো ‘কিংস কোর্ট’: আল্লামা তাকি উসমানি
সব বিদ্বেষ বাদ দিয়ে আলেমদের সাথী হও: মাওলানা যুবায়ের
মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ’র ৩০ অমূল্য বাণী


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ