বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
খাদেম-ক্লিনার ও শিক্ষক নিয়োগ দেবে ‘গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট’ স্বাধীন দেশে অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠন থাকবে না: র‍্যাব মহাপরিচালক  মার্চে ৫৫২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৬৫, আহত ১২২৮ ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের তেজগাঁও আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুল আমান মাদরাসায় ভর্তি শুরু আগামীকাল   ইরানের হামলার জন্য নেতানিয়াহুই দায়ী: এরদোগান ঝালকাঠিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৪, ট্রাকচালক আটক ইসরায়েলে হামলার বিষয়ে যা বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ঘুমন্ত স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে পালালেন স্ত্রী ইরান-ই’সরায়েল যুদ্ধের পরিস্থিতির আলোকে প্রস্তুতি নিতে মন্ত্রীদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

এক নজরে এরদোগানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম

বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচিত নাম  রজব তাইয়্যেব এরদোগান। বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা তাকে বিশ্ব রাজনীতিতে মহানায়ক বানিয়েছে। বর্তমান যুগের সুলতান সুলেমান বা মুসলিম বিশ্বের অঘোষিত সেনাপতি তকমাকে তাই জনগণ তার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

অনেক আগেই তিনি তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের পর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখিয়েছেন।

সবশেষ গত ২৪ জুলাই তুরস্কে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী আবারো জাদুর ঝিলিক দেখালেন এরদোগান।

গতকালের তুর্কি নির্বাচনে প্রেসিডেন্টিয়াল পদে ৯৬ শতাংশ ভোটের ফলাফল অনুযায়ী এরদোগান একাই পেয়েছেন ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। মোট ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪০ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে এরদোগান পেয়েছেন ২ কোটি ৫৩ লাখ 88 হাজার। মুহাররেম পেয়েছেন ১ কোটি ৪8 লাখ ৮১ হাজার।

এদিকে একই সাথে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনেও বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে এরদাগানের দল জাস্টিস এন্ড ডেভলপমেন্ট (একে) পার্টি।

এর পূর্বে তিনি  ২৮ আগস্ট ২০১৪ তে তুরষ্কের ১২ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৪ মার্চ ২০০৩ সালের ২৮ আগস্ট থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০০১ সালে তিনি  এ.কে পার্টির (জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনেই দলটি জনসমর্থনের দিক দিয়ে এক নাম্বারে চলে আসে। দলটি ১৯৮৪ সালে প্রথমবার একক দল হিসেবে পরপর চারবার (২০০২, ২০০৭, ২০১১, ২০১৪) সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়।

রাষ্ট্রপতি হবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাসীন এই দলের সভাপতি ও প্রধান দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পূর্বে তিনি ১৯৯৪-১৯৯৮ পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তুরষ্কে তার উল্লেখযোগ্য অবদান

ইইউ’র সাথে বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকার চুক্তি তার অন্যতম সফলতা। নতুন ব্রিজ, বিমান বন্দরসহ বৃহৎ অবকাঠামো নির্মানের মাধ্যমে তলাবিহীন তুরস্ককে শক্তিশালী বাজারে পরিণত করেন তিনি।

তার সরকার বিগত দশ বছরের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তুর্কি লিরার (তুর্কি মুদ্রা) মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে তুরষ্কের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যায়।

এরদোগান অতীতের সেক্যুলার সরকার কর্তৃক আরোপিত হিজাবের উপর নিয়ন্ত্রন শিথিল করেন, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের হৃদয়ে দাগ কাটে।

তিনি অতীতে অটোম্যান শাসনাধীন দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিশ্বায়নে নেতৃস্থানীয় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তিকে মূললক্ষ্য রেখে বৈদেশিক নীতি (নব তুর্কীবাদ) গ্রহন করেন। এছাড়া বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ফলপ্রসুভাবে নিয়ন্ত্রণের কারণে বিশ্ব মহলে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন।

২০১৬ সালের যে ঘটনা তাকে মহানায়কের পর্যায়ে নিয়ে আসে তা হলো ১৫ জুলাই ২০১৬ সংঘটিত সামরিক অভুত্থানের ব্যর্থ প্রচেষ্টা। সেনাবাহিনীর একটি অংশ নিয়ে গঠিত ‘তুর্কি শান্তিপরিষদ’ নামক সংগঠন এই অভ্যুত্থান করার প্রচেষ্টা চালায়।

ওই দিন, নেতার আহ্বানে অগণিত মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে। ইস্তাম্বুলে চলন্ত ট্যাংকের সামনে শুয়ে পড়ে। জনগণের বাঁধার মুখে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়।তুরষ্কের আরও একটি নাটকীয় পরিবর্তন হল রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক গঠন।

সিরিয়া সংকট : সিরিয়ার চলমান সংকট নিয়ে রাশিয়া, সিরিয়া, তুরস্ক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে এরদোগান বিশেষ অবদান রাখেন। সংকট নিরসনে রাশিয়ার সাথে সম্মিলিত উদ্যোগ এবং সিরিয়ার উদ্বাস্তদের জন্য সীমান্তখুলে দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট এরদোগান আই এস দমনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ইতিমধ্যে ইরাকে তুর্কী সেনাবাহিনীও প্রেরণ করেন তিনি। তিনি বলেন আইএস জিহাদের নামে মুসলমানদের চরম ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে।

ফিলিস্তিন ইস্যু : এরদোগান সবসময় ফিলিস্তিনের ম্বাধীনতাকমী মুসলমানদের পক্ষে কাজ করেছেন এবং এখানো করছে। গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প কর্তৃক জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করার পর থেকে ট্রাম্প ও ইসরায়েলের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেনে এরদোগান।

রোহিঙ্গা ইস্যু:  মায়ানমারের নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশে সর্বদাই সুদৃঢ় অবস্থান ছিল এরদোগানের। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর মানবতাবিরোধী জঘন্য নির্যাতনের কঠোর সমালেচনা করেন তিনি। এছাড়া আন্তর্জাতিক মহলকে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার জন্য আহবান জানান তিনি।

কাশ্মির সমস্যাঃ পাকিস্তান সফরে এসে কাশ্মির নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এরদোগান। ভারত-পাকিস্তানকে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করতেও পরামর্শ দেন তিনি। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের শক্তিশালী নেতৃত্বের কারনে তুরস্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।

মুসলিম বিশ্ব ঐক্যের ডাক : তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে দু’দিনব্যাপী (ওআইসি) শীর্ষ  সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের ডাক দেন এরদোগান। এ সম্মেলনের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার বিদ্যমান তিক্ততা দূর করে সুসম্পর্কের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান তিনি। তার বক্তব্য ছিল- আমাদের ধর্ম ইসলাম, শিয়া বা সুন্নি নয়।

এছাড়া মুসলিম দেশগুলোর নিকট তুরস্ক পরিণত হয়েছে রোল মডেলে। আগামী দিনগুলোতে এরদোগানের এই বলিষ্ঠ ভূমিকা মুসলিম বিশ্বের শান্তি ও ঐক্য প্রক্রিয়াকে যে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে তার আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

আরও পড়ুন : ‘অভিনন্দন এরদোগান! তাগুতের বিরুদ্ধে আরও বেশি ভূমিকা রাখুন’

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ