বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


উচ্চশিক্ষা ভাবনা; কোথায় পড়বেন উলুমুল হাদিস?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এম ওমর ফারুক আজাদ

চলছে কওমি মাদরাসাসমুহের ভর্তি কার্যক্রম। তাকমিল সম্পন্ন করে অনেকে ভাবছেন উচ্চতর তথা তাখাসসুস এ পড়ার। দাওরায়ে হাদিসের পরে অনেকে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়ে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করছে নতুন নতুন বিভাগের। এসবের মধ্যে উচ্চতর উলুমুল হাদিস অন্যতম, বলা যায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে এই বিভাগ। এর কারণ ইসলামের মূল হচ্ছে দু’টি এক. কুরআন ও ২. হাদিস শরিফ।

যুগে যুগে ইসলামের শত্রুরা পবিত্র কুরআন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। কুরআনের প্রতি মানুষের সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির লক্ষে আধাজল খেয়ে নেমেছে তার ভুল বের করার পেছনে।

কুরআনের অনুকরণে সাহিত্য রচনা করে তার সাহিত্যিকতার উপরও চালিয়েছে অপপ্রয়াস। কিন্তু কোন যুগে হালে পানি পায়নি তাদের অপকোশেষ। কারণ কুরআন মাজিদের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহর ঘোষণা আছে তাকে রক্ষা করার।

ইসলামের দুষমনরা কুরআনের পেছনে পরে ব্যর্থ হয়ে লেগেছে হাদিসের পেছনে। কারণ সংক্ষেপ কুরআনের বিশদ ব্যাখ্যা রাসুলে আরাবি সা. এর অগণিত হাদিস শরিফ। তাই হাদিস শরিফকে অসার ও ভুল প্রমাণিত করতে ইহুদি খৃস্টান পন্ডিতরা উতসর্গ পর্যন্ত করে দিয়েছে তাদের জীবনকে।

তারা হাদিসের বিষয় নিয়ে যে বড় বড় কিতাবাদি রচনা করেছে তা খোদ অনেক মুসলিম মনিষীর পক্ষেও সম্ভব নয়। তাদের এই মেহনত এর অন্যতম টার্গেট ছিলো রিজাল তথা হাদিসের পেছনের বর্ণনাকারী ব্যক্তিগণ।

কারণ হাজারো হাদিসকে ভুল ও অসার প্রমাণের চেয়ে একজন রাবি তথা বর্ণনাকারীর জীবনে কালিমা লেপন করা বিরাট সাফল্যের। একজন রাবির চরিত্রে কালিমা লেপন করতে পারলে তার থেকে বর্ণনাকৃত হাজার হাজার হাদিস অনায়াসে অসার অথবা দুর্বল বলে সাব্যস্ত হয়ে যায়। এ ব্যাপারে তারা বিশাল বিশাল আসমাউর রিজালও রচনা করেছে, যা চমকে দেবে আলেমদেরও।

পরিভাষায় এসব পন্ডিতদের বলা হয় আরিতে মুশতাশরিকিন, ইংলিশে ওরিয়েন্টালিস্ট আর বাংলায় প্রাচ্যবিদ। তাদের প্রচেষ্টার ফসলই যুগে যুগে মুনকিরে হাদিস তথা হাদিস অস্বীকারকারী ও আজকের আহলে হাদিস।

এ যুগে এসে ওরিয়েন্টালিস্টদের ফসল আহলে হাদিস ফেতনা সহিহ হাদিসের নামে শুরু করেছে নতুন ফেতনা। কুরআন হাদিস থেকে ফিকহ উৎসারিত হলেও প্রতিটি মাসয়ালার পেছনে যে হাদিস এর কষ্ট সাধনা সে হাদিসগুলো আমাদের চর্চা না থাকার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তারা ফিকহে ইসলামি, ফকিহ ও মুজতাহিদ ইমামগণের উপর চালাচ্ছে প্রপাগান্ডা ও হিংসার তীর।

তাই আমাদের ফিকহের বিশাল সম্ভার এর বিশদ ব্যাখ্যা জানতে বর্তমান সময়ে উচ্চতর হাদিসের জ্ঞাণলাভ যুগের প্রচণ্ড চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে এই বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীদের আলাদা টান পরিলক্ষিত হচ্ছে।

কিন্তু হাদিসের উচ্চ শিক্ষার জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যোগ্য শিক্ষক, হাদিসের রচনাবলীর বিশাল সংগ্রহ ও প্রয়োজনিয় উপাদান।

অল্প সংখ্যক জামেয়ায় এই বিভাগ চালু হলেও সার্বিক সকল উপযুক্ততার বিচারে মাত্র কয়েকটা প্রতিষ্ঠানে আছে এমন ব্যবস্থা। তার মধ্যে সর্ব উতকৃষ্ট না বললেও অন্যতম বলা যায় চট্টগ্রামের নানুপুর জামিয়া ওবায়দিয়া এর উলুমুল হাদিস বিভাগ।

কারণ এ জামিয়ায় যিনি এই বিভাগটি পরিচালনা করছেন তিনি হচ্ছে শায়খুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এর জামাতা ও শাহ জমির উদ্দীন নানুপুরী (নানুপুরী পীর সাহেব) এর ছেলে মুফতি কুতুব উদ্দীন নানুপুরী।

একজন উলুমুল হাদিস বিভাগীয় প্রধানের ফিকহ বিষয়েও উচ্চ শিক্ষা থাকা অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেই বিচারে ঢাকার বসুন্ধরা থেকে দুই বছর ইফতা ও তিন বছর উলুমুল হাদিস সম্পন্নকারী মুফতি কুতুব উদ্দীন যোগ্যতাসম্পন্ন।

তাছাড়া তিনি দীর্ঘ অর্ধ যুগ ধরে হাদিসের খিদমত করে আসছেন। হাদিস ও গবেষণা বিষয়ে তার রয়েছে একাধিক রচনা। তন্মধ্যে ১. ابو حنيفة امام في الحديث ২. المنتخب من ادلة الحناف (যা অনেক কওমি মাদরাসায় কানজুদ দাকায়েক থেকে উলুমুল হাদিস পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক)।

২. সমাজ সংস্কারের উপায়, ৩. ইসলামের সাথে প্রকাশ্য বিদ্রোহ; কাদিয়ানি মতবাদ (প্রকাশিতব্য) ইত্যাদি।

এ জামিয়ায় উলুমুল হাদিস এর শিক্ষার্থীদের রয়েছে সুনিবিড় তত্ত্বাবধান, মনোরম পরিবেশ, কম্পিউটারাইজড আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। দ্বীতিয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে কম্পিউটার শিক্ষাদান ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে দুর্লভ কিতাবের অধ্যায়ন এর সুযোগ রয়েছে।

দুই বছরের কোর্স শেষ করে কেউ চাইলে অতিরিক্ত গবেষণার জন্য আরো এক বছর স্পেশাল স্টাডি করতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত গবেষণার জন্য রয়েছে মিশর, সৌদি আরব, আফ্রিকা, বৈরুত, রাশিয়া, বুখারা, বাগদাদ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এক কোটির অধিক মূল্যের হাদিস, উসুলুল হাদিস, রিজাল, রেওয়ায়াত এর বিশাল কিতাবের সংগ্রহ।

ক্লাসের পাশাপাশি ছাত্রদের দেয়া হয় বিষয়ভিত্তিক গবেষণা কর্ম বা অ্যাসাইনম্যান্ট। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট বিষয়ের আলোকে সেমিনার হয়ে থাকে। সেমিনারে আলোচ্য বক্তব্য ও অ্যাসাইনম্যান্টগুলো নিয়ে রচিত হয় বই আকারে গবেষণাপত্র।

এ পর্যন্ত যে গবেষণাপত্রগুলো রচিত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ১. আহকামে ইসলাম, ২. তাকলিদে মাজাহেব, ৩. মাকামে সাহাবা, ৪. নামাজে নাভির নিচে হাত বাধা সুন্নত, ৫. তারাবিহ বিশ রাকাতই সুন্নত এর কম নয়, ৬. ইবাদাতের রাত শব' ই বরাত, ৭. কুরআন হাদিসের আলোকে কুরবানির বিধান, ৮. আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের পরিচয়।

যেভাবে ভর্তি হবেন

দাওরায়ে হাদিস উত্তীর্ণদের অবশই জায়্যিদ জিদ্দান হতে হবে। ভর্তি কার্যক্রম শুরু ৬ শাওয়াল।
আসন সংখ্যাঃ ১৫ (বিশেষ বিবেচনায় অতিরিক্ত ৫আসন)।

ভর্তি পরীক্ষার বিষয়- বুখারী ১ম ও ২য়, উসুলুস শাশী, নূরুল আনওয়ার, ইনশা, নুখবাতুল ফিকর, হেদায়া ৩য়।

পরীক্ষার নম্বর বিন্যাস: ২০০নম্বরের পরিক্ষায় লিখিত ১০০ ও মৌখিক ১০০।
লিখিত পরিক্ষায় ৬৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।

কওমি মাদরাসার নতুন শিক্ষাবর্ষ: কোথায় কখন ভর্তি

কোন মাদরাসায় ভর্তি হবেন?

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ