শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


রমজানে নারীদের জন্য বিশেষ কিছু আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী আজিজুল হক ইয়াকুবী
আলেম ও খতিব

সিয়াম সাধনার মাস রমজান। আর রমজান আরবী "রমজ" ধাতু থেকে এর উৎপত্তি ৷ অর্থ হল দহন করা,ঝলছে দেয়া,জ্বালিয়ে দেয়া ৷রমজানে দীর্ঘ এক মাস সিয়াম বা রোজা পালনের মাধ্যমে সাধকের সকল পাপ পঙ্কিলতা পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷ রুহের কালি দূর হয় ৷ মোমিনের হৃদয়ে ঔজ্জল্য আসে ৷ তাই এ মাসটির নাম রমজান রাখা হয়েছে ৷

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন, রমজান নাম রাখার কারণ হল - তা গুনাহকে জ্বালিয়ে দেয় ৷ (কানযুল উম্মাল)

মাহে রমজানে আল্লাহ তায়ালার মহান হুকুম হল সিয়াম পালন করা ৷ আরবি সাওম শব্দ থেকে সিয়াম শব্দের উৎপত্তি। অর্থ হল বিরত থাকা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদেক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে কোন ধরনের পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বা রোজা বলা হয়।

এ সিয়াম বা রোজার বিধান আরোপ করে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেছেন ; হে ইমানদারগন, তোমাদের উপর সিয়ামকে ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার। (সূরা বাকারা ; ১৮৩)

অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, সিয়াম পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বান্দার মধ্যে তাক্বওয়া সৃষ্টি করা। আর তাক্বওয়া হল মনে আল্লাহর ভয় রেখে অথবা সর্বদা তার স্বরন জাগ্রত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি্র উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সা. এর প্রদর্শিত পথে জীবন পরিচালিত করা। মোট কথা জীবনের কোন ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর হুকুম যেন লঙ্ঘিত না হয় এরকম সতর্কতার সাথে চলার নামই হলো তাক্বওয়া।

হযরত ওমর রা. একবার হযরত উবাই ইবনে কাব রা. কে তাক্বওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আপনি কাটাঘেরা পথ অতিক্রম করলে কী করেন ? ওমর রা. বললেন, আমি খুব সতর্কতার সহিত সে পথ অতিক্রম করে চলি। উবাই ইবনে কাব রা. বললেন, এটাকেই বলা হয় তাক্বওয়া। (কুরতুবী)

নারী-পুরুষ, ব্যাক্তি, পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে অপরাধ মুক্ত করতে হলে তাক্বওয়ার বিকল্প নাই। লোক চক্ষুর অন্তরালে পুলিশ প্রহারা যেখানে অনুপস্থিত, রাষ্টীয় গোয়েন্দা বাহিনী যেখানে অপারগ, স্যাটেলাইটের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেখানে অসহায়, সেখানে তাক্বওয়া বা খোদাভীতিই একজন মানুষকে অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারে।

আর এই তাক্বওয়া অর্জনের সুবর্ন সুযোগ হল রমজান মাস। নারী-পুরুষ উভয়ে এ ক্ষেত্রে সমান অধিকার রাখে। পবত্র কালামে পাকে আল্লাহ তায়ালা বলেন, মোমিন পুরুষ হউক অথবা নারী হউক এর মধ্যে যে কেউ নেক আমল করবে নিশ্চিত আমি তাকে পরিত্রময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার দান করব। (সূরা নাহলঃ ৯৭)

এই প্রবন্ধে, রমজানে নারীরা কিভাবে কাটাবেন এই বিষয় কিছু আলোকপাত করতে চাই। নারীরা নিম্নের আমলগুলো বেশি পরিমানে করতে পারেন :

১ . অধিক পরিমানে কালিমা পাঠ করা ৷
২ . অধিক পরিমানে এস্তেগফার করা ৷
৩ . আল্লাহর কাছে জান্নাত কামনা করা ৷
৪ . জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া ৷
৫ . অধিক পরিমানে কুরআন তিলাওয়াত করা ৷
৬ . আল্লাহ তায়ালার যিকির করা ও তসবিহ তাহলিল পাঠ করা ৷
৭ . রাসূল সা. এর প্রতি প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করা ৷
৮ . বাসা-বাড়ীতে কুরআন তেলাওতের পাশাপাশি তালিম করা, ইসলামি বই পাঠ করা।
৯ . ফরজ নামাজের পাশাপাশি সালাতুল তারাবীহ সালাতুত তসবিহ আদায় করা।
১০. যথা সম্ভব তাহাজ্জুদ নামায পড়া৷
১১. সব ধরনের অন্যায়- অশ্লীল কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা। বিশেষত গীবত-পরনিন্দা করা, টিলিভিশন দেখা থেকে বিরত থাকা।
১২. সকল নেক আমলের সাথে যুক্ত থাকা।

এ আমলগুলোর মাধ্যমে পবিত্র মাহে রমজানের ফয়েজ ও বরকত লাভে ধন্য হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে তাঁর একনিষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়া সহজ হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক: প্রিন্সিপাল :  মাদ্রাসায়ে মুহাম্মাদ সা. -ঢাকা
খতীব: মসজিদুল আকসা হাজী মসজিদ, গোবিন্দপুর,যাত্রাবাড়ী-ঢাকা ৷

আরও পড়ুন : রমজানে রোগীদের রোজা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ