বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


দুবাই প্রবাসীদের ইফতার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী
দুবাই থেকে

আসরের পর থেকে দুবাইয়ে শুরু হয় ইফতারির আয়োজন।আরব দেশগুলোতে আসর নামাজ একটু আগেই আদায় করা হয়। বাহারি রকমের ফলমূল, বাঙালির অতিপ্রিয় খাবার মুড়িভর্তা, কাঁচা ছোলার ভর্তা, আরবীয় নানারকমের খোরমা-খেজুর ও জব আর গোশতের তৈরি হারিস দিয়ে সাজানো হয় ইফতারি।

এমনিতেও পৃথিবীর বিখ্যাত সব খাবারের আয়োজন আছে দুবাইতে। এখানে আমদানিকৃত ফলমূলের তো কোনো তুলনাই হয় না। পৃথিবীর যেখানেই ভালো ফল উৎপাদন হয় এর একটা অংশ দুবাইতে এসে যায় প্রাকৃতিক নিয়মে।

ইরানের তরতাজা তরমুজ, ওমানি শাম্মাম, পাকিস্তানি চুষা আম, চায়না আলুসা, আফগানি গোলাপি রংয়ের আলুবোখারা, এমেরিকান ফল চেরি, অস্ট্রেলিয়া কাশ্মীর বাংলাদেশসহ নানা দেশে উৎপাদিত ফলের উৎকৃষ্ট অংশের সমাহার ঘটে এ শহরে।

সাধারণত প্রবাসীরা আট দশজন মিলে ইফতারের আয়োজন করে থাকে। তাই ইফতারের আয়োজন হয় তুলনামূলক বড় এবং তাতে বিরাজ করে এক ধরনের উৎসবের আমেজ।

রামাযান ছাড়া এতটুকু ফুরসতই-বা পাওয়া যায় কোথায়। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে হয়। তপ্তরোদ আর ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও যেন তাদের হার মানাতে পারে না কিছুতেই।

যতদূর দেখেছি বাঙালিরাই সবচেয়ে কঠিন এবং কষ্টের কাজগুলো করে। এমনকি অনেক শিক্ষিত যুবকও দেখা যায় দৈহিক শ্রমের কাজ করতে। অথচ সে তার মেধা ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে ভালো কোন পজিশিনে চাকরি করতে পারত।

মূল সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের সিস্টেমের। প্রথমত- আমাদের দেশে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলেও নিবন্ধন করার পর বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না।

দ্বিতীয়ত- পেটের দায়ে যখন কেউ কোন ভিসা ম্যানেজ করে, তার কর্ম কী হবে, বেতন কত হবে? এ নিয়েও এই মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে দেখা যায় না। অথচ পাশের দেশ ভারতের কেউ যখন মধ্যপ্রাচ্যে বা অন্য কোন দেশে কোন চাকরি ভিসা নিয়ে যেতে চায়, ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার কাজের ধরণ এবং সেলারি ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখে। যাতে প্রবাসে গিয়ে প্রতারণা কিংবা কোন বিপদের সম্মুখীন না হতে হয়।

আমাদের দুর্ভাগ্যের কথা আর কী বলব? দুবাইসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতে চাকরির উদ্দেশ্যে অন্যসব দেশের লোকেরা আসতে পারলেও আজ ছয় বৎসর যাবৎ বাংলাদেশিদের জন্য এ দুয়ার বন্ধ। সহসা এই বন্ধ দুয়ার খুলবে বলে মনে হয় না।

যাক, রোজা উপলক্ষে ডিউটি থাকে একটু হালকা। ছয় ঘন্টা ডিউটি করলেই হয় এ মাসে। তাই ইফতারি আয়োজনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে প্রবাসীরা। ইফতারির দস্তরখানে পরস্পরকে আহ্বান করা এবং ইফতারি বন্টনের আগ্রহও পরিলক্ষিত হয় তাদের মাঝে।

কিন্তু এতকিছুর পরেও তাদের চলাফেরায় পরিলক্ষিত হয় এক ধরনের ছটফটানি। কেননা তারা ইফতারের আগে ও পরে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেন পরিবারের, ফোনে কথা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।

বর্তমানে ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিবারের লোকদের দেখা সম্ভব হলেও তাদের ইফতারের দস্তরখানে শরীক করা বা নিজের হাতে বানানো ইফতার দেয়া তো কোনভাবেই সম্ভব নয়। অতঃপর অপূর্ণতা ও অবহেলায় থেতলে গেলে যা হয়। ডুকরে কেঁদে ওঠার সময় হয়তো এটা নয়। তবে, চোখের কোনে জমে ওঠা পানি থেকে সবকিছুই আন্দাজ করা যায় সহজে।

আসলে প্রবাস জীবন এমন একটি কাটা যা ক্ষতস্থানেই বারবার গুতো দেয়, এমন একটি ব্যথা যা অন্য কোনো ব্যথা অনুভব করতে দেয় না। মা বাবা ছেলে সন্তান পরিবার-পরিজন সবকিছু রেখে দূরে বহুদূরে কতটা আরামে থাকা যায় তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝে।

যারা এতটা কষ্ট স্বীকার করে দেশের অর্থনীতি রাখেন তাদের জন্য আর কিছু করতে পারি আর না পারি চলুন একটু দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা তাদের এবং তাদের পরিবারের সকল সদস্যকে হেফাজত করুন। আমিন!

লেখক: তরুণ আলেম, রাজনীতিক। শিক্ষক, জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ, ঢাকা। 

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ