শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


সিয়াম ও বিজ্ঞান-১

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম

পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে, যেমনি করে ফরজ করে দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা (এর মাধ্যমে আল্লাহকে) ভয় করতে পার।’

মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের উপর রোজা বাধ্যতামূলক করে খোদার ভয় তৈরি করার এ ঘোষণাটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ এবং বৈজ্ঞানিক। দেহ ও মনের পরিশুদ্ধতার মাধ্যম হচ্ছে রোজা। উপবাস থেকে সতত আল্লাহর জিকির এর কাজটি রমজানে খুব সহজ।

মানব দেহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এমন এক বিস্ময়কর সৃ্ষ্ঠি যাকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার অন্ত নেই। দেহের কোষ, জীবানু, হাজারো রকম রোগের প্রবেশ, রোগকে বিনাশ, ডিএনএ সহ নানা বিষয়ের গবেষণা কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।

সিয়াম সাধনার আলোচনা অনেক বড় একাডেমিক, এর পর এটিকে সাইন্স এর ফ্রেমে ফেলে আলোচনায় গেলে কয়েক পর্ব ব্যাপী লেখা লাগবে, কিন্তু কিনারা করা যাবে না। তখন মনে হবে আবার লেখা শুরু করি।

দেহের উপবাস, মনের উপাসনার সমন্বিত যে সাধনা তা রমজানের সিয়ামে কিভাবে পালন করতে হবে, আল্লাহর রাসুল সা. দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।

দেহের কারিগর দেহটাকে খুব ভালবাসেন। তাই দেহকে টানা কিছুদিন /এক মাস উপবাসে রাখার নিয়ম বাধ্যতামূলক করেছেন সব ধর্মের মানুষের জন্য।

দেহটা অসুস্থ হোক তা তিনি চান না। মোটা দাগের এ সোজা কথাটা না মেনে কারো উপায় নেই।রোজা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যে অনেক উপকারী তা ডাক্তার/বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণায় উঠে এসেছে। এসব সম্মানিত ডাক্তার/বিজ্ঞানীদের গবেষণা উত্তর মন্তব্য/বক্তব্য নিম্নরুপভাবে তাদের ব্লগ সাইটে কালেক্ট করেছেন-

১) প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রোজা শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্যনিয়ন্ত্রণ অপেক্ষায় অধিক কার্যকর।

২) পাকিস্তানের প্রখ্যাত প্রবীণ চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ হোসেন জানান, যারা নিয়মিত রোজা পালনে অভ্যস্ত সাধারণত তারা বাতরোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে কম আক্রান্ত হন।

৩) পাশ্চাত্যের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. ক্লাইভ বলেন, সিয়াম সাধনার বিধান স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত । সেহেতু ভারত, জাপান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ নাইজেরিয়াতে অন্যসব এলাকার তুলনায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় রোগ ব্যাধি অনেক কম দেখা যায়।

৪) চিকিৎসা বিজ্ঞানের পথিকৃত হিসেবে খ্যাত ডা. হিপেপাক্রেটিস অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন যে, রোগাক্রান্ত দেহকে যতই পুষ্ট করার চেষ্টা করা হোক, তাতে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকবে।

৫) চিন্তাবিদ ডক্টর ডিউই, উপবাস থাকা প্রসঙ্গে বলছেন, রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলি হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রোগী মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।

৬) রাশিয়ার অধ্যাপক ডিএন নাকিটন বলেছেন, তিনটি নিয়ম পালন করলে শরীরের বিষাক্ত দ্রব্যাদি বের হয়ে যাবে এবং বার্ধক্য থামিয়ে দেয়, এগুলো হলো অধিক পরিশ্রম, অধিক ব্যায়াম, এবং মাসে কমপক্ষে একদিন উপবাস।

৭) প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের কখনো কখনো তিন সপ্তাহ ধরে উপবাস থাকতে নির্দেশ দিতেন।

৮) ডা. অ্যালেক্স হেইগ বলেন, রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়।

৯) চিকিৎসকরা আরো বলেন, রোজার কারণে সাইকোসোমাটিক জাতীয় ব্যাধিসমূহ রোজা রাখার কারণে তুলনামূলকভাবে কম হয়।

১০) রোজা রাখার কারণে মানবদেহে বিপাক ক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ রোজা পালনকালে মানবদেহে স্ট্রেস হরমোন করটিসোলের নিঃসরণ হ্রাস পায়।

অপরদিকে রোজা রাখার কারণে কর্ম উদ্দীপনা ও মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়। এর অন্যতম কারণ হলো রোজা রাখলে মস্তিষ্কের মেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়।

রোজা এদিক থেকে সুস্থ দেহ ও মনের জন্য সহায়ক। এ কারণে একজন খ্যাতনামা চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলছেন। রোজা সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক হলেও শুধু রোজা রাখলে যে স্বাস্থ্য সুস্থ থাকবে তা নয়। রোজায় স্বাস্থ্যকে নীরোগ রাখতে হলে ইফতার, রাতের খাবার ও সেহরি স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।

রোজা পালন শেষে ভাজাজাতীয় খাদ্য অত্যধিক গ্রহণের প্রবণতা কখনো পেটে প্রদাহ বা গ্যাস্ট্রাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য ইফতারি বা সেহরি খাদ্য সহজপাচ্য হওয়া আবশ্যক।

১১) এ ব্যাপারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহান চিকিৎসা বিজ্ঞানী মুহাম্মদ সা. কম খাওয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ক্ষুধা লাগলে খেতে বলেছেন এবং ক্ষুধা থাকতেই খাওয়া বন্ধ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত।

খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুযায়ী পেটের তিন ভাগের অন্তত একভাগ অংশ খালি রেখে খাদ্য গ্রহণ করলে অনেক সময় স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নিরাপদ থাকা যায়।

সুতরাং আসুন মহানবী সা. এর দেখানো খাদ্য গ্রহণের উক্ত নিয়মকে অনুস্বরণ করে রোজার মাসেই অভ্যাসে পরিণত করে প্রমাণ করি সিয়াম এক বড় বিজ্ঞান।

লেখক: প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ