বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


সন্তান ও শান্তি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

চৌধুরী মনজুর লিয়াকত রুমি

সন্তানেরা সততা, পবিত্রতা, জ্ঞান আর সুন্দরের উদাহরণ হোক। তারাই সত্যিকারের সৎ ও ভালো মানুষ হয়ে আমাদের আলো দেখাক। প্রাসঙ্গিকতায় বলি, আমাদের পরিবারের সদস্যরা প্রায় একত্রে বসি। আর এটা হয় পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে নাজিল হওয়া প্রথম শব্দ 'ইকরা' অর্থাৎ 'পড়' এর নিগুঢ় অর্থ 'জ্ঞানের চর্চা কর' এরই আলোকে।

রমজান মাসে এটা খুব ভালোভাবে করা যায়। আমরা একটু একটু করে পবিত্র কুরআনের অর্থ বোঝার চেষ্টাও করি একত্রে। এরই আলোকে হঠাৎ আমি আজ আমার ছেলেকে বললাম নামাজ পড়াতে। আর এভাবেই তার ইমামতিতে নামাজ পড়লাম আমাদের পুরো পরিবার। কি যে এক অসাধারণ আনন্দ পেলাম ভাষায় বলা সম্ভব না। এরই প্রেক্ষিতে মনে এলো নিচের আয়াতগুলো পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে।

‘এরপর ইব্রাহিম আ. প্রার্থনা করল, 'হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করো!' আমি তাকে এক ধীরস্থির বুদ্ধিমান পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত ১০১-১০২)।

'My Lord, grant me [a child] from among the righteous'. So We gave him good tidings of a forbearing boy'....

উপরের আয়াতটি পড়তেই মন ভাবতে শুরু করল, আহা এর চাইতে বড় চাওয়া বাবা-মায়ের কাছে আর কি'ইবা হতে পারে। যেখানে সৎ আর বুদ্ধিমান সন্তান আল্লাহ উপহার দিচ্ছেন। আর সেই সন্তানকে শিক্ষাই তাহলে দিব কি? এরই পরিপ্রেক্ষিতে মনে দোলা দিল অনেকগুলো আয়াত। এখানে সূরা লোকমানের ১৭-১৯ নং আয়াতগুলো উপস্থাপন করলাম, আর তা হলো...

‘হে আমার সন্তান! নামায কায়েম করো (এমন এক ব্যক্তিত্ব হও যেন তোমার সততা আর ভালো কাজ দেখে অন্যেরা নামাযে আকৃষ্ট হয়)। অন্যকে সৎকর্মে অনুপ্রাণিত করো ও অসৎকর্মে নিরুৎসাহিত করো। আর বিপদ-মুসিবতে ধৈর্যধারণ করো। এটাই প্রত্যয়ী মানুষের কাজ। কখনো অহংকারবশত মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না, মাটিতে গর্বভরে পা ফেলো না। উদ্ধত অহংকারীকে নিশ্চয় আল্লাহ অপছন্দ করেন।

(হে আমার সন্তান) চলাচলে সুশীল হও। মোলায়েম কণ্ঠে কথা বলো। (কখনো কণ্ঠস্বরকে গাধার স্বরের মত কর্কশ কোরো না) নিশ্চয় গাধার কণ্ঠস্বর সবচেয়ে কর্কশ।

"O'my son, establish prayer, enjoin what is right, forbid what is wrong, and be patient over what befalls you. Indeed, [all] that is of the matters [requiring] determination.

And turn not your face away from men with pride, nor walk in insolence through the earth. Verily, Allah likes not each arrogant boaster.

And be moderate in your pace (in walking) and lower your voice; indeed, the most disagreeable of sounds or harshest of all voices is the voice (braying) of donkeys".

সুরা মারইয়ামের ১৫ নং আয়াত পর্যন্ত পড়ে মনে হলো কয়েকটি কথা...

(সন্তান কামনায়) তাঁর রবকে নিভৃতে ডাকলেন হযরত জাকারিয়া আ. এই বলে- 'আপনার কাছে দোয়া করে বঞ্চিত হই নাই'।

সেভাবে আমরাও যেন সেই মহামহিমের কাছে মনের গহীন বাসনায় চাইতে পারি আর ব্যর্থ না হই আমাদের দোয়ায়, সৎ সন্তান রেখে যাবার আশায়।

এখানে রয়েছে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের বর্ণনা। যে ডাকে গভীরে, তাদের প্রতিই রইবে তাঁর অনুগ্রহ। এখানে উত্তরাধিকারী অর্থাৎ সন্তান দানের জন্য বার্ধক্যে উপনিত এক মানুষের চাওয়া প্রতিফলিত হয়েছে। যে সন্তান অনাগত সে যেন এই পৃথিবীতে এসে হয় সবার প্রিয়ভাজন। এইতো চাইছেন একজন অভিভাবক। সন্তানকে এভাবে সকলের প্রিয়ই তো দেখতে চান এ পৃথিবীর সকল অভিভাবক।

এখানে সেই সন্তানের নামকরণ হয়েছিল 'ইয়াহিয়া'। যার মানে 'জীবিত আর জাগ্রত'। আহা সন্তানেরা যেন সততা আর সুন্দরকে ছড়িয়ে দেয়ার ছাপ রেখে যেতে পারে জীবনকালে। হতে পারে যেন সত্যিকারের জীবিত আর জাগ্রতের উদাহরণ। এই তো চাওয়া অভিভাবকের।

আর মহামহিমের পক্ষে সহজ সব কিছুই দান করা, যে কোন সময়েই। তিনি বলছেন ‘এটা আমার পক্ষে সহজ আর এর আগেও তো তোমাকে সৃজন করেছি, তুমি যখন কিছুই ছিলে না’ (আয়াত ৯)।

আসলেইতো মানুষ তো কিছুই ছিল না, সেখান থেকেই অস্তিত্বে আনলেন তিনি।

মৌনতা আর গভীরে চাওয়া তাঁর কাছে, এ এক শিক্ষা এখানে পাওয়া যায় সন্ধান। সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ করি তাঁরে। আল্লাহ তাই ইয়াকুব আ. আর জাকারিয়া আ. এর বংশধর ইয়াহিয়া আ. কে বলছেন, ‘গ্রন্থটিকে মজবুতভাবে ধারণ কর, তোমাকে জ্ঞান দিয়েছি শৈশবে’ (আয়াত ১২)।

আহা সকল সন্তান যেন পায় জ্ঞান শৈশবেই। যার মাধ্যমে উপকৃত হয় মানবজাতিসহ সৃষ্টির সকলেই। আর এর জন্য অভিভাবকদের নিজেদের দায়িত্ব হলো পবিত্র গ্রন্থটির গভীরে প্রবেশ করে সন্তানদেরকে এদিকে আকৃষ্ট করা।

‘আল্লাহ তাঁকে দিয়েছিলেন অন্তরের কোমলতা ও পবিত্রতা; ছিল সে মুত্তাকি (আল্লাহ ভীরু আর ভালবাসায় গাঁথা) আর অনুগত ছিল পিতা-মাতার, ছিল না উদ্ধত ও অবাধ্য। যার উপর ছিল শান্তি তার জন্মগ্রহণ দিবসে, থাকবে শান্তি মৃত্যু দিনে আর যে দিনে হবে সে পুনরুত্থিত’ (আয়াত ১৩,১৪)।

অন্তরের কোমলতা, পিতা-মাতার প্রতি আনুগত্য, কখনো উদ্ধত আর অবাধ্য না হওয়া, আর যাকে জীবন, মৃত্যু আর পুনরুত্থান ঘিরে থাকবে শান্তি। সেরকম সন্তান আর মানুষে ভরে উঠুক পৃথিবী, সকলের শান্তির তরে।

মা-বাবার তরে সদা উচ্চারিত সুরা বনী ইসরাইলের ২৩-২৪ নং আয়াতদুটো যেন আমরা উপলব্ধি করি জীবনে পালন করতে করতে পড়তে পারি 'রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগিরা'..

২৩. আল্লাহ আদেশ করেছেন যে, (এক) তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো উপাসনা করবে না। (দুই) বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তোমার জীবদ্দশায় তাদের একজন বা উভয়েই যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবুও তাদের ব্যাপারে ‘উহ-আহ’ কোরো না, তাদের ধমক দিও না বা অবজ্ঞা কোরো না, তাদের সাথে আদবের সাথে কথা বলো।

২৪. শ্রদ্ধাভরা দৃষ্টিতে মমতার ডানা মেলে ছায়ার মতো আগলে রাখো এবং সবসময় তাদের জন্যে দোয়া করো : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার মা-বাবা শৈশবে যে মমতায় আমাকে লালন করেছেন, তুমিও তাদের ওপর সে-রূপ করুণাবর্ষণ করো।’

লেখক: কবি ও কলামিস্ট

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ