বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


জোড় ও ইজতেমার বিষয়ে কাকরাইল শুরার নতুন সিদ্ধান্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্টিত হবে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব হবে ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারি। এছাড়া মাওলানা সাদ নির্ধারিত দিল্লির নিজামুদ্দিনে বাংলাদেশের সাথীদের জোড়ের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা বাতিল করেছে কাকরাইল মারকাজের শুরা।

কাকরাইল মারকাজ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চিঠিতে তাবলিগের মুরব্বি ও শুরার সদস্য মাওলানা রবিউল হক, মাওলানা মুহাম্মদ হোসেন, মাওলানা ফারুক,  মাওলানা জুবায়ের আহমদ, মাওলানা মুজাম্মিলুল হক, মাওলানা ওমর ফারুক ও মাওলানা মোশাররফ হোসাইনের স্বাক্ষর রয়েছে।

এর আগে মাওলানা সাদ কান্ধলভি আগামী বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি ও ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি।

একুশে বইমেলার সব বই দেখতে ও কিনতে ক্লিক করুন

বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে আসা দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের জিম্মাদার মাওলানা সাদ কান্ধলভি ইজতেমায় না যেতে পারায় কাকরাইল মারকাজে বসেই ২০১৯ সালের ইজতেমার ফয়সালা দিয়ে যান।

তিনি ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমার ১ম পর্বের প্রথম দিন রাতে কাকরাইলে এক বৈঠকে তারিখ নির্ধারণ করেন।

সে বৈঠকে তাবলিগের মুরব্বি ও শুরার সদস্য মুহা. শিহাবউদ্দীন নাসিম, সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন ও মাওলানা জিয়া বিন কাসেম উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

কাকরাইল মারকাজ থেকে গতকাল পাঠানো চিঠিতে জানা হয় আগামী ইজেতেমার আগে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর ২০১৮। মাসিক মশওয়ারার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৩-২৪ মার্চ ২০১৮।

চিঠিতে বলা হয়, প্রতি বছরের মতো বিশ্ব ইজতেমা শেষের দিকে দুআর আগে সব জেলা ও খিত্তার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আগামী ইজতেমা ও জোড়ের তারিখ উপস্থাপন করা হলে সবাই সম্মাতি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, ইতোপূর্বে কাকরাইল থেকে যে চিঠি নিজামউদ্দিনের জোড়ের উদ্দেশ্যে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে উমুরে বাংলাদেশ নামে আপনাদের কাছে পৌঁছেছে তা মূলত শুরার সাথীদের সম্মতিতে প্রেরণ করা হয়নি।

বরং ইজতেমা চলাকালীন মাত্র তিনজন শুরার সাথী ইজতেমা ছেড়ে কাকরাইল চলে আসেন এবং তারা বাকি সাতজন শুরার সাথী যারা ইজতেমায় লক্ষ লক্ষ দেশি ও বিদশি মেহমানদের নিয়ে মশগুল ছিলেন, তাদের অনুপস্থিতিতে এ সমস্ত উমুর হজরত মাওলানা সাদ সাহেবের সামনে পেশ করা হয়।

উপরন্তু পরবর্তীতে ইজতেমায় অবস্থানকারী শুরাদের মতামত না নিয়েই তা প্রচার করা হয়।

ইসলামি কিতাব, তাবলিগের বয়ান ও মালফূযাতের অন্যন্য  অ্যাপ

অতএব আমরা এ সকল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই বিধায় আপনাদের খেদমতে দরখাস্ত করছি, আপনারা এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকবেন।

চিঠিতে মাওলানা সাদকে সরকারই বাংলাদেশে আসার জন্য ভিসার ব্যবস্থা করেছেন বলে যে বক্তব্য তারা দিয়েছেন তা নাকচ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, সরকারি নিয়মের বহির্ভূতভাবে তাবলিগের জন্যনির্ধারিত TI (তাবলিগ-ইজতেমার ভিসা) ভিসা গ্রহণ না করে T (টুরিস্ট ভিসা) ভিসা ব্যবস্থা করেন এবং উলামা পরিষদের উপদেষ্টামন্ডলীর সভার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে, মাওলানা সাদকে বাংলাদেশের মাদরাসা ও আলেমদের কঠোর সিদ্ধান্তের কথা গোপন করে, তাকে আনার ব্যাপারে একজন শুরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন এবং কাউকে অবহিত না করে চুপিসারে দুইজন সাথীকে ইস্তেকবারের জন্য হিন্দুস্থানে পাঠিয়েছেন।

এছাড়াও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে আড়াল করে ও সর্ব সাধারণকে ধোকা দেয়ার নিমিত্তে তার জামাতকে দিল্লি-ঢাকা ফ্লাইটে না এনে, দিল্লি-ব্যাংকক-ঢাকা দীর্ঘপথ ঘুরিয়ে এনে শুধুমাত্র তাকে অপদস্ত করা হয়নি বরং সরকাকে বিব্রত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে দাওয়াতের এই মহান কাজকে হেয় করা হয়েছে। এহেন গর্হিত কাজের জন্য দায়ী কে?

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিগত ইজতেমায় সব জেলা অংশ নিয়েছে এবং ১৪ হাজার বিদেশি মেহমান অংশ নেন। কিন্তু এর বিপরীতে ৩ জন শুরা সদস্য কাকরাইলে বসে ইজতেমাকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেন এবং কাকরাইলেই ইজতেমা হবে বলে অপপ্রচারকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তাবলিগের শুরার সদস্য ও মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের আহমদের ছেলে মাওলানা হানজালা আওয়ার ইসলামকে জানান, মুরব্বিরা মশওয়ারা করে ইজতেমা ও জোড়ের তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

চিঠির পক্ষে সত্যতা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুরব্বি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনি সেসময় প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় পার করবেন তাই জানুয়ারির শুরুতে ইজতেমা করা সম্ভব নয়।

তাই সরকারের সঙ্গে কথা বলে ইজতেমার তারিখ কিছুটা পেছানো হয়েছে।

দিল্লির নিজামুদ্দিনে বাংলাদেশ সাথীদের জোড়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথীদের জন্য এখন জোড়ের কোনো প্রয়োজন নেই। অতীতে এরকম কোনো জোড়ের নজির নেই।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু নিজামুদ্দিন মারকাজ এখন দুইভাগে বিভক্ত এবং সারা দুনিয়ার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের উলামায়ে কেরাম তথা দেওবন্দের উলামা হাজরাতগণ সাদ সাহেবের বিভিন্ন বক্তব্য ও বয়ানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন এবং উনার ব্যাপারে আশঙ্কামুক্ত নন। তাই এমতাবস্থায় নিজামুদ্দিনে বাংলাদেশের ৩ হাজারের অধিক তাবলিগের সাথীদের নতুন করে এহেন জোড়ের প্রক্রিয়া শুরু করা সঠিক নয়।

ইফোর্ট: টি শার্টে আধুনিকতা ও শালীনতার সমন্বয়

একই বিষয়ে অপর পক্ষ তাবলিগের শুরার সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে নতুন করে কোনো মশওয়ারা হয়নি। হজরতি মাওলানা সাদ সাহেব যে তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন তা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি একাধিক মুরব্বির স্বাক্ষর নিয়েও সন্দেহ আছে।

মাওলানা সাদ কান্ধলভি নির্ধারিত তারিখ শুরার সবার সঙ্গে মশওয়ারা করে চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও আপনারা এককভাবে নির্ধারণ করে প্রচার করেছেন বলে অভিযোগ আছে, এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হজরতজি মাওলানা সাদ ফয়সালার সময় অন্যান্য সদস্যকে তিনি কাকরাইলে ডেকেছেন কিন্তু তারা আসেনি। তাই ফয়সালাটি চূড়ান্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

তবে বিষয়টি তিনি বিস্তারিত চিঠির মাধ্যমে জানাবেন বলে আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

তাবলিগের সমস্যা সমাধানের পথ একটাই


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ