শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘হজ বিষয়ক সিদ্ধান্তে সরকারের উচিত হাবের পরামর্শ নেয়া’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু: হজ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই বাংলাদেশি হাজিদের। হজের প্রস্তুতি, মেডিকেল টেস্ট ও দেশত্যাগ থেকে শুরু করে সৌদি আরবে অবস্থানরত অবস্থায় নানা হয়রানির শিকার হন তারা।

এ অভিযোগ চলছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু তার কোনো সমাধান নেই। উল্টো প্রতিবছর যোগ হয় নতুন নতুন সমস্যা। যেমন গতবছর হজযাত্রীদের বিমানফ্লাইটের সিডিউল নিয়ে সীমাহীন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। একইভাবে নিবন্ধন করেও হজে যেতে পারছেন না বহু যাত্রী।

এসব সমস্যার মধ্যেই গত ১৪ জানুয়ারি সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে চলতি বছরের হজ চুক্তি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। চুক্তির অনুষ্ঠানে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ড. সালেহ তাহের বিন বানতেন।

চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। তার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার ১৯৮ জন।

নতুনচুক্তিতে বাংলাদেশি হাজিদের সমস্যার কতোটা লাঘব হবে তা জানতে কথা বলেছিলাম হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর ঢাকা জোনের কমিটি সদস্য ও জীবন ট্রাভেলস লিমিটেড-এর এমডি মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা’র সঙ্গে।

আওয়ার ইসলাম : এবারের হজচুক্তির আগে সরকারের কাছে আপনাদের প্রধান প্রত্যাশা কী ছিলো? তা কী পেয়েছেন?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : আমাদের মূল প্রত্যাশা ছিলো বাংলাদেশি হাজিদের কোটা বাড়ানো। প্রতিবছর সৌদি আরব সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবে হজযাত্রীদের কোটা সম্প্রসারিত করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে হজযাত্রীদের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা যথেষ্ট নয়।

আমরা শুনেছি মাননীয় মন্ত্রী কোটা বাড়ানোর জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন করেছেন। আশা করছি, সৌদি সরকার তাতে সাড়া দেবেন।

আওয়ার ইসলাম : হজযাত্রীদের কোটা বাড়ানো প্রয়োজন কেনো?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : কারণ, হজযাত্রীদের সংখ্যা বাংলাদেশে দিনদিন বাড়ছে। আর বাড়তি চাহিদার কারণে অনেকেই অসততার আশ্রয় নিচ্ছে। তাতে হজযাত্রীদের হয়রানি বাড়ছে। ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম : এবারের চুক্তিতে আপনাদের অন্য কোনো প্রত্যাশা কি পূরণ হলো? বা হাজিদের জন্য কোনো সুসংবাদ আছে?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : না, আমাদের কোনো প্রত্যাশাই পূরণ হয় নি। হজযাত্রীদের জন্যও কোনো সুসংবাদ-ও নেই। বরং আমরা শুনছি, সৌদি সরকারে হজের মোট খরচের উপর ৫% হারে ভ্যাট বসাবে। যদি তাই হয় তবে হাজিদের খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ সরকারের হজ মন্ত্রণালয় অবশ্য সৌদি আরব সরকারকে অনুরোধ করেছেন ভ্যাট কার্যকর না করতে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত কি আসবে তা বলা যাচ্ছে না।

আওয়ার ইসলাম : হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে হাজিদের অনেক অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে নানা অব্যবস্থাপনার খবর মিডিয়ায় আসে। এজন্য দায়ি কারা, সরকার না এজেন্সি?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : দায়টা দুই পক্ষেরই। তবে আমি মনে করি, সরকারের দায়টা বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাজি যায় মাত্র ৭ হাজার আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যায় ১ লাখ ২০ হাজার। তাহলে সরকারের কি উচিৎ নয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় হাবের সঙ্গে পরামর্শ করা?

কিন্তু সরকার তা করে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকসহ সরকারি বৈঠকে হাবের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক। কারণ, আমরা হজযাত্রীদের নিয়ে কাজ করছি। আমরা জানি সমস্যা কোথায়। কিন্তু সরকার তা করছে না। সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না।

আওয়ার ইসলাম : কিন্তু এজিন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিশ্রুত সেবা হাজিদের প্রদান করে না।

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : হ্যা, অভিযোগটা সত্য। এর কারণও আছে। সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করে তা সৌদি সরকারের ঘোষণার আলোকেই করে। আমাদের দেশে হজ এজেন্সিগুলোর মধ্যে হাজি নিয়ে অসম প্রতিযোগিতা রয়েছে। ফলে কোনো কোনো এজেন্সি হাজি টানার জন্য সরকার ঘোষিত প্যাকেজগুলোর চেয়ে কম টাকায় হজ করানোর আশ্বাস দেন। এই ফাঁদে পড়েন অনেক হাজি।

অথচ বাস্তবতা হলো, পূর্ণ টাকা ছাড়া যথাযথ সেবা প্রদান করা সম্ভব নয়। প্রতি সেবার বিপরীতে নির্ধারিত খরচ রয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : এ দায় তো এজেন্সিগুলোরই?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : হুমম এজেন্সিগুলোরই দায়। কিন্তু এ সমস্যার সমাধান শুধু হাবের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কারণ, হাবের কাছে এজেন্সিগুলোর আইনি বাধ্য-বাধ্যকতা নেই। তাছাড়া হাজি যদি এজেন্সির কথায় আশ্বস্ত হন, তবে আমাদের কী করার থাকে?

এজন্য আমাদের পরামর্শ হলো, সরকার যেনো এমন আইন করে যে, সরকার ঘোষিত প্যাকেজের পূর্ণ টাকা এজেন্সির একাউন্টে জমা না হলে সে হজে যেতে পারবে না। টাকা পুরোপুরি এলে এজেন্সিগুলোর সেবা দিতে কোনো সমস্যা থাকবে না।

আওয়ার ইসলাম : প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক হাজি টাকা জমা দেয়ার পরও হজে যেতে পারেন না। কেনো পারেন না?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : এজেন্সি ও হাজিদের মধ্যে একটি মধ্যসত্ত্বভূগী শ্রেণি রয়েছে। যাদের আমরা গ্রুপ লিডার। এরা হাজিদের কাছ থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রেখে দেন। হাজিকে যখন পাঠানোর সময় হয় গ্রুপ লিডার টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। আর হাতে টাকা না থাকায় এজেন্সি হাজি পাঠাতে পারে না।

আওয়ার ইসলাম : গ্রুপ লিডার তো এজেন্সির পরিচিত লোকই হয়ে থাকে। তারা কেনো তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : গ্রুপ লিডারকে যখন আমরা বলি, হাজির পূর্ণ টাকা জমা দাও। তখন বেশি কমিশনের আশায় অন্য এজেন্সির কাছে চলে যায়। যারা হাজি ঠিক মতো পায় না। তারা গ্রুপ লিডারকে বেশি কমিশন দিয়ে হাজি নিয়ে নেয়। আর হাজিকে সৌদি আরবে নিয়ে প্রতিশ্রুত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়।

আবার আমরা যদি তাদের আইনের হাতে সপর্দ করি তারা আইনের ফাঁক গলিয়ে বের হয়ে যায়। অন্যদিকে বেশি লাভ করতে পারবে না বা আইনের ঝামেলায় পড়তে পারে ভেবে আর কোনো গ্রুপ লিডার এজেন্সির হয়ে কাজ করতে চায় না। এজন্য এজেন্সিগুলোর কাছে তাদের বিরুদ্ধে করার মতো তেমন কিছু থাকে না।

আওয়ার ইসলাম : তাহলে বাঁচার উপায় কী?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : প্রথম কাজ হলো, হাজিগণ অবশ্যই এজেন্সির একাউন্টে টাকা জমা দেবেন। লিডারের হাতে দিবেন না। আর সরকার যেনো গ্রুপ লিডার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করে এবং এজেন্সির একাউন্টে টাকা জমাদান নিশ্চিত করে।

আওয়ার ইসলাম : গতবছর হজফ্লাইট নিয়ে হাজিরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়েন। সেটা কেনো হয়েছিলো?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : হজের ক্ষেত্রে মদিনার ঘরভাড়া একটা ভাইটাল পয়েন্ট। যে এজেন্সি মদিনায় যে সপ্তাহে ঘরভাড়া করে সে এজেন্সি সে অনুযায়ী তার হাজিদের পাঠায়। এর আগে পাঠালে দ্বিগুণ ঘরভাড়া গুনতে হয়।

কিন্তু সরকার বিষয়টা নিয়ে হাবের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে একটা সিডিউল দিয়ে দেন। যার ফলে গতবছর এ সমস্যা তৈরি হয়।

আওয়ার ইসলাম : এ সমস্যা এড়াতে সরকার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা বা সমাধানের কথা বলেছে?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : আমার জানা মতে এখনো বলে নি।

আওয়ার ইসলাম : এ বছর যারা হজে যেতে চান। বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচতে তাদের কী করা উচিত?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : প্রথম পরামর্শ গ্রুপ লিডারের হাতে টাকা না দিয়ে এজেন্সির একাউন্টে দেয়া। যারা অল্প টাকায় হজ করানোর কথা বলে তাদের বিশ্বাস না করা। সরকার ও হাবের নির্দেশনা অনুসরণ করা।

আওয়ার ইসলাম : হাজিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে হাবের কোনো কার্যক্রম আছে কি?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকার প্যাকেজ ঘোষণা করলে হাব প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ায় সচেতনতা তৈরি করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাবে।

আওয়ার ইসলাম : আর কোনো বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান?

মুফতি আবদুল কাদের মোল্লা : গত বছর হাজিদের অবর্ণনীয় কষ্ট হয়েছিলো মিনা ও মুজদালিফায় যাওয়ার জন্য সময় মতো পরিবহন না দেয়ায়। সৌদি আরবের মুয়াল্লিমদের আন্তরিকতার অভাবে এটা হয়েছিলো।

আমি চাইবো, সরকার যেনো বিষয়টিতে আন্তরিক হয়। সরকার আন্তরিক হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।বলে আমার বিশ্বাস।

আমল সহজ, সওয়াব অনেক


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ