বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


স্ত্রীর গায়ে ফুটন্ত পানির পর গরম তেল!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: জল গরম করে আনো— হুকুম দিয়েছিল স্বামী। সেই জল যে তাঁর গায়েই ঢেলে ‘শাস্তি’ দেবে স্বামী, তখনও আঁচ করতে পারেননি টুকটুকি সাঁধুখা ওরফে পূজা।

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন বছর কুড়ির তরুণী। তাতেও মন গলেনি স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। অভিযোগ, কিছুক্ষণ পরে পূজার গায়ে গরম তেল ঢেলে দেয় স্বামী সুমন কুণ্ডু। সর্বাঙ্গ তখন জ্বলছে পূজার। পড়শিরা যাতে সেই আর্তনাদ শুনতে না পান, সে জন্য পূজাকে ঘরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনা অবশ্য ধামাচাপা থাকেনি। পরিচিত এক ব্যক্তির সাহায্যে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন পূজা। বৃহস্পতিবার বিকেলে হাজির হন গাইঘাটার ঘোঁজায় বাপের বাড়িতে। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পূজার দু’পায়ের কুড়ি শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তবে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।

বৃহস্পতিবার রাতে পূজার বাবা বিমল সাঁধুখা গাইঘাটা থানায় মেয়ের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদের নামে মেয়েকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ জানিয়েছেন। গাইঘাটা থানার পুলিশ হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে তরুণীর বয়ান নথিভুক্ত করেছে।

শুক্রবার সকালে রানাঘাট থানার পুলিশের সহযোগিতায় গাইঘাটা থানার পুলিশ রানাঘাটের বড়বাজার এলাকার বাড়ি থেকে পূজার স্বামী সুমন, তার বাবা স্মরজিৎ ও মা মিতালিকে গ্রেফতার করেছে।

কিন্তু কেন এই অত্যাচার?
মাস এগারো আগে পূজার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রানাঘাটের বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা সুমনের। বিমলবাবু বলেন, ‘‘বিয়ের আগে দেনা-পাওনার কোনও কথা ছিল না। আমরা সাধ্য মতো জিনিসপত্র দিয়েছিলাম।’’ পূজার শ্বশুরের তেলের মিল রয়েছে। সুমন কাজকর্ম বিশেষ করে না।

দিন কয়েক আগে স্মরজিৎবাবুর কুড়ি হাজার টাকা চুরি যায়। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সন্দেহ গিয়ে পড়ে বৌমার উপরে। শুরু হয় নির্যাতন। পূজা বাপের বাড়িতে চলে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে প্রথম থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভিখারি, ছোটলোক— এ সব বলে কটূক্তি করত। টাকা খোয়া যাওয়ার পরে অত্যাচার বেড়ে যায়। শ্বশুর বাড়িতে আর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না।’’

তবু স্বামী এসে ফেরার অনুরোধ করায় ফিরে গিয়েছিলেন পূজা। ভেবেছিলেন, একটা সুযোগ দিয়ে দেখবেন। পূজার দাদা রাজু বলেন, ‘‘সে সময়ে বেয়াইমশাই দায়িত্ব নিয়েছিলেন, বোনের উপরে আর কোনও নির্যাতন, অসম্মান হবে না। জামাইবাবুও ক্ষমা চেয়ে নেন।’’

কিন্তু কিছুই যে স্বাভাবিক হয়নি, দু’দিন যেতে না যেতে তা টের পেতে শুরু করেন পূজা। অভিযোগ, এ বার পণের টাকা চেয়ে শুরু হয় অত্যাচার, অপমান।

পূজা বলেন, ‘‘১৬ জানুয়ারি রাতে সুমন মারধর করে ফোন কেড়ে নেয়। যাতে অত্যাচারের কথা কাউকে না বলতে পারি, হুমকি দেয়। বলে মেরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেবে।’’

অভিযোগ, পর দিন রাতের দিকে তাঁর গায়ে গরম জল ঢেলে দেয় সুমন। পরে গরম তেল। বাড়িতে সকলের সামনে ওই ঘটনা ঘটলেও কেউ প্রতিবাদ করেনি। উল্টে প্রশ্রয়ই দিয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিগৃহীতা তরুণী।

আনন্দবাজার পত্রিকা

এইচজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ