শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


চিনি কম খাবেন না বেশি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সিদরাতুল মুনতাহা
ফিচার রাইটার

স্বাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে আমরা প্যাকেটের পর প্যাকেট চিনি ফাঁকা করে চলেছি। কিডনি, হার্টসহ শরীরের বাকি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো যে প্রতিনিয়ত মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে চিনি খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিতে বলছেন চিকিৎসকেরা।  কেশি পরিমাণে চিনি খেলে হতে পারে মারত্মক কিছূ ক্ষতি। আবার চিনির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করলে একাধিক উপকারও পাওয়া যায়। আসুন চিনি বেশি খেলে কি ক্ষতি হতে পারে আর কম খেলে কি উপকার তা জেনে নেওয়া যাক।

চিনি বেশি খেলে যে যে ক্ষতি হতে পারে - 

১. শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমে যায়
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে চিনি শরীরে প্রবেশ করে ফ্রুকটোজে রূপান্তরিত হয়ে যায়, যা লিভারে মেদ জমাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তেও ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ে। ফলে একটা সময়ে গিয়ে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে লিভারের কর্মক্ষমতাও কমতে শুরু করে।

তাই অতি মাত্রায় চিনি মেশানো পানীয় খাওয়া চলবে না। সেই সঙ্গে রান্নাতেও চিনির পরিমাণ কমাতে হবে। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!

২. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়
প্লাস ওয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে চিনি খাওয়ার মাত্রা যত বাড়তে থাকে, তত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। কারণ চিনি শরীরে প্রবেশ করার পর নিমেষে সুগার লেভেলকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। আর এমমনটা চলতে থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর একবার যদি ডায়াবেটিস শরীরে এসে বাসা বাঁধে তাহলে একে একে প্রায় প্রতিটি ভাইটাল অর্গানই অকেজো হতে শুরু করে। তাই আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, চিনি খেয়ে জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলতে চান, নাকি সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে চান।

৩.  হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়
একবার ভাবুন তো হার্টের ওপর কেউ জোরে জোরে হাতুড়ি পেটাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কেমন অবস্থা হবে হার্টের! হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছি কেন তাই ভাবছেন তো? আসলে চিনি শরীরে প্রবেশ করার পর এইভাবেই হার্টের ক্ষতি করে থাকে। তাই তো রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গেলে হৃদপিন্ডের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। যে কারণে বাড়ে নানাবিধ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। প্রসঙ্গত, আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে মাত্রাতিরিক্তি চিনি খাওয়ার কারণে কেউ যদি একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাহলেও হার্টের কর্মক্ষমতা তো কমেই, সেই সঙ্গে স্ট্রোক এবং হার্ট ফেইলিওরের সম্ভাবনাও প্রায় ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই ভুলেও দিনে ৬ চামচের বেশি চিনি খাবেন না যেন!

৪. ব্লাড প্রেসার বাড়তে থাকে
শুনতে অবাক লাগলেও একথা একেবারে ঠিক যে বেশি মাত্রায় চিনি খেলে বাস্তবিকই রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। আসলে দেহের অন্দরে চিনির মাত্রা বাড়তে থাকলে ইনসুলিনের উৎপাদনও বেড়ে যায়, যে কারণে ধমনিতে এক ধরনের দেওয়াল তৈরি হতে শুরু করে। এই কারণেই রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্ট্রোকের মতো ভয়ঙ্কর রোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।

৫. এনার্জি কমতে শুরু করে
একথা ঠিক যে চিনি বা ওই জাতীয় কোনও খাবার খেলে নিমেষে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। কিন্তু একথাও ঠিক যে কিছু সময় পরে যখন চিনির রেশ কাটতে শুরু করে, তখন এত মাত্রায় এনার্জির ঘাটতি দেখা দেয় যে শরীর একেবারেই চলতে চায় না। শুধু তাই নয়, চিনি খাওয়ার মাত্রা বাড়ালে মস্তিষ্কের অন্দরে সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যে কারণে ঘুম আসতে থাকে। ফলে কাজ করার ইচ্ছা একেবারে চলে যায়।

চিনি কম খেলে যে যে উপকার হয় - 

১. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মাত্রায় চিনি খাওয়া শুরু করলে রক্তেও চিনির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে `গ্লাইকেশন` নামে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে শুরু করে শরীরের অন্দরে, যার প্রভাবে ত্বকে বলিরেখা ফুটে উঠতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্কিনের ঔজ্জ্বল্যও হ্রাস পায়।

২. মেদ কমে:
পেটের চারিদিকে, বিশেষত লিভার, প্যানক্রিয়াস এবং ইন্টেস্টাইনকে ঘিরে চর্বির স্থর পুরু হতে থাকলে কিন্তু বিপদ! কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মেদ যত বাড়তে থাকে, তত টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটে। তাই তো মধ্যপ্রদেশে যাতে কোনওভাবে মেদ না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৩. হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে:
২০১৪ সালে এই বিষয়ক হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যারা বেশি মাত্রায় চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খান, তাদের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, চিকিৎসেকদের মতে দিনে ৬-৭ চামচ চিনি খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়।

৪. ডায়াবেটিস দূরে রাখে:
সত্যিই কি চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে?  ২০১৪ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে- খাবারে চিনির মাত্রা যত বেশ হবে, তত ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। আসলে মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে  টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগকে শরীরের অন্দরে বাসা করে দেওয়ার পথকে প্রশস্ত করে।

৫. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি মাত্রায় চিনি খেলে মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও হ্রাস পায়। সেই কারণেই চিনি খাওয়ার বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।

এখন আপনিই ভেবে দেখুন, চিনি কম খাবেন না বেশি?

সূত্র : ইন্টারনেট


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ