শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বউ যখন ঘরে আসে, আমার একটি চৌকিও ছিলো না, ছিলো না দুটি বালিশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

লাবীব আব্দুল্লাহ

যে মেয়েটিকে পছন্দ করে রেখেছিলাম বিয়েটা তার সঙ্গে হয় নি৷ তবে তার বিয়ের ওলিমায় গিয়েছিলাম৷ কষ্টটার মাত্রা একটু বেশী৷ মেয়েটি বিয়ের পরও আমার কাছে কিছু দিন পড়েছে৷ এটি আরও রোমান্টিক৷ বিয়েটি হয়নি কেন আমার সঙ্গে তা কষ্টের৷ শহরে আমার জায়গা বা বাসা না থাকাও একটি কারন৷ তাছাড়া ছোট মেয়েটি ছিলো আমার পছন্দের৷ বড়টি রেখে ছোটটি বিয়ে দেবে না৷ যাক সেই মেয়েটিও জানতো আমার সঙ্গে তার বিয়ের আলোচনা চলছে৷ মেয়েরা বিয়ে নিয়ে কী ভাবে তা জানা মুশকিল তবে আধুনিক যুগে মেয়েরা বিয়ে করে বিয়ে বসে না৷ আমার পছন্দের সেই মেয়েটি তেমন নয়৷ মেয়েটির নাম আমার ডায়েরিতে লেখা আছে৷ এই লেখায় তার নাম লিখলাম না৷ তার বাচ্চারা এই লেখা পড়লে সমস্যা হবে৷

আমার বিয়ে আমি আলাপ করেই করি মেয়ের পিতার সঙ্গে৷ পিতা সরল সহজ আল্লাহওয়ালা মানুষ৷ পীর৷ তবে পিরালি করে না৷ তিনি তাবলিগি মেজাযের৷ পেশায় শিক্ষক৷ শাইখুল হাদীস৷ নাম বললে নেত্রকোনার মানুষ চিনবে তাই নামটি বললাম না৷ মেয়ের বাপের সঙ্গে গল্প করে বিয়ে করেছি এটি কি অদ্ভুত লাগছে? আমার কাছে সেটি ভালো লেগেছে৷ মেয়েটিও জানতো না আমার সঙ্গে তার বিয়ে হবে৷

আমার বিয়েতে বড় বড় আলেম গিয়েছেন নেত্রকোনায়৷ মহর দশ হাজার টাকা৷ বিয়ের মেহমানদারিতে শুধু মাছের আয়োজন ছিলো৷ অনেক আইটেমের মাছ৷ আমার বিয়ে আমার বাড়ি থেকে হয় নি৷ আমার দোস্ত মাওলানা মুহাম্মদ পুকুরে গোছল করিয়েছেন৷ চুবানি পানিতে৷ আমার বন্ধু জহিরুল হক মাসউদের ঘর থেকে আমি যাত্রা করেছি৷ যাবার সময় জুতো হারিয়ে ছিলো৷ মাসুদ ভাই জুতো ক্রয় করে দিয়েছিলেন৷

নেত্রকোনা আলিয়া মাদরাসার মসজিদে আমার বিয়ের আকদ হয়৷ বিয়ে বাড়ি থেকে আমি পালিয়ে নেত্রকোনা বড় স্টেশনে চা খেতে আসি৷ সম্ভবত দোস্ত গোলাম রব্বানী ও মুহাম্মদ সাথে ছিলো৷ তিন জনের এক ড্রেস৷ সাদা জামা৷ আমি বিয়ের দিনে মুখে রোমাল দেই নি৷ মামা ছাড়া আমার বাড়ি থেকে কেউ বিয়েতে আসে নি৷
আব্বার কথা মনে পড়েছে বিয়ের দিন৷ আব্বুর স্মৃতি মনে নিয়ে আমি দুঃখটা ভুলে বা আড়াল করে রেখেছি৷

আমার দুই জন শায়খ ও উস্তায বিয়েতে গিয়েছিলেন৷ আমি তাদের প্রতি সারা জীবন এই কারনে কৃতজ্ঞ৷
বিয়ের পর আমি মেয়ের বাড়ি দুই দিন থেকে বউকে নিয়ে চলে আসি ময়মনসিংহে৷ লাজুক মেয়েটি mময়মনসিংহে চলে এলো কিন্তু আমার কি বাসা বা ঘর আছে কি না তা একবারও জানতে আগ্রহী হলো না৷ তখন আমার এক কামরার একটি ঘর ছিলো৷ সম্ভবত সাত শত টাকা ভাড়া৷ আমার একটি চৌকিও ছিলো না৷ ছিলো না দুটি বালিস৷ তাহলে সংসার শুরু কীভাবে? সেটি আজ থাক৷

তবে মজার কথা হলো বিয়ের প্রথম সপ্তাহে তাকে নিয়ে আমি চলে যাই জামালুপুরে৷ ট্রেনে গল্প করে করে৷ মেয়েটি এতো অনুগত! হঠাৎ গ্রামের বাড়িতে হাজির তাকে নিয়ে৷ সবাই অবাক৷ সাত আট জনকে দাওয়াত দিয়ে ওলিমা করি৷ এরপর গল্প করে করে তাকে নিয়ে আমি ফিরে আসি ময়মনসিংহে৷ সেই চৌকিহীন ঘরে৷ সংসার শুরু একটি শীতল পাটিতে৷ একটি তল্লার পাটিতে৷ তখন বাসা তালতলা ময়মনসিংহে৷

গল্পটি বলা কি ঠিক হলো? যাক আমার বউ বা প্রিয়তামা ফেবু ব্যবহার করেন না তাই এই লেখা পড়বেন না৷
ছেলেটি বড় হয়ে এই লেখা হয় তো পড়বে৷ আমার বড় মেয়ে লেখাটি পড়লে হাসতেও পারে আমাকে বোকাও ভাবতে পারে৷ তাতে সমস্যা নেই৷ আমাকে কেউ কেউ বোকা মনে করে৷ সেও মনে করতে পারে৷ এটি আমার বিয়ে জীবনে একটি স্মৃতি৷ আমার আত্মজৈবিন কিছু লেখা আছে৷ হয়তো প্রকাশ হবে৷ আমার লেখাগুলো কষ্টের গদ্য৷ আমি কষ্টেও হাসতে পারি৷

আগামী কাল পরিবারে আরেকটি বিয়ে৷ আমি এই বিয়েতে আনন্দিত৷ আমি এই বিয়েতে কষ্টেও আছি৷ কষ্টের গদ্যটা বলাও যাবে না৷ লিখাও যাবে না৷ মনে রাখতে হবে৷ আব্বু নেই এই বিয়েতে৷ আমার বিয়েতও ছিলেন না৷ ছিলেন না আমার ছোট বোনের বিয়েতেও৷ আম্মু টেনশনে হাইপ্রেশারে৷ আমি আছি আমার মতো করে৷
কষ্টের ভেতরও এই সমাজে হাসি দিতে চেষ্টা করি৷

দুপুরে কী খেলাম আজ? গরুর গোসত, মাসের ডাল, ভাজি৷ মিষ্টি তিনটি৷ বিকেলে সি ফুডে কফি৷ দুই কফি তিন জনে৷ আশি টাকা৷ আমি আজ একজনের উপকার স্মরণ রাখবো তিনি আমার হাসিতেও চোখে হয়তো কষ্টের রেখা দেখে উপকার করলেন৷ জামিয়া ইসলামিয়া ও জামিয়া মুহাম্মদিয়া ময়মনসিংহে কেক ও চা খেলেলাম আজ৷

মোস্তফা ভাই, মুস্তাফিজ ভাই এবং মাহফুজ ভাই কষ্টের সময় সময় দিলেন৷ কাল আমার ছোট বোন ফাতেমা মাফরুহার নতুন জীবন শুরু৷ আব্বুর স্মৃতি হয়তো সেও মনে করবে কাল৷ কিন্তু আব্বু তো ওপারে৷
আমার বিয়ের পর তাকে গ্রাম থেকে ময়মনসিংহে এনেছিলাম৷ স্কুলে কিছু দিন পড়েছে ৷ এরপর দাওরায়ে হাদীস পড়েছে৷ সে শিক্ষিকা৷ আমার ঘরে আম্মুসহ ভাই বোন শিক্ষক শিক্ষিকা৷ ছোট ভাই সৌদীতে৷
ছোট বোনে বিয়ের দিনে আবার মনে হলো আব্বুর কথা৷

আব্বু নেই সেই আমার কৈশোর জীবন থেকে৷ আমি বড় ভাই৷ যারা বড় ভাই তারা আমার মনের কষ্টটা কিছুটা উপলব্দি করতে পারবে৷

হ্যা, কষ্টের মাঝেও আমি হাসতে পারি৷ আমি কষ্ট মনের গভীরে রাখতে পরি৷ তবে লিখে রাখলে আমার বাচ্চারা পড়তে পারবে৷

লেখক: পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ