বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ইমাম-মুয়াজ্জিনকে জঙ্গি সাজাতে গিয়ে নিজেরাই ধরা খেল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: স্যার একটি মসজিদে কিছু হুজুর গোপনে মিটিং করে। তারা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গি সংক্রান্ত উদ্রবাদী লিফলেট মানুষের মাঝে বিতরণ করে। আমি তাদের দেয়া একটি লিফলেট আপনাদের কাছে পাঠালাম।

কিন্তু এমন তথ্যদাতা নিজেই এখন ৩ সহযোগিসহ র‌্যাবের জালে। তথ্যদাতাকে গ্রেপ্তার করে তার কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও সাধারণ মানুষকে জঙ্গি বানিয়ে ব্ল্যাক মেইলিং ও অর্থ আদায়ের কাজে ব্যবহৃত লিফলেট, ইয়াবা, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও ফেনসিডিল তৈরির সরঞ্জামসহ নানা জিনিস।

গতকাল দুপুরে র‌্যাব-১১এর সদর দপ্তর আদমজীতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের র‌্যাব-১১এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান এ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত ১৫ই ডিসেম্বর কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি র‌্যাবকে সংবাদ দেয় যে, ফতুল্লার কোতালের বাগ কবরস্থান মসজিদের মধ্যে কিছু হুজুর প্রায় সময় গোপন বৈঠক করে এবং তারা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

তারা জঙ্গি সংক্রান্ত উগ্রবাদী লিফলেট মানুষের মাঝে প্রচার করছে। কামরুল ইসলাম একটি লিফলেটের কপিও র‌্যাবের কাছে সরবরাহ করে। এই সংবাদের প্রেক্ষিতে বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই ও তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে র‌্যাব জানতে পারে সম্পূর্ণ ঘটনাটি সাজানো।

এর প্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর রাতে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকা থেকে কামরুল ইসলাম ওরফে রুবেলকে আটক করে র‌্যাব। তার বাড়ি বরিশালের কলাপাড়া এলাকায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল ইসলাম র‌্যাবকে জানায় যে, উক্ত জঙ্গিবাদী লিফলেটসমূহ সে ও তার সহযোগী মো. আল আমিন ও মো. রুবেল হাওলাদার অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের জন্য তৈরি করেছিল।

পরে উক্ত মসজিদ হতে ৯৭টি লিফলেট উদ্ধার করা হয় এবং কামরুলকে জিজ্ঞাসাবদের পর তার নিজস্ব বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক ইয়াবা, নকল ইয়াবা ও নকল ফেনসিডিল তৈরির সরঞ্জামাদি, নকল ইয়াবা তৈরিতে ব্যবহৃত ৩ হাজার ৩৫০টি জিনেক ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের অপর সদস্য মো. আল আমিন (২০) কে ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ফকির অ্যাপারেলস লি. থেকে আটক করা হয়।

তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের সদর থানা এলাকায় এবং ফতুল্লার টাগারপাড় এলাকা হতে তার অপর দুই সহযোগী মো. রুবেল হাওলাদার (২২) ও মো. মোতালেব হোসেন (৪৮)কে আটক করা হয়।

আটককৃত রুবেলের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনী ও মোতালেবের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। মূলহোতা কামরুল আরো স্বীকার করে যে, তার জঙ্গি সংক্রান্ত লিফলেট তৈরি এবং বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের স্টিকার তৈরির কাজে মো. রুবেল হাওলাদার কম্পিউটার কম্পোজ করে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে এবং মো. আল আমিন উক্ত মসজিদের ভেতর লিফলেটগুলো গোপনে রাখার কাজে আর মো. মোতালেব হোসেন তাকে ইয়াবা তৈরির কাজে ট্যাবলেট দিয়ে সাহায্য করে।

র‌্যাব জানায়, আটকদের মধ্যে মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রুবেল বরিশালের কলাপাড়ার একটি প্রাইমারি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে এবং ২০০৯ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় বসবাস শুরু করে গার্মেন্টসে চাকরি করতে থাকে।

কিন্তু বিগত এক বছর ধরে সে ইয়াবার ব্যবসা শুরু করে। অধিক লাভের আশায় সে নিজে তার একটি দল তৈরি করে সহযোগীদের সাহায্যে ব্যথা নাশক ট্যাবলেট জিনেক-৫০ এর সঙ্গে ইয়াবা সাদৃশ্য সুগন্ধির মিশ্রন ঘটিয়ে ইয়াবা প্রস্তুত করে বিক্রি করতে থাকে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষকে ইয়াবা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দেয়াসহ ভয়ভীতি দেখানোর কাজ করতে থাকে।

সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গোপনে তার প্রস্তুতকৃত ইয়াবা রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দিয়ে সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়ার অপকৌশল প্রয়োগ করে আসছিল। সে নিম্নমানের সিরাপ ক্রয় করে তা দিয়ে ফেনসিডিল তৈরি করে বিক্রির চেষ্টা করছিল বলে জানিয়েছে।

সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, উক্ত কবরস্থান মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনকে জঙ্গি মামলায় জড়িয়ে অবৈধভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় উক্ত লিফলেটগুলো মুসল্লি বেশে মসজিদের ভেতরে গোপনে রেখে যায়।

সে বর্ণিত লিফলেটগুলো মসজিদের ভেতরে রেখে ইমাম ও মোয়াজ্জিনকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় ফাঁসানোর জন্য উক্ত লিফলেটগুলো রেখে দিয়েছিল বলে স্বীকার করেছে। জঙ্গি সংক্রান্ত উগ্রবাদী লিফলেট তৈরি করে বিভিন্ন মসজিদে রেখে সমাজের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির অপকৌশলও প্রয়োগ করে আসছিল।

অপরদিকে মো. রুবেল হাওলাদার মাদারীপুরের কালকিনী থানাধীন একটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে এবং ফতুল্লা এলাকায় কম্পিউটার গ্রাফিক্সের দোকানের মাধ্যমে ব্যবসা করে আসছিল। সে গ্রেপ্তারকৃত মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রুবেলের সহযোগী হিসেবে কাজ করত এবং উগ্রবাদী লিফলেট কম্পোজসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের স্টিকার প্রস্তুত এর কাজ করে দিত।

অন্যদিকে আল আমিন ২০১৪ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানার একটি স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে নারায়ণগঞ্জ এসে গার্মেন্টস এ কাজ শুরু করে এবং গার্মেন্টসে কাজ করার সময় গ্রেপ্তারকৃত কামরুল ইসলাম ওরফে রুবেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে সে মাদক সরবরাহের কাজ করতে থাকে।

সে গোপনে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ও মসজিদে উগ্রবাদী লিফলেট গোপনে রাখার কাজে সহায়তা করছিল। আর মোতালেব হোসেন কুমিল্লার দাউদকান্দি থানাধীন একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ১৯৯৫ সাল থেকে একটি ওষুধ কোম্পানিতে প্রায় ২২ বছর চাকরি করে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে নিজস্ব ফার্মেসির ব্যবসা শুরু করে। সে গ্রেপ্তারকৃৃত কামরুল ইসলাম ওরফে রুবেলের সহযোগী হিসেবে ইয়াবা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ করত। সে নকল ইয়াবা প্রস্তুতের জন্য বিপুল সংখ্যক ব্যথানাশক জিনেক-৫০ ট্যাবলেট কামরুল ইসলামকে সরবরাহ করেছিল। প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মানবজমিন থেকে নেয়া


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ