বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫


নতুন শিক্ষা কারিকুলামে সাড়া জাগিয়েছে ‘বাগে-জান্নাত'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম

গত বৃহস্পতিবার মাদরাসা-ই বাগে জান্নাতের সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী চলবে এ পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে মাঠের কৃষক, নায়ের মাঝি, সরকারি কর্মচারী, এলাকার প্রবীণ মুরুব্বি।

তাদের সাথে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। আপাদমস্তক সাদা কাপড়ে আবৃত সবাই।মাথায় টুপি, কাঁধে রোমাল, কারও আবার মুখভর্তি দাড়ি। সারিবদ্ধ হয়ে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন। দেখে মনে হয়, এ যেন রাজধানীর বুকের নামকরা কোন কওমি মাদরাসা। কিন্তু না, এটা জিঞ্জিরার ‘বাগে-জান্নাত’। বয়স্কদের কোরআন শিক্ষার আসর। এ যেন দুনিয়ায় জান্নাতের উদাহারণ।

পৃথক পৃথক বিষয় বিন্যাস করে তাজবিদ, মাসআলা, আকাইদ, ফিকহ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে তাদের।এই পরীক্ষায় ফরজে আইন বিভাগে (১ম বর্ষ)এর  ২২০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। সবাই চুপচাপ এবং মনোযোগ সহকারে লিখে চলেছে প্রশ্ন উত্তর।

এই হলো জিঞ্জিরাবাগ-এর ‘বাগে জান্নাত’। আজকের বাগে জান্নাত আজ থেকে কয়েকবছর আগে, ২০১২ সালে একজন স্বপ্নচারী আলেমের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। কর্মজীবী এবং প্রাপ্ত বয়ংস্ক সাধারণ মানুষ যারা ইসলামি শিক্ষা বঞ্চিত, তাদের জন্য ‘বাগে জান্নাত’ নামক এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সকাল এবং রাতে ইসলামের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ে পাঠদান করা হয় তাদেরকে।৮ জন শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫’শ শিক্ষার্থী এখান থেকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। নতুন করে বাগে জান্নাতের অধীনে ‘আলিম-বিভাগ’ শুরু করা হয়েছে বলে জানায় বাগে জান্নাতের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি মাশহুদ ফরিদী।

তিনি বলেন, আমরা আলেম-ওলামা বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষদের কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করে থাকি. কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করি না। আমি অনুভব করেছিলাম সাধারণ মানুষদের কুরআন সহিহ শুদ্ধ করার ব্যপারে আমাদের মেহনত করা উচিৎ।

এজন্য, ৪৯ জন ছাত্র নিয়ে আমি এই প্রতিষ্ঠান শুরু করি, আলহামদুলিল্লাহ! আজ প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আছে বাগে জান্নাতে। এলাকাবাসীর আন্তরিকতা ও আগ্রহের তাগিদে আমরা নতুন করে আলিম বিভাগ শুরু করেছি। আলিম বিভাগের ছাত্ররা ৭ বছরে একাডেমিক পদ্ধতিতে  আলেম হতে পারবেন।

কেরাণীগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বাগে জান্নাতের শিক্ষার্থী আব্দুল মতিনের বয়স ৬৩ বছর। একজন কর্মঠ মানুষ। স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতভয়ী এক সৈনিক। তিনি  সহিহ শুদ্ধভাবে কুরআন শেখার জন্য বাগে জান্নাতে ভর্তি হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি যখন দেখলাম আমার প্রতিবেশীরা বাগে জান্নাতে ক্লাস করে সহিহ শুদ্ধভাবে কুরআন শরিফ তেলাওয়াত করছে, আমিও তখন বাগে জান্নাতে ভর্তি হই। এখন আমার কুরআন শুদ্ধ হয়েছে। নামাজ, রোজা ইত্যাদি বিষয়ের যাবতীয় মাসআলা মাসায়েল জানি। এমনকি আমি আমার আখলাক-চরিত্রেও উন্নতি অনুভব করছি।

এদিকে পরীক্ষার হল পরিদর্শনে এসেছেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক মাওলানা আতিকুর রহমান। তিনিও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ছাত্রদের দিকে। আওয়ার ইসলামের মুখোমুখি হয়ে বললেন,  আমি ‘বাগে জান্নাত’র ছাত্রদের দেখে অবাক হই, তারা কিভাবে আমাদের কওমি মাদরাসার ছাত্রদের মতো করে নিজেদেরকে গড়ে তুলেছে। কর্মজীবী মানুষের ইসলামি শিক্ষার এই আয়োজন দেশব্যাপী প্রতিটি জেলা-উপজেলায় পড়ুক। আমি সবসময় আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ