শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


মুনাফিকের কথা সুন্দর, ব্যবহার সুন্দর, হয়ত চেহারাও, কিন্তু চরিত্র?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম
অতিথি লেখক

শিরোনামটি খুব সাদামাটা। সাদাসিদা শিরোনাম হলেও এর অর্থ, ব্যাখ্যা, ক্ষেত্র, কর্ম ও দর্শন ব্যাপক। স্বল্প পরিসরে সবকথা বলার অবকাশ নেই। অন্তত আমি আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে যতটুকু জানি। ছোট ছোট দুটো উদাহরণ দিয়ে লেখাটি শুরু করতে চাই।

তেতুলিয়া থেকে অত্যন্ত ভদ্র বিনয়ী কমল কাজী চাকরি নিয়ে কক্সবাজার মৎস অফিসে সাধাারণ কর্মচারী হিসেবে যোগদান করলেন। কর্মচঞ্চল সুন্দর চেহারার কমল একটি মেসে থেকে চাকরি করে যাচ্ছিলেন। শহরের সাগরপাড়ের বিখ্যাত ফাইভ স্টার হোটেল সি প্যালেসে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন চাকমা মংথা উষা।

দুজন দুজনকে খুব ভালবাসেন। কমল উষাকে বলেছেন তেতুলিয়ার বড় জমিদার বাড়ির নাতি সে। তাদের রয়েছে শত শত বিঘা সম্পত্তি। বিয়ের পর সে তার দাদার জমিদার বাড়িতে নিয়ে যাবে। সুন্দর ব্যবহারের কমলকে পছন্দ হয় উষার বাবার। উষা মুসলমান হয়, বিয়ে হয়।

উষার বাবার চাকরির রিটায়ারম্যান্ট এর ৩০ লাখ টাকাও জমিদার জামাইর দেখানো এক মাল্টিপারপাস সমিতিতে ব্যবসায় খাটান। নও মুসলিম নব বধু উষার সংসার বেশিদিন এগুয় না। ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কমল অার তার বউকে তেতুলিয়ার জমিদার বাড়িতে নিয়ে যান না।

উষার সপ্ন খানখান হয়ে গেল। ওয়াদা দিয়েও কমল উষাকে তার বাড়ি নিলেন না। দেখলেন তার স্বামীর বাড়ি আসলে ভোলা। সে বলেছিল মৎস অফিসের কর্মকর্তা, আসলে সাধারণ কর্মচারী। তার বাবার দেয়া ৩০ লাখ টাকারও হিসেব নেই।আমানতের খেয়ানত শুধু নয়, রীতিমত ডাকাতি। আকাশ ভেঙ্গে পরে উষার মাথায়।

হোটেল কলিগের দেয়া একটি হাদিসের বই পড়ছিলেন মংথা উষা। এক জায়গায় চোখ আটকে যায়। রাসুল সা. এর হাদিস, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি, যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, ওয়াদা দিলে তা খেলাফ করে, আমানতের খেয়ানত করে’।

চোখ সরায় না উষা, ইসলামের নবির এত সুন্দর হাদিস। অথচ তার স্বামী কমল হাদিসের ঠিক উল্টো। এই বুঝি মুসলিম? কমলের সুন্দর ব্যবহার মিথ্যা ওয়াদা মিথ্যা কথা আমানতর খেয়ানত তার জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলল।

দু্ংখ শেয়ার করলে একদিন কলিগ বলল, ইসলাম মহান ধর্ম, কমলরা মুনাফিক এগুলো তাদের ব্যক্তিগত দোষ, ইসলামের নয়।

চুপ হয়ে যায় কলিগ হাসান। চোখ বন্ধ হয়ে আসে। সামনে ভেসে উঠে মধ্যপ্রাচ্চের বাদশাহ ও যুবরাজদের কাজ কারবার। মুসলমানদের আমানত ভেঙ্গে তারা লক্ষ-কোটি ডলারের সম্পদ বিদেশে পাচার ও লগ্নি করছে, হালের তরুণ ক্রেজ কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল স্বপ্ন দেখিয়ে এক যুবরাজ তলে তলে ইসরাইল সফর করে আসেন, হুথি বিদ্রোহ দমনের নামে ইয়েমেনের মত ইসলামের ঐতিহ্যবাহী দেশ ধ্বংস করেন, কাতারকে দমনের চেষ্টা করেন, সুন্দর কথা বলে সুন্দর চেহারা নিয়ে মিল্লাতে মুসলিমকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।

এত বড় বুনিয়াদি রাজ মুনাফিকদের জন্য আজ মুসলিম বিশ্ব বিপদের কবলে পতিত। তারা ওয়াদা খেলাফকারী, তারা অনেকেই মিথ্যাবাদী, তারা আমানতের খেয়ানতকারী। তারা অনেকেই ভণ্ড। থাইলেন্ড-সিংগাপুরের ক্যাসিনোগুলোতে তাদের লোকজনকে কেন দেখা যাবে? তাদের চরিত্র কেন এত অসুন্দর!

উষার ডাকে হাসানের অন্যমনষ্কতা থামে। ফিরে আাসে পুরনো কথায়। কী এমন ভাবছেন বলুনতো? না, কি বলব আর, কক্সবাজারের তোমার কমল, মধ্যপ্রাচ্চের রাজপুত কাকে ভরসা করব আমরা?

মুনাফিকে ছেয়ে গেছে মুসলিম বিশ্ব। নাফরমান হয়ে গেছে তারা, তারা কি ক্ষমা পাবে আল্লাহর কাছে? কুরান কি ববলছে দেখুন, সবাইকে অনুরোধ করব কুরানের সুরা মুনাফিকুন পড়তে।

‘(আসলে) তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো কিংবা না করো এ দুটোই তাদের জন্য সমান, কারণ আল্লাহ তায়ালা কখনই তাদের ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তায়লা কখনও কোন নাফরমান জাতিকে হেদায়াত দান করেন না। সুরা মুনাফিকুন, আয়াত নং ৬।

লেখকের আরও লেখা

চা দোকানের আড্ডায় ‘গীবত’ চিনির চেয়েও মিষ্টি

ঘুষের মধ্যে ভিটামিন আছে; ঘুষখোরের মাইরও আছে

দুর্নীতি চলছেই বাধাহীন গতিতে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ