শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


বরাবরই আমি গতানুগতিক ধারা এড়িয়ে চলেছি : মিরাজ রহমান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তরুণ লেখক ও মিডিয়াকর্মী মাওলানা মিরাজ রহমান। প্রিয় ডটকমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ ও দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ধর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

সম্প্রতি মিরাজ রহমান রচিত হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতা গ্রন্থটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

কেন তিনি এমন নতুন আঙ্গিকের নতুন একটি কাজ করলেন? কীভাবে শুরু হলো এবং কীভাবে শেষ? গ্রন্থটির সাতসতেরসহ ব্যক্তি মিরাজ রহমানের এই পথচলার নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান

আওয়ার ইসলাম : ৩৬০ পৃষ্ঠার ঢাউস সাইজের বই রচনার জন্মকথা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলুন।

মিরাজ রহমান : লেখালেখি-সাংবাদিকতার শুরু থেকেই ইন্টারভিউ বিষয়টা আমাকে খুব টানতো। আমার মনে হতো- ইন্টারভিউ করার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য অর্জন এবং নানান অভিজ্ঞতায় সিঞ্চিত জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব।

ইন্টারভিউ করাকে প্রধান্য দিতে গিয়ে ভাবলাম, গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে কিছু করি- একাধারে যা হবে ইন্টারভিউ এবং হয়ে উঠবে ভিন্ন স্বাদের কনটেন্ট।

আওয়ার ইসলাম : হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতা শিরোনামে গবেষণাধর্মী কোনো রচনায় না গিয়ে ইন্টারভিউভিত্তিক আয়োজন কেন করলেন?

মিরাজ রহমান : বরাবরই আমি গতানুগতিক ধারা এড়িয়ে চলেছি। আমি চেয়েছি নতুন আঙ্গিকে নতুন ধারার কিছু একটা করতে। কারণ একই কাজ সবাই যেভাবে করে, সেভাবে করা বা করতে পারার মাঝে কোনো কৃতিত্ব আছে বলে আমি মনে করি না। তাই হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথাকথার নতুন অবয়ব দেয়ার চেষ্টা করেছি।

এছাড়া একটি গবেষণা জরিপের ফলাফলে আমি দেখেছি, গতানুগতিক ধারায় রচিত গ্রন্থের তুলনায় ইন্টারভিউ পড়ার প্রতি পাঠকের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। কারণ একটি ইন্টারভিউয়ের মাঝে ব্যক্তি জীবনের সফলতার গল্পের পাশাপাশি বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার কথা যেমন উঠে আসে তেমনি ফুটে ওঠে নানামুখি দিক-নির্দেশনার কথাও।

মূলত এইসব কারণ বিবেচনায় রেখে আমি এই পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করেছি।

আওয়ার ইসলাম : বইটি তৈরি করতে গিয়ে কতদিন সময় লেগেছে?

মিরাজ রহমান : ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে এই আয়োজনের প্রথম ইন্টারভিউ করেছি। তখন হয়তো এমনভাবে গ্রন্থ করার আইডিয়া ছিল না, কিন্তু শুরুটা তো সেই তখন থেকেই। সে বিবেচনায় বইটি পাঠকের হাতে তুলে দিতে প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় লাগলো ।

আওয়ার ইসলাম : বইটির শুরুতে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মুহাম্মাদের একটি প্রবন্ধের বাংলা অনুবাদ যুক্ত করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারের সাথে এর যৌক্তিকতা কী?

মিরাজ রহমান : ড. মাহাথির মুহাম্মাদের প্রবন্ধটিতে আধুনিক যুগের আধুনিক শিল্পায়নের সাথে ইসলামের গভীর সম্পর্ককে সুক্ষ্ণভাবে চিহ্নিত করার মাইলফলক কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতি জানতে হলে ইসলাম ও শিল্পায়নের মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ে জানা থাকা জরুরি। একটি অপরটির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত।

আওয়ার ইসলাম : ইন্টারভিউদাতাদের অভিজ্ঞতাপূর্ণ আলোচনায় অর্থনীতির মতো গুরুগম্ভীর বিষয়টি কতটা আনতে পেরেছেন?

মিরাজ রহমান : অর্থনীতি আসলেই একটি গুরুগম্ভীর বিষয়। সাথে যুক্ত হয়েছে ইসলাম প্রদত্ত শরিয়াহ নীতিমালার মতো স্পর্শকাতর বিষয়। গুরুগম্ভীরের সাথে স্পর্শকাতরতা মিলিয়ে শতভাগ কঠিনপাঠ্য একটি বিষয়কে একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী বা অর্থনীতিবোদ্ধার মুখ থেকে সহজ ভাষায় বাস্তবতার আলোকে তুলে আনার শতভাগ চেষ্ঠা করেছি। কতটুকু পেরেছি এই বিচার পাঠক বিচারে ছেড়ে দিলাম…

আওয়ার ইসলাম :  এ বইয়ে পাঠক মূলত কী খোরাক পাবে?

মিরাজ রহমান : গ্রন্থটিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ৪৫টি সেক্টরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ৪৮ জন সফল ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার এবং ইসলামী অর্থনীতিবিদ ও শরিয়াহ বিশেষজ্ঞসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বেশ কয়েকজন সফল ব্যবসায়ী ও শরিয়াহ স্কলারের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার সঙ্কলিত হয়েছে।

সাক্ষাৎকারগুলোতে প্রতিটি সেক্টরে ব্যবসা পরিচালনা করার পথ ও পদ্ধতি এবং সমস্যা ও সম্ভাবনার বাস্তব অভিজ্ঞতাপূর্ণ দিক-নির্দেশনমূলক কথাগুলো উঠে এসেছে এবং বিভিন্ন ব্যবসা সেক্টরে বাস্তবতার আলোকে ব্যবসা পরিচালনার পথ ও পদ্ধতি আলোচনা করার পাশাপাশি কোরআন-হাদিসের আলোকে সেই সেক্টরে হালালভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার দিক-নির্দেশনাও বর্ণনা করা হয়েছে।

মোটকথা- বিভিন্ন সেক্টরে হালালভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কোরআন-হাদিসভিত্তিক দিক-নির্দেশনায় ভরপুর গ্রন্থটির প্রতিটি পাতা।

৪৮জন সফল ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার এবং ইসলামী অর্থনীতিবিদ ও শরিয়াহ বিশেষজ্ঞের ব্যক্তি জীবন ও ব্যবসায়িক জীবনের সফলতার গল্পও বিবৃত হয়েছে।

কোন ব্যবসায়ী কীভাবে কোন সেক্টরে ব্যবসা পরিচালনা করে সফল হয়েছেন, তারা কখন কোন ব্যবসায় কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং কীভাবে সে সমস্যা সমাধান করে সামনে এগিয়েছেন -বিষয়গুলো বিবৃত হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতি বিষয়টি নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
মিরাজ রহমান : স্বপ্নের কথা বলে দিলে সেটা নাকি আর স্বপ্ন থাকে না। স্বপ্নটা স্বপ্নই থাকুক…

আওয়ার ইসলাম : এ পর্যন্ত মোট কয়টা বই করেছেন এবং কোনটাকে সেরা বা শীর্ষ তালিকায় রাখবেন?

মিরাজ রহমান : এসো কলম মেরামত করি (সংকলিত), ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলীগ জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরব্বি ছিলেন যারা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন (ফিলিস্তিনি গল্প সংকলন) এবং হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ মোট ৬টি গ্রন্থ রচনার কাজ আল্লাহ মহান আমার মাধ্যমে করিয়েছেন।

কোনোটাকেই সেরা বলতে চাই না। কারণ এগুলোকে সেরা বললে ভবিষ্যতে এর চেয়ে সেরা বা ভালো কাজ আর করা সম্ভব হবে না। কাজ করা তো কেবল শুরু হলো, এখনই সেরা খোঁজার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। মানুষের জীবনে সেরা কাজ একটিই থাকে বা হয়। আমার জীবনের সেরা কাজটি করার প্লাটফর্ম তৈরি করছি…

আওয়ার ইসলাম : হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতা বইটিতে কওমি ধারার কোনো শীর্ষ আলেম নেই। কারণ কী?

মিরাজ রহমান : কওমি ধারার কোনো আলেম নেই বলা যাবে না। ভালো মানের বেশ কয়েকজন কওমি আলেমেদ্বীনের ইন্টারভিউ সন্নিবেশিত করেছি।

কওমি ধারার শীর্ষ আলেমদের মধ্য থেকে যে কয়জন আলেমেদ্বীন ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যবসানীতি বিষয়ক জ্ঞান রাখেন বা অভিজ্ঞ তাদের বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্ঠা করে আমি ব্যর্থ হয়েছি। আগামী খণ্ডগুলোতে কওমি ধারার শীর্ষ আলেমেদ্বীনদের সংযুক্ত করার আরো চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।

আওয়ার ইসলাম : আপনার লেখালেখির শুরুটা কীভাবে? কোন বিষয় নিয়ে লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

মিরাজ রহমান : আমি মূলত শিল্পসমালোচনাধর্মী লেখালেখি করতে গিয়ে সাংবাদিকতার এই জগতে প্রবেশ করেছি। এরপর ভাবলাম, লেখালেখিই যখন করছি তখন এমন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করি যা হবে আমার ইহকাল ও পরকালের পাথেয়।

এভাবে ধর্মীয় অঙ্গনের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লেখালেখি শুরু হয় এবং চলছে আজ অবধি…। লেখালেখি-সাংবাদিকতায় আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয় হলো সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা।

আওয়ার ইসলাম : জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য কোন বিষয়টিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?
মিরাজ রহমান : কাজ, কাজ এবং কাজ করে যাওয়া। একটি গল্প বলে বিষয়টি পরিস্কার করি।

একদিন ক্লাসে একজন শিক্ষক ব্লাকবোর্ডে চক দিয়ে একটি একফুট দাগ টানলেন এবং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কী কেউ আছো, যে না মুছে এই দাগটিকে ছোট করতে পারবে?’ কেউ কোনো সাড়া শব্দ করলো না। কিছুক্ষণ পর একজন শিক্ষর্থী হাত তুলে বললো, ‘স্যার এই একফুটের দাগটির ওপর এরচেয়ে বড় সাইজের একটি দাগ টানলেই অটোমেটিকলি এটি ছোট হয়ে যাবে।’

শিক্ষার্থী কথাটিকে সত্য বলে শিক্ষক বললেন, ‘জীবনে বড় হতে চাই অন্যকে ছোট করার মানসিকতা লালন করার দরকার নেই। নিজেকে নিজে বড় বানানোর চেষ্ঠা-সাধনায় নিয়োজিত থাকো।

অটোমেটিকলি তুমি বড় বা সফল হয়ে যাবে। আর তুমি সফল হলে অন্যকে ছোট বানানোর প্রয়োজন হবে না। অটোমেটিকলি সে ছোট হয়ে যাবে।’ এই দর্শনটি আমার জীবনের অন্যতম সূত্র।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ