শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


রোহিঙ্গাদের সেবায় আলেমদের অবদান ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম
অতিথি লেখক

মুফতি ইউসুফ মাহমুদী।ঢাকাস্থ মুগদা ঝিলপার মসজিদ তারপর বায়তুল ওয়াদুদ মসজিদের খতিব ছিলেন।বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জ মসজিদের খতিব। রোহিঙ্গাদের সেবায় তার ঘামঝরা পরিশ্রম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।

বর্মী সেনা ও বৌদ্ধ মিলিশিয়া কর্তৃক দুনিয়ার ইতিহাসের জঘন্যতম ও বর্বরতম মুসলিম নর নারী হত্যা শুরু হলে লাখে লাখে শরণার্থী বাংলাদেশে আসা শুরু করে।

প্রথম দিকে আমাদের অকোতভয় দেশপ্রেমিক বিজিবি শরণার্থী স্রোত ঠেকাবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু হতবিহবল, নিঃস, হতাহত রোহিঙ্গার ভয়াবহ স্রোত আর ঠেকানো যায়নি। এদের বাধা দিলে এরা বার্মা যাচ্ছিল না গুলি খেয়ে মরার ভয়ে, নদিতেও থাকতে পারছিল না ডুবে মরার ভয়ে।

শরণার্থীর সংখ্যা যখন লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, এদের পাশে তখন দাঁড়াবার কেউ ছিল না। কোন রাজনৈতিক
দলকেই প্রথম প্রথম এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। সবার আগে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিল  তুরষ্ক সরকার।

তুরষ্ক সরকারের এই সহযোগিতা নিয়ে এটিএন-এর মুন্নী সাহাকে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। তারপর ক্রমান্বয়ে ইন্দোনিশিয়া ও মালয়শিয়ার প্রতিনিধিরা আসেন। তারপর জাতিসংঘসহ নানাহ দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

কিন্তু চরম বিপদ মুহূর্তে সর্বপ্রথম যারা বিতারিত অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান তারা হচ্ছেন এদেশের আলেম-ওলামা সমাজ।

মুফতি ইউসুফ মাহমুদের কথা বলছিলাম। গত প্রায় ২ মাস ধরে তিনি পড়ে আছন রোহিঙ্গাদের নিয়ে।বৃহষ্পতিবার রাতে উখিয়া থেকে ঢাকা আসেন জুমা পড়াতে। জুমা পড়িয়ে আবার কিছু ত্রাণ-রসদ (তার নামাজের মুসুল্লিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে) নিয়ে শনিবারেই চলে যান উখিয়ায়।

তিনি সেখানে পাগলের মতই সেবা দিয় যাচ্ছেন। মুফতি মাহমুদী একটি উদাহরণ মাত্র। পঞ্চগড় তেতুলিয়া থেকে শুরু করে সিলেট-হবিগঞ্জ, যশোর -খুলনা থেকে বরিশাল ভোলা, কুমিল্লা নোয়াখালী চট্রগ্রাম কক্সবাজারসহ সারা বাংলাদেশের লাখ মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মাদরাসার মুহতামিম-মুদারিস, মসজিদ কমিটির লোকজন, আলেম'ওলামা, তালেবে এলেমসহ সকল মোল্লা-মৌলোভী হুজুরগণ অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান।

নগদ টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপর, খাদ্য যা কিছু সম্ভব আলেম-ওলামারা নিয়ে গিয়ে হাজির হয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

চরমোনাইয়ের পীর সাহেব, লালবাগ মাদরাসা, রাহমানিয়া মাদরাসা, মীরপুর মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর মাদরাসা, ধামতী মাদরাসা, শর্শিনা মাদরাসা, উজানী মাদরাসাসহ সারা দেশের মাদরাসাগুলো থেকে তাদের উদ্যোগে তাদের ভক্ত ও মুসুল্লিদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন, সংস্থা যথাসাধ্য আরাকান থেকে বিতারিত মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে গেছে। প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের পাশে টুপি-দাড়িওয়ালা হুজুরদের ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি।

হুজুরদের এই তৎপরতা মুসলিমবিদ্বেশী এনজিওদের ভাল লাগেনি। তারা কিছুটা অপপ্রচার করেছে এবং বিরোধিতা করেছে বলে হুজুরদের ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা যায়।

হুজুর দেখলেই চেক করা, নির্ধারিত সময়ের পর ক্যাম্পে না থাকতে দেয়া, ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ না করাসহ নানা রকম বাধা এসেছে, যদিও অন্যদের বেলায় সেরূপ কড়াকড়ি ছিল না বলে জানা যায়।

সদাসয় সরকার অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথে রোহিঙ্গা ইসুটি হ্যান্ডল করে যাচ্ছে বিধায় অাজ অবধি কোন অঘটন ঘটেনি। এজন্যই আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থাকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত।

একজন মুফতি ইউসুফ মাহমুদী, একজন মামুনুল হক, একজন ইমতিয়াজ উদ্দীন সাব্বির, একজন কারী আনাস, একজন চরমোনাইয়ের পীর, একজন তাবলীগি, আলাদা আলাদাভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, কিন্তু একত্রে বিশাল এক সহযোগিতা।

আলেম-ওলামাদের এই সহযোগিতার বিষয়টি ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করে রাখা উচিত। কারণ তাদের অবদানের কথা কেউ বলে না মনেও রাখে না। আর এই কাজটি আওয়ার ইসলাম শুরু করতে পারে। কারণ আমাদের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া হুজুরদের কোন কাজকেই গুরুত্ব দিতে চায় না তাই প্রচারও করে না।

জাতিসংঘের ৪৫ কোটি ডলারসহ অনেক বিদেশী সাহায্য এখন আসবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ বিপদের দিনগুলোতে (যদিও বিপদ এখনও কাটেনি) হুজুরদের অবদানের তুলনা হবে না।

একটি আশ্চর্য বিষয় না বলে পারা যায় না। যারা নিজেদের আশেকে রাসুল বলে দাবি করেন, রাসুল সা. এর উম্মতের এই কঠিন সময়ে তারা কোথায়?

বাংলাদেশের অনেক দরবার শরীফের নাম আমরা জানি। মানুষের দুজাহানের জিম্মাদারী যারা নিতে পারেন তারা কি ভূমিকা পালন করছেন তা খুব জানতে ইচ্ছে করে। তাদের মুরিদেরা তাদের পীর সাহেবদের এ প্রশ্নটি করে দেখতে পারেন।

ইউসুফ মাহমুদীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাতদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পড়ে থেকে কষ্ট করবেন কিছুদিন পর ইতিহাস উল্টে যাবে। বলা হবে হুজুরদের কোন কাজে পাওয়া যায় না তা তো হতে পারে না।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে বার্মার বিতারিত মুসলিম ভাইদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা লিপিবদ্ধ করার কাজ আজই শুরু হোক। এ কাজে সাধ্যমতো সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

লেখকের আরও লেখা

মাস্তানতন্ত্র জিন্দাবাদ, নিয়মনীতি মুরদাবাদ-১

মাস্তানতন্ত্র জিন্দাবাদ, নিয়মনীতি মুরদাবাদ-২

আরাকান নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবনা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ