বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


‘নিজ দেশে হিফজ শেষ করা হলো না সাইদুলের’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ
উখিয়া, কক্সবাজার থেকে

সকাল দশ'টা। আমরা তখন উখিয়ার কুতুপালং বাজারে নামলাম। সাথে জাফলংয়ের তরুণ আলেম শাহ আলম সাইফ। বাজারে নামতেই চোখে পড়ল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাঁবু-ত্রিপল টানানো ঘর। সেখানে নেমে কিছুক্ষণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলাম। সাথে ছিল নগদ অর্থ। কিছু মানুষ আড় চোখে দেখছিল আমাদের গতিবিধি। আমরা খুব বেশি না হলেও সামান্য ভয় পাচ্ছিলাম। এদিক ওদিক হেঁটে দেখছিলাম ওদের মানবেতর বিপন্ন জীবন ব্যবস্থা।

আমরা যখন রোহিঙ্গাদের খবরাখবর নিচ্ছিলাম, তখন খেয়াল করলাম একটা ছেলে আমাদের ফলো করছে। বয়স আনুমানিক ১২ হবে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আমাদের অনুসরণ করল।

আমরা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের দিকে যাচ্ছিলাম। ছেলেটা এ সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়াল। একেবারেই গা ঘেঁষে। বলল, হুজুর দু'দিন হয়েছে এসেছি, তবে ঠিকমত খাবার পাচ্ছি না। একটু আসবেন আমার মা বাবার কাছে।

প্রথম দেখায় ছেলেটিকে রোহিঙ্গা মনে হয়নি। ভেবছিলাম স্থানীয় বাসিন্দা হবে। আমাদের সাথে থাকা পটিয়া মাদরাসার দাওরা হাদিসের ছাত্র হাফেজ আতিক (ছদ্মনাম) তার সত্যতা আমাদের জানালেন। কেননা তিনিও রোহিঙ্গা। ৭ বছর যাবত চিটাগাং আছেন।

ছোট ছেলেটাকে কাছে টেনে বললাম, কী নাম তোমার? কবে এসেছো?
সাইদুল হক, দুদিন হয়েছে।
কোথায় থাকো?
অই যে রাস্তার ধারে বসে আছে আমার বাবা মা। এখানেই আমরা থাকি। বৃষ্টিতে ভিজে অনাহারে কাটছে আমাদের দিন।

তুমি কি পড়াশোনা করতে?
জি। আমি হাফেজি মাদরাসায় পড়তাম।
তাই নাকি?
জি। আমি ২৭ পারা মুখস্থ করেছি।
মুখস্থ আছে সব?
জি।
পড় এক জায়গা থেকে।

তার পর সে আমাদের কোর আন থেকে সামান্য পড়ে শোনালো। অবাক চাহনিতে মুগ্ধ হয়ে গেলাম তার তেলাওয়াত শুনে।

জানতে চাইলাম, এদেশে আসার পেছনের গল্প।

সে আমাদের বলল এভাবেই- আমি জামেয়া ইসলামিয়ায় পড়তাম। সেটা আকিয়াবের মিয়াঁজানপুরে অবস্থিত।
তখন আমরা পড়ছিলাম। হঠাৎ উস্তাদজি আমাদের বললেন, বাড়ি চলে যাও। এক সপ্তাহের জন্য তোমাদের ছুটি। পাশের গ্রামে সমস্যা হচ্ছে।

আমরা দ্রুত কাপড় গুছিয়ে বাড়ি চলে যাই। এক সপ্তাহ পর মাদরাসায় গেলাম। ক্লাস চলছে। তিনদিন পর বড়হুজুর বলল- তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হও। আমাদের গ্রামে মিলিটারিরা হামলা করছে। আগুন জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দিচ্ছে সব।

আমরা দ্রুত মাদরাসা ছেড়ে বাড়ি চলে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার চাচা চাচিদের গুলি করে মেরে ফেলেছে।

আব্বা দ্রুত আমাদের নিয়ে সীমানা মুখে চলতে লাগলেন। সাথে আমার চাচাতো ভাই বোনেরাও আসলো। ওদের দেখিয়ে- ওই যে ওরা আমার চাচাতো ভাই বোন। ওদের আমরা ছাড়া কেউ নেই। আব্বার শরীরটাও ভালো না। কি করব জানি না।

মাদরাসায় পড়বে? আমি বললাম।
জী আমারে পড়াবেন?

হ্যাঁ তোমার ব্যবস্থা আমরা করব।
শোনে ছেলেটা দারুণ খুশি।মুখে একগাদা হাসির ফোয়ারা বেরুলো এমন নিদারুণ কষ্টেও। তবে সাইদুলের পরিচয় সে একজন রোহিঙ্গা। তাই তার জন্য হিফজ শেষ করা, আবারও মাদরাসায় ভর্তি হওয়া একটু নয় অনেক আশঙ্কার।

আমরা কিছু টাকা দিয়ে চলে এলাম এবং ভাবতে লাগলাম এই প্রতিভা নষ্ট করতে দেয়া যায় না...

শুনুন সাইদুল হকের কুরআন তেলাওয়াত

https://www.facebook.com/saif04riyad/videos/1548182491938964/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ