শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ঈদ আনন্দের ভাগ যেন তারাও পায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জোবায়ের আহমদ ফাহিম : ঈদ। ঘরে ঘরে আনন্দের উৎসব। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারের ঈদ উৎসব নয়। এবারের ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে দেশের বন্যার্তদের দুঃসহ অবস্থা ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের করুণ পরিস্থিতির জন্য। বন্যার্তদের বর্ণনা শুনলে গাঁ শিউরে উঠে। নিজের সাজানো বাড়ি-ঘর চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের কাছে তিনবেলা খাবার ও মাথা গুজার একটু জায়গাই যেন ঈদ আনন্দ। দুঃজনক হলেও তারা এ থেকে বঞ্চিত।

বন্যাদুর্গত বৃদ্ধা মহিরুন্নেসা বলেন, ‘খাবার নাই, ঘরবাড়ি নাই, ঈদ করমো কেমন করি?’ সে এ কথাগুলো বলার সময়, তাঁর পাশে আরও অনেক মানুষের ভিড় জমে। ঈদ প্রসঙ্গে কথা তুলতেই চারদিক থেকে তাঁরা সীমাহীন কষ্টের কথা বলতে থাকেন। হাসেম আলী নামের এক বৃদ্ধ বলছিলেন, ‘গেল বছর আমার বড় ছেলে কোরবানি দিছিল। এবার পাইরবার নয়। হামার ছয়টা ঘর এলাও মাটিত পড়ি আছে। সেইল্যা ঠিক করবে না কোরবানি দেবে?’

দেশের এবারের বন্যায় ৩২টি জেলায় ৮০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে সরকারি হিসেবে বলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছেন ১৪৪ জন এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৭ লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি।

এ পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যহত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মুসলিমরা। পৈশাচিক নির্যাতনের স্বীকার তারা। নিজ দেশে তাদের একটুখানি জায়গা হলো না। উদ্বাস্তের মতো ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের উল্লাস করে নির্মমভাবে মারছে। নাফ নদী পেরিয়ে এখন তারা আমাদের দেশের শরণার্থী শিবিরে দিনাতিপাত করছেন।

তাদের চোখে-মুখে নির্যাতনের ছাপ। ঈদ আনন্দের লেশমাত্র তাদের মাঝে নেই। স্বজনহারা এ লোকগুলো নির্বাক। জন্মই যেন তাদের আমৃত্যু অপরাধ। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে হত্যার পর তাদের অনেকে পালিয়ে ৭টি দেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশটির সঙ্গে সীমান্ত থাকায় জাতিসংঘের নিবন্ধন অনুসারে অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরো বেশি।

গত ৩ বছরে অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানকে ঘর বাড়ি ছাড়া করেছে মিয়ানমার সরকার। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত করে রাষ্ট্রবিহীন এক নিরাশ্রয়ী জাতিতে পরিণত করেছে দেশটি। এদের অনেকে এক কাপড়ে নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা গেছে। বাংলাদেশে যারা এখন পালিয়ে আসছে তাদের সিংহভাগ নারী। এসব নারীরা জানাচ্ছেন, তরুণদের দেখা মাত্রই গুলি করে হত্যা করছে মিয়ানমারের সেনারা। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় বাংলাদেশের হাসপাতালে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

ঈদ উৎসবে রাসূল সা. এর নীতি কত সুন্দর ছিল ! তিনি ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যেতেন মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়ে। আর কোরবানির ঈদে কিছুই খেতেন না। বরং কোরবানির পশুর গোশত দিয়ে প্রথম আহার করতেন। এর পিছনে রয়েছে নিগূঢ় রহস্য। কারণ হলো ঈদুল ফিতরের দিন গরীবের জন্য সকালেই সদকায়ে ফিতর আদায় করা হয়। আর ঈদুল আজহার দিন পশু কোরবানি করে গোশত গরীবদের মাঝে ভাগাভাগি করে দিয়ে তারপর মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ সা. খেতেন।

তাই আমাদের জন্যও কর্তব্য হলো, কোরবানির পশুর গোশতে বন্যার্ত ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট অংশ রাখা। এটাই তো ইসলামের সুমহান শিক্ষা। পৃথিবীর সকল মুললিম এক দেহের ন্যায়। যার এক অংশ আঘাত প্রাপ্ত হলে তার সারা শরীর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তেমনি এক মুসলিম আঘাতপ্রাপ্ত হলে সকল মুসলিম আঘাতপ্রাপ্ত হলো। সুতরাং বন্যার্ত ও রোহিঙ্গা মুসলিম অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। আর আমরা আয়েম করে কোরবানির পশুর গোশত খাবো ; এটা সামাজিক, মানবিক ও ইসলামের দিক দিয়ে অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার।

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ