শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


যে ঘটনা আপনাকে নিশ্চিত সাহস যোগাবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাবিবুর রহমান মিছবাহ
প্রিন্সিপাল মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা

ছেলেটির শিক্ষা জীবনেও ছিলো ত্যাগ আর কষ্ট। শিক্ষা জীবন শেষে কর্মের তাগিদে ছুটে আসে রাজধানীতে। শুনেছে ঢাকায় নাকি টাকা ওড়ে। কিন্তু বাস্তবতা তাকে কাঁদিয়েছে। দিয়েছে দু:সহ যন্ত্রণা। কেউ জায়গা দিতে চায় না। মূল্যায়ন তো নেই-ই।

প্রথম সাক্ষাতে বন্ধুরা বুকে টেনে নিলেও যদি জানতে পারে তাদের কাছে আশ্রয় নিতে এসেছে, তাহলে তারাও পালিয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ছেলেটি একবার ছুটে গিয়েছিলো এক বন্ধুর কাছে। তারা ঘনিষ্ঠ ক্লাসমেটও ছিলো। ভেবেছিলো বন্ধুর কাছে থেকে একটি চাকরী খুঁজে নিবে। কল্পনাও করেনি অন্তত এ বন্ধুটি তাকে তাড়িয়ে দিবে। বন্ধুটি একটি মসজিদের ইমাম। প্রথম রাত পার হলো দুই বন্ধুর মধুর আলাপচারিতায়। কিন্তু বন্ধুর চেহারায় বিরক্তির ছাঁপ লক্ষ্য করলো ছেলেটি। বাদ ফজর বন্ধু বললো, দোস্ত! আমি তোমাকে রাখতে চাইলেও মসজিদ কমিটি অনুমতি দিচ্ছে না। ছেলেটির বুঝতে বাকী রইলো না কমিটির অযুহাতে বন্ধু তাকে তাড়িয়ে দিতে চায়। গিয়েছিলো আপন ভাইর কাছে। কিন্তু সেখান থেকে যে দু:খ পেয়ে ফিরে এসেছিলো ছেলেটি, তা বর্ণনার ভাষা তৈরী হয়নি পৃথিবীতে। এবার ছেলেটি বুঝতে পারে ঢাকা নামক এ অচিনপুরে মানবতা ও সহানুভূতি বলতে কিচ্ছু নেই। এখানে টাকা না থাকলে কেউ কাউকে চিনে না। এমনকি আপন ভাইও না।

শক্তমনে শপথ নেয় ছেলেটি। নিজের ক্যারিয়ার নিজেই গড়বে। ছুটে চললো ঢাকার এক গলি হতে অন্য গলিতে। ক্ষুধার্ত শরীরে সারাদিন শেষে কোনো এক মসজিদের বারান্দায় ক্লান্ত বদনটা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল থেকে শুরু হয় আবার পথচলা। ওদিকে সদ্য বিবাহিতা প্রিয়তমা স্ত্রীও চাইছে স্বামীর এ দুর্দিনে তার পাশে থাকবে। খেয়ে থাকুক আর না খেয়ে থাকুক, দু'জন থাকবে একসাথে, এক জায়গায়। ভাগাভাগি করবেন সুখ-দু:খ। ছোট্ট একটি মেস ভাড়া করলো ছেলেটি। টাকার অভাবে ফ্যামিলি বাসা ভাড়া নেবার তৌফিক হয়নি তার। কিন্তু সেখানে কোনো পর্দানশীন নারী না পারবে রান্না করতে আর না পারবে অযু ইস্তেঞ্জা করতে। যেহেতু সেটি মেস। স্ত্রীর কাছে জমা থাকা সামান্য কিছু টাকা দিয়ে দুই কেজি চাল ও কিছু সবজি কিনে নিজেই রান্না করে ছেলেটি।

অনেকদিন পর ভাত খেতে পেরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে তারা। এভাবে চলতে থাকে কিছুদিন। এক বেলা খেয়ে আর দু'বেলা না খেয়ে চলছিলো তাদের সংসার। কখনো পেট ভরে খেতে পারেনি তারা। আল্লাহভীতি থেকে স্ত্রীকে কখনো বেপর্দা হতে দেয়নি ছেলেটি। একটি প্লাস্টিকের গামলায় স্ত্রী ইস্তিঞ্জার হাজত পূরণ করতো আর ছেলেটি রাতে তা পরিস্কার করতো। গোসল অযু এভাবেই করাতো স্ত্রীকে। যাতে মানুষ মনে করে ঘরে কেউ নেই, তাই দরজার বাহির হতে তালা লাগিয়ে ছেলেটি চাকরীর সন্ধানে বেড়িয়ে পড়তো। এদিক সেদিক কতো বন্ধুবান্ধবের কাছে যায়! নাহ কোনো কুল-কিনারা হচ্ছে না। আজ বাসায় কিচ্ছু নেই। না খেয়ে থাকতে হবে দু'জনকেই।

গভীর রাত। ছেলেটি বাসায় ফিরলো। আস্তে করে তালাটি খুললো। দেখলো, প্রিয়তমা স্ত্রী আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছে হালাল রুজির। ছেলেটিও শরীক হলো মুনাজাতে। স্ত্রী কাতরকণ্ঠে ছেলেটিকে বললো, ওগো! ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। ছেলেটি সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লো কিছু না ভেবেই। হঠাৎ রাস্তায় দেখা মিললো এক বাল্য বন্ধুর। আরে দোস্ত তুই? প্রশ্ন করলো বাল্য বন্ধুটি। ছেলেটি একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সব খুলে বললো বন্ধুকে। বন্ধুটি রিক্সা চালায়। ছেলেটি হালাল জীবিকা নির্বাহে রিক্সা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বাল্যবন্ধুর সহায়তায় লজ্জায় মুখে কাপড় বেঁধে কিছুদিন রিক্সা চালিয়েছিলো।

হঠাৎ একদিন তার গুণাবলী প্রমাণের সুযোগ মিললো ছেলেটির। নিজেকে প্রমাণ করার সে সুযোগ হাতছাড়া করেনি সেদিন। আজ সে বিশাল সম্মানী এক মানুষ। সবাই তাকে সম্মান করে। চারিদিকে নাম ডাক। আজ তার কতো বন্ধু-বান্ধব! কিন্তু সে আজকের ভোগের দিনে সেই ত্যাগের কথা ভুলে যায়নি। নিজেকে হারিয়ে ফেলেনি সেই বন্ধুদের কাতারে। ঐ বন্ধুদের মতো অসহায়দের তাড়িয়ে দেয় না সে। সবাইকে নসিহত করে নিজের ক্যারিয়ার নিজেই গড়ো। শক্তমনে শপথ করো। বিপদে ভেঙ্গে পড়বে না। হবে না হতাশ...

লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ