শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


২৫ মে বাহাসের অনুমতি প্রদানে আল্লামা মাহমুদুল হাসানের শর্ত এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : আসন্ন ২৫ মে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ অনুষ্ঠিতব্য মিলাদ কিয়াম বিষয়ক বাহাস অনুষ্ঠানের অনুমতি মিলেছে যাত্রাবাড়ী মাদরাসায়।

এ ব্যাপারে মাদরাসার মহাপরিচালক মহিহুস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, মূলত কে বা কারা কি কারণে এমন একটি বিষয়ে আমার প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। অবশ্য লোক মাধ্যমে জানতে পারলাম মাওলানা এনায়েতউল্লাহ আব্বাসীর পক্ষ থেকে আমার প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু ঠিক কি কারণে, কিসের উপর ভিত্তি করে আমাকে অবগত না করেই এমন প্রস্তাব তা আমার জানা নেই। আমি তাকে চিনি না এবং সে এ বিষয়ে সরাসরি এ পর্যন্ত আমার সাথে যোগাযোগও করে নি। অবশ্য আজ সকালে তার পক্ষ থেকে কিছু লোক এসেছিল। আমি তাদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি যে, আপনারা কিভাবে আমার সাথে যোগাযোগ না করেই আমার প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেন? আমি আব্বাসী সাহেবকে চিনি না জানি না সে আমার সাথে কথা না বলে বাহাস যাত্রাবাড়ী হওয়ার কথা কিভাবে ঘোষণা দিল? তার কি উচিত ছিলো না আমার সাথে কথা বলার?

যাই হোক ঠিক আছে বাহাস হোক আমি অনুমতি দিলাম। শর্ত হচ্ছে এটা পাবলিক বাহাস নয়, কিছু আলেম ওলামাদের পরস্পর ইলমী আলোচনা বৈঠক। উভয়পক্ষের বিচারক মুবাহিসগণ এবং তাদের সহযোগিতার জন্য আরো দশজন করে বিশজন ছাড়া অন্য কোন লোক মাদ্রাসায় ঢুকতে পারবে না। কোন ভক্ত সমর্থক এসে হইচই করতে পারবে না। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে দলিল প্রমাণ নিয়ে কথা হবে, ব্যাস। এর ব্যতিক্রম হলে আমি অনুমতি দিব না। প্রসাশনিক নিরাপত্তার বিষয়েও কোন কথার প্রয়োজন নেই। কারণ এটা ইলমি আলোচনার বৈঠক। প্রয়োজনে আমি দেখব। আপনারাই প্রস্তাব দিয়েছেন যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় স্থান হওয়ার। আমি উপরোক্ত কন্ডিশনে অনুমতি দিলাম। আপনারা ২৫ তারিখ আসুন, তারাও আসবে। আব্বাসী সাহেবের পক্ষের লোকজনআমার কথা মেনে নিয়ে বিদায় নেন।

বাহাস এড়াতে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর নতুন কৌশল

অবশেষে বাহাস হচ্ছে যাত্রাবাড়ী মাদরাসায়

আমাদের প্রতিনিধি হুজুর থেকে জানতে চাইলে হুজুর আরো বলেন, প্রচলিত মিলাদ কিয়াম নিয়ে ইলমী মুযাকারার ব্যাপারে আমার সাথে সর্বপ্রথম যোগাযোগ করেন আমার অত্যন্ত আস্থাভাজন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ (শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক)। তিনি আমাকে জানান,আব্বাসী সাহেব এবং আমাদের উলামায়ে কেরাম আপনার মাদরাসায় ২৫ মে বসে ইলমী মুযাকারা করার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমার মাদরাসায় কেন? তখন মুফতি সাহেব বলেন, আব্বাসী সাহেবের পক্ষ থেকে আপনার মাদরাসার প্রস্তাব করা হলে আমাদের পক্ষের লোকজন তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে। আমি মুফতি সাহেবের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ইলমী মুযাকারার জন্য মৌখিক সম্মতি প্রদান করি।

এ ব্যাপারে মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উভয়পক্ষের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে মূলত বাহাস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ইসলামিক ফাউন্ডেশ মিলনায়তনে। যদিও ভুলক্রমে স্ট্যাম্পে স্থানের নাম উল্লেখ করা হয় নি। কিন্তু গত ০৯ মে বাহাস পূর্ব ৩য় বৈঠকে হঠাৎ আব্বাসী সাহেবের পক্ষের লোকজন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মিলনায়তনে না হলেও প্রয়োজনে যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় হবে মর্মে প্রস্তাব করেন। আমাদের লোকজন আমাকে বিষয়টা জানালে কেমন যেন রহস্যময় মনে হলো।

এদিকে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উভয়পক্ষ ফাউন্ডেশনে যৌথভাবে দরখাস্ত দাখিল করে অনুমতি প্রার্থনা করে। কিন্তু ফাউন্ডেশন অনুমতি দেয় নি। কারণ হিসেবে ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে দুটি বিষয় মৌলিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি কারণ হল, আব্বাসী সাহেবের পক্ষ থেকে গোপনভাবে তারই সংগঠন তাহরিকে খাতমে নাবুয়্যাত এর ব্যানারে একই সময়ে একই স্থানে ভিন্ন বিষয়ে আর একটি দরখাস্ত পেশ করে। ফলে ফাউন্ডেশন অনুমতি দিতে অপারগতা জানায়। দরখাস্তটির মূল কপির ছবি সাংবাদিক ভাইদের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে। যা আপনারা সবাই দেখেছেন। আমি অবাক হয়েছি এবং খুবই মর্মাহত হয়েছি। আমাদের লোকদের অগোচরে অতিগোপনে এধরনের কাজ কি কারনে, কি উদ্দেশ্যে আল্লাহ ভাল জানেন ! আর একটি কারন হল, সরকার এই সময়ে বিতর্কিত বিষয়ে ফাউন্ডেশনের অনুমতি দিতে নারাজ।

যাই হোক ফাউন্ডেশনের অনুমতি না মিলায় তাৎক্ষণিক উভয়পক্ষের লোকজনের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, পূর্ব থেকেই বিকল্প স্থান হিসেবে যাত্রাবাড়ী মাদরাসার কথা আলোচিত হয়ে আসছে। তাই আমরা হযরতের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব। এজন্য মাওলানা এনায়েতউল্লাহ আব্বাসীকে যাত্রাবাড়ী হযরতের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেন মাওলানা মঞ্জুর হোসাইন। আর আমার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নেন জনাব আবদুস সবুর খান।

২৫ মে বাহাস নিয়ে মুখ খুললেন মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ

২৫ মে বাহাস নিয়ে বিভ্রান্তি ও কিছু কথা

আবদুস সবুর খান আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে তৎক্ষণাৎ হুজুরকে অবগত করে অনুমতি প্রার্থনা করি। এ মর্মে আশ্বস্থ করি যে, এটা প্রচলিত অর্থের কোন ঝামেলাপূর্ণ বহস নয়, বরং উভয়পক্ষের আলেমদের যৌথ উদ্যোগে সৌহার্দপূর্ণ ও আন্তরিকতাপূর্ণ ইলমি মুযাকারার অনুষ্ঠান। হুজুর আমার কথায় আশ্বস্থ হয়ে মৌখিক অনুমতি দান করেন। মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পর পরবর্তী লিখিত অনুমতির জন্য যাত্রাবাড়ী হযরতের কাছে দুই পক্ষ একত্রিতভাবে যাওয়ার জন্য আবদুস সবুর খানকে নির্দেশনা প্রদান করি। পরে জানতে পারলাম যে, আবদুস সবুর খান ঐ পক্ষের লোকদেরকে আসতে বললে তারা অস্বীকৃতি জানান। আর মৌখিক অনুমোদনের বিষয়টাকে মূল ধরে যাত্রাবাড়ী হুজুরের কাছে লিখিত অনুমতির জন্য না যাওয়ার বাহানা হিসেবে দাঁড় করান। অথচ পরে জানতে পারলাম আজ তারা এককভাবে যাত্রাবাড়ী হুজুরের সাথে দেখা করতে গেছেন।

এ ব্যাপারে আবদুস সবুর খান সুমন বলেন, বাহাসের জন্য নিধারিত স্থান ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তন। কিন্তু তা ব্যবহারের জন্য আমরা অনুমতি পাই নি। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বের হয়েছে যে, তাহরিকে খতমে নবুওয়াত নামে একটি সংগঠন থেকে একই দিনে একই সময়ের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তন ভাড়া চেয়ে দরখাস্ত করা হয়, যার পরিচালক হচ্ছেন এনায়েতউল্লাহ আব্বাসী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তন আমরা ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে এই দরখাস্ত প্রেরণ। যা আমাদের দাওয়াহ বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন। এই বিষয়ে ১ম পক্ষের প্রতিনিধি মাহদীকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, এই দরখাস্তের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

যাই হোক, পরবর্তীতে আব্বাসী সাহেবের প্রস্তাব অনুসারেই বিকল্প স্থান হিসেবে যাত্রাবাড়ী মাদরাসা নির্ধারণ করা হয়। আব্বাসী সাহেবের প্রতিনিধি ও মুবাহিস মাওলানা মঞ্জুর হোসাইন সাহেব আমাকে বলেন, আপনি মুফতি মিযান সাহেবকে দিয়ে যাত্রাবাড়ী হুজুরের সাথে কথা বলতে বলুন, আমি আব্বাসী সাহেবকে কথা বলতে বলছি। সে কথা অনুযায়ীযাত্রাবাড়ী মাদরাসা কতৃপক্ষের কাছে অনুমোদন নেয়ার জন্য আমি মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ সাহেবকে দিয়ে যাত্রাবাড়ী হযরতের সাথে যোগাযোগ করানোর চেষ্টা করি।

মুফতি সাহেবকে অনুরোধ করলে হুজুর যাত্রাবাড়ী হযরতের সাথে কথা বলে মৌখিকভাবে অনুমতি হয়েছে মর্মে আমাকে জানান এবং আমাদের উভয়পক্ষকে মিলে যাত্রাবাড়ী হযরতের কাছে লিখিত দরখাস্ত নিয়ে যেতে বলেন।

মৌখিক অনুমতি হওয়ায় তা উৎসুক সাথী ভাইদের জানানোর লক্ষ্যে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই যে, যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় অনুমতি হয়েছে। আর তাদের সাথে যোগাযোগ করি যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আমার ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসকেই মূল ধরে যাত্রাবাড়ী যেতে অস্বীকৃতি জানায়। অথচ আমি বারবার বলেছি দেখুন, মুফতি মিজান সাহেব মোবাইলে অনুমতি নিয়েছেন লিখিত আনার জন্য আমাদের উভয়কেই যেতে হবে। কিন্তু তারা বরাবরেই মত না করেন।

অবশ্য পরে জানতে পারলাম আজ সকালে তারা একাকী যাত্রাবাড়ী হযরতের সাথে দেখা করতে গেছেন। আমার এতবার অনুরোধের পরও যেতে রাজি না হয়ে এভাবে একাকীভাবে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের মর্মাহত করেছে। তারপরও যে ওনারা হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করে যাত্রাবাড়ী হুজুরের কথা মেনে বাহাসে বসতে রাজি হয়েছেন সেজন্য তাদের মোবারকবাদ জানাই।

এখনও মাওলানা আব্বাসী সাহেবের প্রতিনিধি ও মুবাহিস মাওলানা মঞ্জুর হোসাইন সাহেব প্রশাসনিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমার সাথে কথা বললে আমি বললাম যে, যেহেতু ইলমী মুযাকারাটি যাত্রাবাড়ী হযরতের মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হবে তাই হযরতের অনুমতি ব্যতীত কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না। তাই যে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পূর্বে যাত্রাবাড়ী হযরতকে অবহিত করে ওনার অনুমতি সাপেক্ষে নিতে হবে। এতে তিনি আমার সাথে একমত পোষণ করেন।

মাওলানা মঞ্জুর হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কথা ছিলো মিযানুর রহমান সাঈদ সাহেব ফোন দেয়ার পর আমরা উভয় পক্ষ যাত্রাবাড়ী হযরতের কাছে অনুমতি নিতে যাবো। কিন্তু এরপর তিনিই আমাকে ফোন দিয়ে জানান অনুমতি হয়ে গেছে। তখন আমি তাদেরকে বলি, অনুমতি যখন হয়ে গেছে আর এক সাথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনারা আপনাদের মতো করে যাবেন এবং আমরা আমাদের মতো তার সঙ্গে দেখা করবো। ২৫ তারিখ বাহাসের নিরাপত্তা ও সার্বিক প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো জানার জন্য যাবো। যেহেতু হুজুর অনুমতি দিয়েছেন, তাই প্রাশানিক কোন ভিত্তির উপর হুজুর অনুমতি দিলেন এবং হুজুর আদৌ অনুমতি দিয়েছেন কিনা বিষয়টি জানতে চাই। হুজুরের প্যাডে হুজুরের দস্তখতসহ দেখতে চাই। সেজন্যই হুজুরের সঙ্গে আমাদের দেখা করা।

অবশ্য আবদুস সবুর ভাই আমাকে লিখিত অনুমতির জন্য যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার যুক্তি হলো, যেহেতু অনুমতি হয়ে গেছে তাই আর এক সাথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

তিনি আরও বলেন, দেখা করার পর হুজুর আমাদেরকে অনুমতি দেন। তিনি বলেন, ২৫ তারিখ আপনারাও আসেন এবং তারাও আসবে। তখন আমি হুজুরকে প্রশাসনের কথা বলি। হুজুর বলেন, প্রশাসনের দরকার নেই। আমিই প্রশাসন। আমি হুজুরের কাছে জানতে চাই হুজুর আপনি কি দায়িত্ব নিচ্ছেন? বলেন, না দায়িত্ব নিচ্ছি না। এমন সময় মাওলানা আবুল ফাতাহ সাহেবের মৃত্যু সংবাদ আসায় কথার ইতি টানা হয়।

আলোচনার ফাঁকে হুজুর আমাদেরকে খানিকটা রাগের সঙ্গেই জানতে চান, কেনো এ বিষয়ে তার মাদরাসাকে জড়ানো হলো।

মাওলানা মঞ্জুর হোসাইন বলেন, আমরা চাই ইলমি বিতর্কের মাধ্যমে এ বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান জাতির সামনে উপস্থিত হোক। আন্তরিকতার সঙ্গে সবকিছু পরিচালিত হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা এবং সেজন্যই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ