শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

‘স্বামী ওম’ এবং আপন জুয়েলার্সের ‘জুয়েল’পুত্র

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাকন রেজা
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ভারতীয় যোগ প্রশিক্ষক ‘স্বামী ওমে’র ভিডিও ভাইরাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়া এই ভিডিওটির বিশেষত্ব কী? কেন ভাইরাল? ভিডিওটি ভাইরাল কারণ ‘স্বামী ওমে’র সঙ্গে তার একজন নারী শিক্ষণার্থী রয়েছেন, যার উর্ধাঙ্গে কোনো বস্ত্র নেই, আধুনিক ভাষায় ‘টপলেস’। এমন শিষ্য নিয়েও ‘স্বামী ওমে’র মনে ‘ওম শান্তি’ নেই। শান্তি আনয়নে তিনি তার তাবৎ ভারতীয় নারী ভক্তদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন এভাবেই তাকে অনুসরণ করেন। জয় গুরু।

জয় গুরু বললাম এ কারণে যে, এ দেশের ‘উদিয়মান ব্যাঘ্র’ প্রজনন ক্ষেত্র ‘ফেসবুকে’ এ নিয়ে তেমন কথা নেই। তবে ঘটনাটির প্রধান চরিত্র ‘স্বামী ওম’ না হয়ে যদি অন্য কেউ হতো, তাহলেই কিন্তু ‘কেলো’ হয়ে যেত। প্রতিবাদ, প্রতিরোধের বন্যা দেখা দিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সারাবিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এবং প্রথম স্থানের জন্য লড়া ফেসবুক যোদ্ধারা ‘ফেস’ ‘বুক’ ছুঁয়ে শপথ নিয়ে টিকটিকির মতো ঝুলে পড়তেন এর ওর ‘ওয়ালে ওয়ালে’। কিন্তু উনি ‘স্বামী ওম’, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার আগে সঙ্গত ও সঙ্গতি দেখতে হবে না? সেটা দেখতে দেখতেই হয়তো ‘যুদ্ধে’ নামা হয়নি। এমন কী আমাদের বিশাল ‘ফেমিনিস্ট’দেরও কারো কোনো প্রতিক্রিয়াও চোখে পড়েনি এ নিয়ে। অনেকটা আপন জুয়েলার্সের ‘জুয়েল’ ছেলের মতোন। বন্ধু সহযোগে ধর্ষণ বিষয়ক একটি ‘মহান’ কর্ম সম্পাদন করেও যিনি চোখের সমুখে থেকেও থাকেন দৃষ্টির ‘বাহিরে’। রবি ঠাকুরের গানের মতোন, ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে– আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে।’

কিংবা তারা ‘টপলেস’ হওয়াকে আধুনিকতা মনে করছেন। ছেলেরা খালি গায়ে ঘুরতে পারবে, যোগাসন করতে পারবে, মেয়েরা কেন পারবে না! সমধিকারের ক্ষেত্রে তো পারা উচিত। সুতরাং ‘টপলেস’ হওয়াটা হয়তো তাদের কাছে আধুনিকতা কিংবা অধিকার প্রাপ্তির প্রতীকী চিত্র। তা না হলে ‘স্বামী ওমে’র কীর্তি ভাইরাল হবার পরও সেই ভাইরাসে কেন আক্রান্ত হলেন না আমাদের নারীবাদীরা!

অনেক আগে লিখেছিলাম তনু, মিতুরা সব বিষয় বৈচিত্রে হারিয়ে যায়। হয়তো আমাদের ভোগবাদী সমাজের ‘ওয়াল’ থেকে তিন ধর্ষকের চেহারাও হারিয়ে যাবে অন্য কোনো বিষয় বৈচিত্র্যে। লিখেছিলাম ধারাবাহিকতা নিয়ে, ‘ফলোআপ’ নিয়ে এবং আমাদের ধৈর্য্য নিয়ে। বলেছিলাম আমরা কোনো বিষয়েই স্থির থাকতে পারি না, ধারাবাহিক থাকতে পারি না। কদিন আগে মেতেছি কাশেম বিন আবুবাকার নিয়ে, এখন সেটাও শেষ। পক্ষে যারা ছিলেন তাদের স্টক শেষ, আর বিপক্ষের গালিগালাজের স্টকও ফুরিয়েছে। মাঝে কিছু সময় এক গণমাধ্যম কর্মীর গ্রেফতারে ৫৭ ধারা নিয়ে ‘ফানুস উৎসব’। দুঃখ পাবেন না, কারণ ‘ফানুসে’র জ্বলে উঠার সময়কাল কম, তাই ‘ফানুস উৎসবে’র উদাহরণ দিলাম। এখন আপন জুয়েলার্সের মালিকপুত্র ও তার বন্ধুগণের ধর্ষণ কাহিনী নিয়ে মেতে আছে সামাজিক ও গণমাধ্যম। হাতে যা স্টক আছে হয়তো আরও কদিন চলবে, তারপর যেই সেই, আবার কোনো নতুন কাহিনী। নির্যাতিত মেয়ে দুটোর কী হলো, ধর্ষকদের কী হলো কেউ খোঁজ নেবে না। যেমন নেয় না তনুর, মিতুর, আফসানার।

তবে ভারত সত্যিই আধুনিক। একজন ধর্মীয় নেতা, যোগ গুরু, যার নামের আগের বসে ‘স্বামী’ মানে প্রভু আর তিনি প্রচারিত হন তাৎপর্যময় ‘ওম’ নামে। যিনি এমন কাণ্ড প্রকাশ্য করতে সাহস করেন এবং তা আবার ভিডিও বানিয়ে প্রচারণাও চালান, সঙ্গে অন্য নারীদের উদাহরণ অনুসরণ বা অনুকরণ করতে বলেন। হয়তো তার নাম ‘স্বামী ওম’ বলেই তিনি সাহস পান। সত্যিই বলিহারি, জয় গুরু। আমাদের দেশে কোনো ধর্মীয় নেতা বা মাওলানা, মৌলভী এই কাজ করলে তার তো বেজে বারোটা। ‘ফেমিনিস্ট’রা কোমর বেঁধে নামতেন রণসাজে। ধর্মনিরপেক্ষরা ধর্ম এবং ধর্মীয় নেতাদের স্বরূপ উদঘাটনে রীতিমতো বিপ্লব বাঁধিয়ে দিতেন। অপরদিকে ধর্মরক্ষকরা নেমে পরতেন অশ্লীলতা-বেহায়াপনা বিরুদ্ধ শ্লোগান নিয়ে। আর ধর্মান্ধরা ‘চাপাতি’তে শান দিতেন।

কিন্তু ভারতে ‘স্বামী ওমে’র তেমন কিছুই হয়নি। নেতানো কিংবা পোতানো টাইপ আলোচনা, সমালোচনাই হয়েছে আপাতত। এর আগেও স্বামী বা গুরুদের এমন কীর্তির কথা শোনা গেছে, উদাহরণ দিতে গেলে শুধু লেখার অবয়বই বাড়বে, আর কিছু হবে না। যেমন হয়নি সেই স্বামী বা গুরুদের ক্ষেত্রেও। কিন্তু আমাদের এখানে একজন ধর্মীয় নেতার এমন কীর্তির কোনো ছাড় নেই। তারা এমন কাণ্ড ঘটালে তা চিরস্থায়ী উদাহরণ হয়ে যাবে। আপন জুয়েলার্সের ‘জুয়েল’ ছেলে ও তার বন্ধুদের ‘ধর্ষণ’ এবং অন্যান্য এমন কীর্তির উদাহরণ দিতে গেলে উঠে আসবে সেই পদস্খলিত হাতেগোনা কজন ধর্মীয় নেতার উদাহরণ।

তনু, আফসানা হাজারো ধর্ষণচিত্র সুপারসিড করে উঠে আসবে সেই ‘ইয়াসমিন’ কাহিনী। অথচ ওর চেয়ে ভয়াবহ, তাজা উদাহরণও আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে। কিংবা দৃষ্টি যাবে হুমায়ুন আজাদের প্রবচণগুচ্ছে। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক আকর্ষণীয়। কিন্তু ভণ্ডরা বলেন উল্টো কথা।’ ‘স্বামী ওম’ হয়তো বুঝেছিলেন গুচ্ছের মর্মকথাটি। তাই তিনি ‘গুরু’ হতে চেয়েছেন ‘ভণ্ড’ হতে চাননি।

লেখাটি প্রিয় ডটকম থেকে নেয়া


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ