বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


এইচএসসি পরীক্ষা ২০১৭; বিশেষ পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আহমেদ তানভীর
কবি, প্রভাষক

ahmed_tanvir2সুপ্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী! জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা তোমার দরজায় কড়া নাড়ছে। সময় একেবারেই কম। কী? কেমন লাগছে?? খুব টেনশন হচ্ছে??? অবশ্য হওয়ারই কথা। পরীক্ষা সামনে থাকলে সবারই এমন হয়। এতো দুশ্চিন্তার তো কিছু নেই।

ঠিক এই মুহূর্ত থেকে শেষ পরীক্ষা পর্যন্ত পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে আর সব রকম দুশ্চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলতে তোমার জন্যে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো। ঠিকমতো অনুসরণ করতে পারলে সফলতার পথ আরও সহজ হবে বলে বিশ্বাস করি।

# এই মুহূর্ত থেকে মনে মনে ভেবে নাও- ‘আমাকে পারতে হবে, পারতেই হবে এবং আমি পারবোই।’ স্রষ্টাকে মনে রেখে এভাবে প্রতিদিন ভাবো, তুমি এক দারুণ সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছো এবং অবশ্যই স্রষ্টা তোমার পাশেই আছেন। সুতরাং, তুমি সফল হবেই।

# নিজের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখো। এ পর্যন্ত কম-বেশি যা-ই পড়েছো, যতটুকুই পড়েছো- মনে মনে ভাবো যে, সবই তোমার মনে আছে এবং এ সবকিছুই তুমি পারবে। দুচোখ বন্ধ করে ভাবো আর নিজেকে বলো যে, তুমি অবশ্যই ভালো প্রস্তুতি নিয়েছো। অতএব, তুমি পারবে।

# অনেকে পরীক্ষা এলেই বলাবলি করে- ‘আমি কিচ্ছু পড়িনি’, ‘এখন কী করবো’, ‘এবার আমি শেষ’, ‘সব ভুলে গেছি’, ‘এবার বোধহয় ফেল করবো’ ইত্যাদি। এখন থেকে শেষ পরীক্ষা পর্যন্ত তোমার ঐসব হতাশাগ্রস্ত সহপাঠি বা বন্ধুদের সঙ্গে যথাসম্ভব কম মেলামেশা করবে (পারলে যোগাযোগ বন্ধ রাখো, কৈফিয়ত চাইলে পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা বলো)। এদের হতাশাব্যঞ্জক কথাবার্তা ও আচরণ তোমার সুন্দর প্রস্তুতি, মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করবে। এ ধরনের নেতিবাচক ভাবনা নিজের মনেও আসতে দেবে না।

# তুলনামূলক কঠিন অধ্যায় বা বিষয়গুলো আগে ভালোভাবে পড়া না থাকলে নতুন করে শিখতে যেয়ো না। না পড়া বিষয় নতুন করে শেখার চেয়ে ভালোভাবে শিখে রাখা বিষয়গুলো বারবার চর্চা বা রিভিশন করা অনেক ভালো।

# সব ক্ষেত্রে শুধু মেধা আর শ্রম নয়, কৌশলও কাজে লাগাতে হয়। মনে রাখবে, কৌশলের নির্দিষ্ট কোনো প্রকার বা ধরন নেই। একেকজনের কৌশল একেক রকম। তাই নিজের মতো করে কৌশলী হও, সফলতার পথে এগিয়ে যাও।

# অনিয়ম করো না। যথাসম্ভব বাইরে অকারণ ঘোরাঘুরি, অপ্রয়োজনীয় আড্ডা, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, চ্যাটিং ইত্যাদি পুরোপুরি বন্ধ রাখো। হয়তো কষ্ট হবে, অনেকদিনের অভ্যাস তো। একবার ভেবে দেখো- রেজাল্ট খারাপ হলে কিন্তু চ্যাটিং-ফ্যাটিং কিংবা আড্ডা দিতে কেউ তোমার পাশে আসবে না, বরং এড়িয়ে চলবে। সুতরাং সময়টা কাজে লাগাও।

# পরিমিত ঘুমাও, নিয়মিত খাও। পরিমাণমতো ঘুমাবে, পরীক্ষা চলাকালে অতিরিক্ত রাত জাগবে না। এটি তোমার শরীর ও মনকে এলোমেলো করে দেবে। খাবার গ্রহণেও সতর্ক থাকবে। এমন কোনো খাবার খাবে না যাতে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারো। অতি আহার অথবা অল্প আহার তোমার অসুস্থতা ও পরীক্ষা খারাপের কারণ হতে পারে। তাই, পরিমাণমতো সুবিধাজনক (সহজে হজম হয় এমন) খাবার গ্রহণ করবে।

# কেউ প্রস্তুতির কথা জানতে চাইলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইতিবাচক উত্তর দাও। কে কেমন পড়ছে, কার প্রস্তুতি কেমন এ নিয়ে মোটেও ভাববে না। সম্পূর্ণ নিজের দিকে মনোযোগ দাও, সময়টা কাজে লাগাও, যত্নবান হও। পরীক্ষার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হুড়মুড় করে পড়া রিভিশন করো না। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবার দুএক ঘণ্টা আগে থেকে নিজেকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখো, ফুরফুরে মেজাজে থাকো।

# ‘ইস! এতো এতো পড়া, কখন যে পড়বো’- এমন ভাবনা মাথায় এনে ভেবে ভেবে সময় পার করা বোকামি। ‘আমি তো সবই পারি, পরীক্ষার আগে একটু দেখলেই হবে’ কিংবা ‘বানিয়ে বানিয়ে সব লিখে ফেলবো’- এমন ভাবনাও বোকামি। এসব না ভেবে নিজের মতো রিভিশন চালিয়ে যাও।

# পরীক্ষার রুটিন নিজের চোখে দেখো। কোন্ পরীক্ষা সকালে, কোন্টা বিকালে ভালো করে দেখে নিশ্চিত হও। কোনো কারণে পরীক্ষার সময় বা তারিখ পরিবর্তন হলে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে যাচাই করে নিশ্চিত হও। প্রতিটি পরীক্ষার আগের রাতেই প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, কলম-পেন্সিল, স্কেল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রেখে ঘুমাতে যাও।

# পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে আধঘণ্টা আগে (প্রথম দিন এক ঘণ্টা আগে) কেন্দ্রে পৌঁছবে, নোটিশ বোর্ড দেখে তোমার নির্দিষ্ট কক্ষ নং ও আসন নং খুঁজে নেবে। আসন গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই প্রাকৃতিক কাজকর্ম সেরে নেয়ার চেষ্টা করবে।

# পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই তোমার মনে দুশ্চিন্তার বাতাস বইয়ে দিতে পারে। নিরাপত্তাকর্মীর বাঁশির আওয়াজ, ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি, সারিবদ্ধ পুলিশ, পিতলের ঘণ্টার সতর্কসংকেত, ফাইলপত্র নিয়ে লোকজনের ছোটাছুটি ইত্যাদি দৃশ্য তোমাকে কিছুটা হলেও আতঙ্কে ফেলতে পারে। মনে মনে ভাবো- এতো এতো আয়োজন, এতো ছোটাছুটি শুধু তোমারই জন্যে। কারণ তুমি একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, একজন পরীক্ষার্থী; আর তাই তোমাকে সেবা দিতেই এরা সবাই এমন করে ছুটছে।

# প্রতিটি পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডে প্রদত্ত সকল নিয়ম যথাযথভাবে মেনে চলবে।

# পরীক্ষার খাতা হাতে পাবার পর খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় অংশ যথাযথভাবে (কালো কালির বলপেনে) পূরণ করবে যেন কোনো রকম ভুল, কাটাকাটি বা ঘষামাজা না হয়। খাতার সেলাই বরাবর ভাঁজ করবে, কোনো অবস্থাতেই খাতার ওপরের ওএমআর শিটটি ভাঁজ করবে না। উত্তর লেখার পৃষ্ঠাগুলো পেন্সিলে মার্জিন করবে। মার্জিন করতে বা প্রশ্নের নং এর নিচে দাগ দিতে কখনই রঙিন বলপেন ব্যবহার করবে না।

# তুলনামূলক সহজ ও জানা প্রশ্নগুলোর উত্তর অবশ্যই আগে লিখবে। বেশি নম্বরের আশায় জটিল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা না করাই ভালো। প্রশ্নে কী চাওয়া হয়েছে তা বুঝে সে অনুযায়ী উত্তর লিখবে, অযথা অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা লিখে উত্তর বড় করা বোকামি। এতে খাতার মূল্যায়ন অনেকাংশেই কমে যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এ জন্যে আগে থেকেই সময় বিভাজন করে নেয়া ভালো। পারতপক্ষে কোনো প্রশ্নের উত্তরই ছেড়ে আসবে না। শেষ মুহূর্তে অবশ্যই খাতা রিভিশন করবে। সব ঠিকঠাক লিখেছো কি না, কোনো ভুল আছে কি না, কোনো উত্তর বাদ পড়েছে কি না- ইত্যাদি যাচাই করে খাতা জমা দেবে।

# পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরে কখনই প্রশ্ন হাতে নিয়ে পরীক্ষার সম্ভাব্য মূল্যায়ন করতে বসবে না। এটি তোমার পরবর্তী পরীক্ষায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, মনে মনে নিজেকে বলো- ‘আমার পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে। আমি খুব খুশি। স্রষ্টাকে ধন্যবাদ। নিশ্চয়ই আগামী পরীক্ষাগুলোও ভালো হবে।’ এমন ভাবতে ভাবতে প্রশ্নটি যত্ন করে রেখে পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করো।

তোমাদের জন্যে জন্যে প্রাণভরা ভালোবাসা, শুভকামনা ও অশেষ দোয়া। এগিয়ে যাও, সফল হও, মানুষ হও।

আহমেদ তানভীর
প্রভাষক (ইংরেজি)
ছামিয়া আশরাফ মডেল কলেজ
কিশোরগঞ্জ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ