শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


বড় স্বপ্ন দেখো ঐক্য প্রয়াসী হও: দেওবন্দে মাওলানা মাহফুজুল হক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

mahfujul_hakহাওলাদার জহিরুল ইসলাম: ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া রহমানিয়া'র মুহতামিম ও বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব হজরত মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেব বেফাকের শুরা সদস্য মাওলানা রশিদ আহমদসহ ছয়নের একটি কাফেলা নিয়ে গতকাল দুপুরে দারুল উলুম দেওবন্দে আসেন৷

রাতে 'জামিয়া রহমানিয়া'র ছাত্রদের উদ্যোগে একটি বিশেষ মজলিসের আয়োজন করা হয়৷ এতে মাওলানা মাহফুজুল হক বাঙালী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বয়ান পেশ করেন৷ হজরত শুরুতে এবারের ভারত সফরের উদ্দেশ্য বর্ণানা করে বলেন, ‘আমরা গত ১৬মার্চ কলকাতায় আসি৷ পরদিন হাওড়ায় একটি মাদরাসার প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে বোম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হই৷ এখানে শিক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থা 'দীনিয়াতে'র বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নেই৷

দীনিয়াত মূলত স্কুলে পড়ুয়া মুসলিম শিশুদের নিয়ে কাজ করছে৷ শিশুরা মাদরাসায় না পড়েও কীভাবে দীনের মৌলিক শিক্ষাটা পেতে পারে এবং দীনি চেতনায় নিজেকে গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়ে অভিনব পদ্ধতিতে কাজ করে যাচ্ছে৷ দীনিয়াতের কাজগুলো খুব কাছ থেকে দেখা, কর্ম কৌশল উপলব্ধি করতেই আমাদের এবারের ভারত সফর৷’

তিনি বলেন, 'শুধু ভারতেই নয় পৃথিবীর নানা দেশে দীনিয়াত প্রণীত শিক্ষা সিলেবাসটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে৷ ভারতে দীনিয়াতের অধীনে প্রায় ১৪হাজার 'মুনাজ্জাম মকতব' পরিচালিত হচ্ছে৷ যেখানে আনুমানিক ১৫লক্ষ মুসলিম শিশু পড়া লেখা করছে৷ এই অভিনব পদ্ধতিটি বাংলাদেশেও চালু করতে চাই৷ এখানে যে ব্যাপক খেদমতটি হবে তা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতে খুবই জরুরী৷’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আকাবির আসলাফ সর্বদাই দীনের ব্যাপক প্রসার ও নতুন প্রজন্ম কী করে দীনি চেতনায় লালিত হতে পারে তা নিয়ে কাজ করেছেন৷ বাংলাদেশে হজরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. দেশের ৬৮হাজার গ্রামে ৬৮হাজার মকতব প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন৷ হজরত শায়খুল হাদিস রহ.ও শেষ বয়সে এসে এ বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিয়েছিলেন৷ সেই ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আমাদেরও ভাবতে হবে৷ তোমরা তরুণরাও এ ব্যাপারে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারো৷’

ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দেয়া বয়ানে মাওলানা মাহফুজুল হক আরো বলেন, আমি তরুণ কাসেমিদেরকে খুব গুরত্বের সাথে তিনটি কথা বলতে চাই৷

১৷ তোমরা দারুল উলুম দেওবন্দের মতো বিশ্বখ্যাত দীনি মারকাযে পড়ার সুযোগ পেয়েছো৷ এটা অনেক বড় নেয়ামত৷ নিজের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করতে তোমারা পড়া লেখার পাশাপাশি দেওবন্দের উস্তাদদের সঙ্গে একটা ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে৷ সবার সাথে না হলেও অন্তত একজন উস্তাদের সাথে অবশ্যই গভীর ইলমি-এসলাহি সম্পর্ক রাখবে৷ এটার সুফল পাবে কর্মজীবনে৷

২৷ যেহেতু আমাদের আকাবিরে দেওবন্দের সমস্ত কিতাব, ইলমি যখিরা উর্দু ভাষয় রচিত তাই এখানে আসার পর উর্দু ভাষাটাকে অবশ্যই আয়ত্ব করে নিবে৷ উর্দুতে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করে নেবে৷ নিয়মিত উর্দুতেই কথা বলা৷ দৈনিক উর্দু পত্রিকা পড়া যেতে পারে৷ শায়খুল হাদিস হজরত আল্লামা সাঈগ আহমদ পালপনপুরী দামাত বারকাতুহুমও বিষয়টির প্রতি গুরত্ব আরোপ করেছেন৷ তবে মাতৃভাষার চর্চাটা করবে সময় সুযোগ মতো৷ মাতৃভাষা চর্চার কথা তো নতুন করে বলবার কিছু নেই৷

৩৷ সব সময় বড় স্বপ্ন দেখবে৷ দেশ, জাতি, ইসামকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখবে৷ আর মনে রাখবে বড় স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই৷ বাংলাদেশসহ পৃথিবীজুড়ে মুসলামনাদের মধ্যে যে বিভক্তি বিরাজমান তার অবসান ঘটানো সময়ের দাবী৷ বিশেষত বাংলাদেশি আলেম সমাজের মাঝে যে এফতেরাক-বিভক্তি মনোভাব চলছে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে তোমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারো৷ দেশে থাকতে হয়তো নানা মত, নানা দলে তোমরা যুক্ত ছিলে৷ কিন্তু দেওবন্দে এসে কিন্তু সেগুলো সহজেই ভুলে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে৷ বড় প্রতিষ্ঠানে পড়লে তো দিলও বড় হওয়া চাই৷ দেওবন্দের থেকে বড় দীনি মারকাজ তো পৃথিবীতে আর নেই৷

দেশের মাদরাসাগুলোর পরিবেশ পরস্থিতি অনেক সময় তরুণদেরকে ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ দেয় না৷ কিন্তু এখানে তো আর সেই পরিবেশ পরিস্থিতি নেই৷ এখানে পরস্পরের সাথে সুন্দর একটা ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তৈরী করার সুযোগটা কাজে লাগাবে৷ দেশ-জাতি-ইসলামের স্বার্থেই তেমাদের ঐক্যের দীক্ষা নিতে হবে৷ দেওবন্দে এসে সবাইকে দল মত ভুলে যাওয়া চাই৷ দেওবন্দ আমাদেরকে ঐক্যের প্রেরণা হোক৷’

দেওবন্দের 'বাবুজ্জাহেরে' অনুষ্ঠিত ওই মজলিসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছাড়াও কলকাতা, ত্রিপুরা ও আসামের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপকভাবে অংশ নেয়৷ রাত সাড়ে এগারোটার দিকে দোয়ার মাধ্যমে মজলিসের সমাপ্তি হয়৷

 

উল্লেখ্য, মাওলানা মাহফুজুল হকের কাফেলাটি আজ সকালে আকাবিরদের স্মৃতি বিজড়িত নানুতা, থানা ভবন, জালালাবাদ, গাঙ্গুহসহ বেশ কিছু স্থান জিয়ারতের উদ্দেশ্যে দেওবন্দকে বিদায় জানিয়েছেন৷ বিকেলে সাহারানপুরে মাজেহেরে উলুম মাদরাসায় পৌঁছুবেন৷ রাতের ট্রেনে কলকাতা রওনা হবেন৷ ২৭ তারিখে সেখানে একটি ইসলামি সেমিনারে অংশ নিয়ে ২৮মার্চ ঢাকায় পৌঁছুবার কথা রয়েছে৷

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ