বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ssc পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

sikkha_examসারাদেশে আরম্ভ হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা৷ বেশ চাপ ও দুশ্চিন্তায় ভুগছে পরীক্ষার্থীরা৷ অনেকে আবার নার্ভাস ফিল করতে শুরু করেছে এই দিনগুলিতে৷ পরামর্শ হিসেবে পরীক্ষার এমন কিছু গুছগাছ ও অন্যান্য বিষয়ে লিখেছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের উচ্চতর হাদিস বিভাগে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

১. পরীক্ষার আগের রাতে বিরাট যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার মতোন পড়ো না৷ মাথা ঠাণ্ডা রাখো৷ একদম বেশি পড়ে পড়ে দুনিয়া উল্টে দিও না৷ যথাসম্ভব আগেভাগে শুয়ে পড়ো৷ বেশির থেকে বেশি বইখানা একটিবার রিভাইস দিতে পারো তখন৷

২. পরীক্ষার হলে যাবার আগে গোসল সেরে যাবতীয় আসবাবপত্র গুছিয়ে ঘর থেকে এসো৷ দুটো অতিরিক্ত কালো কলম নিও কিন্তু৷ সঙ্গে তিনটে মার্কার পেন নাও; সবুজ, নীল, গোলাপি কিংবা লাল, কালো, হলুদ ছাড়া তোমার পছন্দের যেকোনো রঙের৷ দেখো আবার সেগুলি নিয়ো না কিন্তু, যেগুলিতে কাগজের উল্টো পাশ নষ্ট হয়ে যায়৷ স্কেল, হাতঘড়িও নাও সঙ্গে৷ একটা জলের বোতলও নিতে ভুলো না যেনো৷

৩. পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে প্রচুর পরিমাণে বই পড়া, পড়া সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে খুব টেনশন করা, পরীক্ষার চিন্তায় একেবারে ভেঙে পড়া বাদ দাও৷ যা পড়ার আগের দিনের সন্ধ্যে অবধি সেরে ফেলো৷

৪. পরীক্ষার এই সময়গুলিতে ফরজ নামাজের পাশাপাশি বাড়তি নফল নামাজও পড়ে নাও সুযোগ মিলতেই৷ জানো তো, নামাজে যাবতীয় দুশ্চিন্তা দূর হয়৷ অপার সাহায্যের হাতছানি মেলে৷ আর যারা রোজকার ফরজ নামাজই পড়ো না, তারা জেনে নাও—প্রতিটা প্রাপ্তবয়সী মুসলমানের ওপর নামাজ ফরজ৷ ছেড়ে দেয়া কঠোর গোনাহ৷ তাই বয়স হবার পর থেকে আজ অবধি যতো নামাজ ছুটে গেছে, সেগুলির পূরণ হিসেবে কাজা আদায় করো৷ হেলায়-খেলায় কতো নামাজ পেরিয়ে গেছে, যদি তার হিসেবই না থাকে, তাহলে মনকে জিজ্ঞেস করো৷ মন যা বলে, সেই মোতাবিক একটা ধারণা স্থির করো৷ পড়তে থাকো প্রতি নামাজ আদায়ের সঙ্গে ঐসব নামাজের বাড়তি হুবহু সেই ক'টি রাকাত৷ কেঁদে কেঁদে ক্ষমা প্রার্থনা করো আল্লাহর দরবারে৷ প্রতিজ্ঞা করো, আর কখনও নামাজ ছাড়বে না৷ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য এবং নিজের পরিবারসহ বিশ্বমুসলিমের শান্তি কামনায় দোয়া করো৷ জানো তো! অপরের জন্য দোয়া করলে নিজের জন্য এমনিতেই দোয়া কবুল হয়ে যায়৷

৫. পরীক্ষা শুরু হবার কমপক্ষে পনেরো মিনিট আগে পরীক্ষার হলে ঢোকো৷ সেখানে নামাজের ব্যবস্থা থাকলে দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নাও৷ আল্লাহর কাছে হাত পেতে দু-মিনিট কেঁদে নাও—‘আয় মাবুদ! আমি তো আমার সাধ্যমতো মেহনত করেছি৷ বাকিটা তোমার হাতে৷' বেঞ্চিতে বসে কারোর সঙ্গে কথা বোলো না৷ ধীরস্থিরভাবে পড়তে থাকো সুরা ইয়াসিন, সুরা ফাতিহা, চার কুল, সুরা আর রহমান, সুরা ওয়াকিয়া৷ সঙ্গে বারবার পাঠ করতে থাকো দরুদ শরিফ৷ যদি এসব সুরা-দোয়া মুখস্থ না থাকে, তাহলে হল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আগথেকে অনুমতি নিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফের এসব অংশবিশেষ কিংবা দোয়ার বই সংগ্রহ করে নাও৷ দেখে দেখে পড়ো যতোটা সম্ভব৷ পারলে সবগুলি পড়ো, না হয় কমপক্ষে দু-একটি পড়ে সঙ্গে দরুদ ও আয়াতুল কুর্সিসহ দোয়ায়ে ইউনুস পড়তে ভুলো না যেনো৷

৬. পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে নিজের অনুভবটা একদম শুন্য করে নাও৷ একদম নিশ্চিন্তে হাসিমুখে সালাম দিয়ে প্রবেশ করো৷ জানো তো, ভালো শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে ঢুকলে ভীষণ খুশি হয়৷

৭. প্রশ্ন অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করো আগেভাগেই৷ যদি প্রশ্ন হয় তিনটে এবং নির্ধারিত সময় হয় তিন ঘণ্টার, তাহলে প্রতিটা প্রশ্নের জন্য এক-এক ঘণ্টা করে স্থির করো৷ এরপর তিনটের প্রতিটা অংশের জন্য যথাযথ সময় নির্ধারণ করো৷ আরামসে লিখতে থাকো৷ দ্বিতীয় ঘণ্টার দুয়ারে পা রাখার অন্তত দশমিনিট আগেই প্রথম প্রশ্নের জবাব দ্রুত লিখে শেষ করে ফেলো৷

৮. প্রশ্নপত্র হাতে আসতেই তড়িঘড়ি পড়া শুরু কোরো না কিন্তু৷ কাম ডাউন, রিল্যাক্স৷ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' পড়ো একবার৷ ‘রাব্বি যিদনি ইলমা' পড়ো তিনটে বার৷ দরুদ শরিফ পাঠ করো একবার৷ এবার প্রশ্নপত্র চোখের সামনে মেলে ধরো৷ একে একে বুঝতে বুঝতে শুরু থেকে শেষ অবধি পুরো প্রশ্নটা পড়ে ফেলো৷ এরপর ভাবো, কোন প্রশ্নটি তোমার কাছে খুব সহজ এবং বেশ পড়া মনে হয়? সিদ্ধান্ত নাও, সেটিই সবার আগে লিখবে৷ চাই সেটি পাঁচনম্বর প্রশ্নই হোক না কেনো৷ ব্যস, ‘পাঁচনম্বর প্রশ্নের উত্তর' মোটা কালির শিরোনামে খাতা লেখা আরম্ভ করো৷

৯. পরীক্ষার খাতাটি যথাসাধ্য সুন্দর করার চেষ্টা করো৷ অল্প কথায়, সুন্দর হাতের লেখায়, সহজিয়া গদ্যে, মাধুর্যপূর্ণ উপস্থাপনায় সব ক'টি প্রশ্নের জবাব দাও৷ যদি হাতের লেখা কিংবা উপস্থাপনা সুন্দর করবার কৌশল জানা না থাকে, তাহলে ভালো কোনো শিক্ষক ও দক্ষ কোনো রাইটারের দারস্থ হতে ভুলো না যেনো৷

১০. পরীক্ষার হলে নিজেকে নিয়েই নিজে ব্যস্ত থেকো৷ বাড়ির কথা, বন্ধুদের আড্ডা, পড়শির বকুনি বিল্কুল মাথায় এনো না৷ আরেকটি কথা, খবরদার! নকল করবার চিন্তা কখনোই মাথায় আনবে না৷ যারা নকল করে পরীক্ষায় পাস করে, তারা সার্টিফিকেট পেলেও সমাজের নিচুশ্রেণির হয়৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় ভালো শিক্ষিতদের সামনে কখনোই মাথা উঁচিয়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারে না৷ তাছাড়া নকল করবার প্রয়োজনই বা হবে কেনো, তুমি তো আগথেকে পড়েই তৈরি হয়ে ঢুকেছো পরীক্ষার হলে৷ যদি ভালো করে পড়ে না থাকো, একটি প্রশ্নের জবাবও তোমার মাথায় না আসে, তাহলে যা পারো তা-ই খাতায় পেড়ে এসো৷ সামনের পরীক্ষার জন্য নিজেই নিজের ফলাফলে শিক্ষা পেয়ে যাবে৷ তখন দেখবে, জীবনে তোমায় কখনও আর পড়তে বলতে হবে না৷ নিজেই নিজের পড়া তৈরি করতে থাকবে; শেখার জন্য না হোক, অন্তত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবার জন্য হলেও৷ নকল করে ধরা খেলে তো সবার সামনে অপদস্থও হতে হবে তোমায়৷ সারাজীবন সেই সহপাঠীদের কাছে নত হয়ে থাকতে হবে তোমার৷ জেনে রেখো, যে ভালো করে পড়াশোনা করে, তার কখনোই নকল নামের বাজে কাজ করা তো দূর কি বাত, মাথায় অবধিও আসে না কখনও৷ বন্ধু! পড়াশোনাটা নিজের ইচ্ছের করে নাও৷ তোমার কানে কেনো ঘ্যানর ঘ্যানর করতে হবে সারাটাক্ষণ—‘পড়ো, পড়ো৷ না হয় ভাত দেবো না কিন্তু'? নিজ আগ্রহে একটু নিজের সুন্দর জীবন, সম্ভাবনাময় আগামীটা সাজাও না!

শোনো, কারোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেবল চাপ দিয়ে কিছু করানো যায় না৷ তাই আগামীর পৃথিবীতে নিজেকে কিছু করতে হলে বাপ-মায়ের বলা-কওয়া বৈ পড়তে বসো৷ এখন থেকেই স্থির করো, তুমি কী হবে জীবনে? সে লক্ষ্যেই মেহনত, চেষ্টা-সাধনা করে এগোতে থাকো৷ দেখো, সাফল্যের আলোটি তোমার মুখ ছোঁবেই একদিন৷

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ