বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


এটুআই ও ইকরার সমঝোতা কওমি শিক্ষার উদ্দেশ্য পরিপন্থী: মাওলানা মামুনুল হক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সরকার উদ্যোগী হয়েছে কওমি মাদাসারা শিক্ষার্থীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে। উদ্দেশ্য, কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করা। এ লক্ষ্যে গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রজক্ট ও ইকরা বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। সরকারের চাচ্ছে, সারা দেশের কওমি মাদরাসায় এ কারিগরি শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এ শিক্ষার সংযুক্তি কতোটা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে কওমি মাদরাসার জন্য? কওমি মাদরাসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গেও তা কতোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? নাকি কারিগরি শিক্ষার সুড়ঙ্গ বেয়ে সরকার অনুপ্রবেশ করতে চাচ্ছে কওমি মাদরাসার নিজস্ব অঙ্গণে? এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মাসিক রাহমানী পয়গামের সম্পাদক ও জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মামুনুল হক। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন, আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রজক্টের সঙ্গে ইকরা বাংলাদেশের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। উদ্দেশ্য কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

মাওলানা মামুনুল হক : আমি প্রথমেই বলবো, মাদরাসা শিক্ষার যে উদ্দেশ্য এবং মাদরাসা শিক্ষার্থীদের যে দায়িত্ব তার সঙ্গে এ ধরনের কর্মসূচির কিছুটা বিরোধ রয়েছে। ইসলামি শিক্ষার যে উদ্দেশ্য তা পূরণের জন্য শিক্ষার্থীগণ পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছে না। ধর্মীয় জ্ঞানে দক্ষতা অর্জনের জন্য আরও সময় দেয়া প্রয়োজন। সেখানে নতুন একটি বিষয়ের অবতারণার খুব বেশি সুযোগ নেই।

আওয়ার ইসলাম : হঠাৎ সরকার এ ধরনের উদ্যোগ কেনো গ্রহণ করলো? এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?

মাওলানা মামুনুল হক : সাধারণত সমাজে একটি ভুল ধারনা প্রচলিত আছে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত নয়। তাদের জীবন-জীবিকা ও আয়-উপার্জনের জন্য এ ধরনের কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এটা অজ্ঞতাপ্রসূত; ইসলামি শিক্ষা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকার কারণেই এমনটি মনে করা হয়।

কই সরকার তো সাধারণ শিক্ষায় যারা শিক্ষিত হচ্ছে, বিশেষ কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য –যারা কারিগরি জ্ঞান লাভ করে নি- তাদের জন্য এ ধরনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে আমরা জানি না। তাহলে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য এমন আয়োজনের প্রয়োজন হলো কেনো? আলেম উলামা যারা জাতির মনন গঠনে সময় দিবে, তাদেরকে কারিগরি শিক্ষা দিয়ে কেনো ভিন্নমুখী করতে হবে?

বরং আমি মনে করি, এ ধরনের উদ্যোগ মাদরাসা শিক্ষার উদ্দেশ্যের প্রতি তাচ্ছ্বিল্য প্রদর্শনের নামান্তর।

আওয়ার ইসলাম : তাহলে আপনি কী এ ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছেন?

মাওলানা মামুনুল হক : না, আমি পুরোপুরি অস্বীকার করছি না। হতে পারে, যেসব শিক্ষার্থীর যোগ্য আলেম হওয়ার মতো মেধা ও মানসিকতা নেই, যারা পারিবারিক ও সামাজিক কারণে তাদের শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে নি, যারা দীনি খেদমতের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হবে না, তাদের জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

অথবা যারা আলেম হবে না –সাধারণ ধারায় শিক্ষিত- তাদেরকে সামান্য দীনি শিক্ষাসহ মাদরাসার অধীনে কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা যেতে পারে।

আওয়ার ইসলাম : আপনি কী মনে করেন, কারিগরি শিক্ষার প্রসার কওমি মাদরাসার ইলমি পরিবেশকে নষ্ট করবে?

মাওলানা মামুনুল হক : আমি অবশ্যই মনে করি, কারিগরি শিক্ষার প্রসার মাদরাসার ইলমি পরিবেশকে নষ্ট করবে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর মেধা ও মননকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করবে। তাদেরকে বিপথগামী করবে।

আওয়ার ইসলাম : সরকার বলছে, কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি প্রয়োজনীয়তা আছে কী?

মাওলানা মামুনুল হক : আমি অনুভব করি, সমাজের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব তা পালনের জন্য আমরা এখনো পযাপ্ত শিক্ষার্থী সরবারহ করতে পারছি না। সেখানে বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা এখনো তৈরি হয় নি।

আওয়ার ইসলাম : উলামায়ে কেরামের কারো কারো আশংকা এ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার কওমি মাদরাসায় অনুপ্রবেশের সুযোগ পাবে। আপনিও সে আশংকা করেন কি?

মাওলানা মামুনুল হক : এ আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, সরকার এ প্রকল্পের মাধ্যমে কওমি অঙ্গণে প্রবেশের চেষ্টা করবে। কিছু সুযোগ সুবিধার দেয়ার মাধ্যমে অনুপ্রবেশের দুয়ার খুলছে। পরবর্তীতে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হবে।

আওয়ার ইসলাম : আপনি বললেন, কওমি মাদরাসার ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থাক রা যেতে পারে। তার পদ্ধতিটা কেমন হবে?

মাওলানা মামুনুল হক : এটা ঠিক করবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের কোনো কোনো মাদরাসায় এ ব্যবস্থাও আছে। এটা তাদের জন্য যারা আলেমে দীন হিসেবে সমাজে কাজ করবে না।

আওয়ার ইসলাম : আপনার ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

মাওলানা মামুনুল হক : আপাতত আমি সেসব শিক্ষার্থীদের জন্য ভাবছি যারা আলেম হিসেবে সমাজে অবদান রাখবে। পরবর্তীতে সময় ও সুযোগ হলে আমরা হয়তো কোনো পদক্ষেপ নিবো।

আওয়ার ইসলাম : ইকরা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ‘ব্যক্তি মাওলানা ফরীদ ঊদ্দীন মাসউদ’ -এর ব্যাপারে আপনার কোনো আপত্তি আছে কী?

মাওলানা মামুনুল হক : ব্যক্তিগত বিষয়টি আমি এখানে আনতে চাচ্ছি না। তবে যেহেতু তার সাম্প্রতিক ও অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি উলামায়ে কেরামের আস্থা হারিয়েছেন, তাই তার এমন অতি উৎসাহি কর্মকাণ্ড তার অবস্থানকে আরও বিকর্তিক করতে পারে।

আওয়ার ইসলাম : আওয়ার ইসলামকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মাওলানা মামুনুল হক : ধন্যবাদ আপনাকে এবং আপনার সব পাঠককে।

আরও পড়ুন : কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিই এটুআই প্রকল্পের উদ্দেশ্য: হুসাইনুল বান্না

কওমি মাদরাসায় কারিগরি প্রশিক্ষণ: এটুআই ও ইকরার চুক্তিসই

নিবন্ধন করুন এখনই

journalism_cors4


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ