শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


শিল্প-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ বাড়ছে তরুণ আলেমদের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

safe_islami_group

রোকন রাইয়ান

তরুণ আলেমরা এখন কর্মক্ষেত্র নিয়ে নানারকম চিন্তা ভাবনা করছেন। বাড়ছে পরিধি। দিনদিন আলেমদের সংখ্যা বাড়লেও মসজিদ মাদরাসায় কাজের পরিধি সেভাবে বাড়ছে না। অনেকেই কিন্ডারগার্টেন মাদরাসা বা স্কুল গড়ে তুললেও সবার পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিকল্প চিন্তা আবশ্যিক হয়ে পড়ছে। আর এসব চিন্তা থেকে বহু তরুণ ঝুঁকছে ব্যবসা বাণিজ্যে। আইটি ফার্ম গড়ে তুলছেন। কিংবা হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা।

রাজধানীতে গত বছর তিনেকে এমন বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে আলেমদের। মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে নিজের খরচ নিজে যোগাতে ঝুঁকছেন পার্টটাইমের কাজের দিকে। পরিবারকে একটু স্বস্তি দেয়ার জন্য নিজেরা করছেন কিছু। এই কিছুটাই একসময় বড় হয়ে উঠছে। হাতছানি দিচ্ছে সফলতা।

গত দুই তিন বছরের কার্যক্রমগুলোতে চোখ রাখলে দেখা যাবে ছোট ছোট এসব উদ্যোগ বেশ বড় কাজে রূপ নিয়েছে। একেক জন সফল উদ্যোক্তার কাতারেও নাম লিখিয়েছেন। শুরু করবেন কি করবেন না এই মানসিকতা নিয়ে কাজে নামলেও তারা এখন নিজের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। দেখছেন অপার সম্ভাবনা।

রাজধানী ছাড়াও খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ অন্যান্য শহরে আলেমদের তত্ত্ববধানে গড়ে উঠেছে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান। যেসবে কাজ করে তরুণ আলেমরা অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি হাত পাকাচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ব্যতিত তাদের এই সফলতাকে বড় করেই দেখা দরকার বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা শিক্ষার্থী যেখানে চার থেকে ছয় বছরের জ্ঞানার্জনের পর আসছে শিল্প-বাণিজ্যে সেখানে আলেম বা কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের আসতে হচ্ছে খালি হাতেই।

তবে পড়াশোনা, বাস্তব অভিজ্ঞতা বা কৌশলে ঘাটতির কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নিভে গেছে অঙ্কুরেই। অবশ্য কেউ হতাশ হয়ে শিল্পবিমুখ হননি। তারা পুনরায় উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন বা করছেন ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে। বাণিজ্যে আসা তরুণ আলেম উদ্যোক্তা বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর করছিলাম গত কয়েকদিন ধরে। অনেক প্রতিষ্ঠানই আমরা পেয়েছি যারা নিজেরা সফলতার পাশাপাশি তৈরি করছেন বিশাল কর্ম সংস্থান। তৈরি করেছে অপার সম্ভাবনা।

[caption id="" align="alignnone" width="960"]Image may contain: 1 person সেফ ইসলামী গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন[/caption]

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প শহর খুলনায় এমনই এক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন কয়েকজন আলেম। যেটির নাম সেফ ইসলামী গ্রুপ।  ২০১০ সালে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটি এখন নানারকম সেবা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। অথচ একটা সময় বেশ ইতস্ততা নিয়েই শুরু করতে হয়েছিল এ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু উদ্যোক্তাদের সুচিন্তিত কৌশল, কর্ম পন্থা ও অসীম ধৈর্যের কারণে আজ এর ফল ভোগ করছেন বহু মানুষ।

টেলিফোনে কথা হয় সেফ ইসলামী গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে। ২০০২ সালে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী থেকে দাওরা শেষ করেন তিনি। এরপরই চিন্তা করেন একটু ভিন্ন কিছু করার।

তিনি জানান, সেফ ইসলামী গ্রুপ মূলত ল্যান্ডিং বিজনেস দিয়ে যাত্রা করেছিল। এখন সেটাতে যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি শাখা। আসলে ম্যাক্সিমাম কম্পানি এখন মানুষকে সুদভিত্তিক ব্যবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। আজ যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুত নেই সেখানেও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান সুদভিত্তিক বাণিজ্য ছড়িয়ে দিয়েছে। এর থেকে বাইরে যারা চিন্তা করেন যারা সুদমুক্ত বিনিয়োগ করতে চান তাদের সুযোগ খুব সীমিত। অথচ আমাদের উচিত তাদের জন্য ওয়ে তৈরি করা। আমাদের চিন্তাটা শুরু হয়েছিল সেখান থেকেই। আমরা মানুষকে একটা স্বচ্ছ সুন্দর ও ঝামেলামুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে চেয়েছি।

মাওলানা মামুন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যদি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এ কাজগুলোতে যুক্ত হতাম তবে অর্থনীতির একটা বিরাট অংশ আলেমদের দখলে থাকত। অথচ এখন যারা অর্থনীতির চাবিকাঠি ঘোরান বা মানুষকে চালিকা শক্তির নিয়ন্ত্রক হিসেবে আছেন তাদের ধারে কাছেও আমরা নেই। যার ফলে মানুষ তার চিন্তার বাইরের একটা অশুদ্ধ ব্যবস্থপনাতে ঢুকতেই বাধ্য হচ্ছে।

সেফ ইসলামী গ্রুপ ল্যান্ডিং বিজনেস দিয়ে যাত্রা করলেও এটি এখন বিস্তৃত বেশ কিছু সেবায়। এ গ্রুপেরই পন্য সানফ্লাওয়ার ওয়েল বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে দেখা যায়। সেফ ড্রিংকিং ওয়াটার নামের একটি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা পদ্মার দক্ষিণপাড়ে সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। খুলনায় একটি বৃহৎ মার্কেটের নির্মাণ শুরু করেছে সেফ ইসলামী গ্রুপ যেটি বর্তমানে চারতলা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে জমি কিনে রাখা হয়েছে যেগুলোতে পর্যায়ক্রমে শুরু হবে উপযোগী বিভিন্ন প্রজেক্ট।

Image may contain: 5 people, people standing

মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি শুরুর পর নানাভাবে প্রায় ৮০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে। এছাড়াও প্রায় ১০ হাজার মানুষ এর থেকে নানাভাবে সেবা পেয়েছেন।

তিনি জানান, শিল্প বাণিজ্য এসব সব মানুষের জন্যই। আর আমাদের মতো মানুষদের জন্য রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। তাই মানুষকে ভালোভাবে বাঁচতে দিতে আমাদের স্বচ্ছ মাধ্যম তৈরি করা উচিত।

এআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ