মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫


বাংলা সাহিত্যে আলেমদের পাঁচতারা ; সাহিত্যের মিনারে মুআজ্জিন মুহিউদ্দীন খান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 

লাবিব আlll6বদুল্লাহ : বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান থাকলেও খাটো করে দেখা হয়৷ দেখানো হয় ছোট করে৷ এই ছোট ও খাটো অতীতেও ছিলো বর্তমানেও৷ নামে মুসলিম সাহিত্য ভাবনায় রাম বাম যারা তাদেরকে মহান হিসেবে প্রমাণ করা হয় । প্রচার ও প্রসার করা হয় বেশ৷

সংখ্যঘরিষ্ট মুসলমানদের দেশের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ইসলামের ঐতিহ্যের ছাপ থাকলেই তাকে আর সাহিত্য পাড়ায় জায়গা দেওয়া হয় না৷ দৈনিকের সাপ্তাহিক সাহিত্যের আয়োজনে বার বার রাম বামরাই আলোচিত৷ যারা শ্রেণিসংগ্রামের কথা বলে মনে মননে পূঁজিবাদী তারাই সাহিত্যে হিরো বনে যায়৷
স্বাধীনতার পর লিখিত গল্প উপন্যাস কবিতায় ইসলামপন্থী, ইসলামকে অবজ্ঞা করে কম কাজ হয় নি৷ সিনেমা নাটকে মুসলমি ঐতিহ্য নিয়ে কম অবজ্ঞা করা হয় নি৷ কিছু মুসলমানের দোষকে ইসলামের উপর চাপিয়ে রচিত হয়েছে বাংলা ভাষায় গল্প উপন্যাস ও কবিতা৷ স্বাধীনতার আগে আরেকটি স্বাধীনতার কোনো কথা নেই এইসব সাহিত্যকদের লেখায়৷ বৃটিশের জুলুম নির্যাতনের কোনো কথাও লিখা হয় না৷
আমাদের সাহিত্যের সকল শাখায় পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব স্পষ্ট৷ পশ্চিমা ভোগবাদের আগ্রাসনের শিকার আমাদের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি৷ নকল, ভাব নকল বা আঙ্গিক নকল করে রচিত আমাদের দেশের সাহিত্য৷ লেখকগন ভুলে যান যে সংখ্যঘরিষ্ট মুসলমানদের জীবনের কথা না আনলে সেটি এই দেশের মাটি মানুষের সাহিত্য হয় না৷

গল্পে পরকিয়া, প্রেম পিরিতি ও অশ্লীলতা না আনলে মনে হয় তাহাদের গল্প উপন্যাস রচিত হয় না৷ আমাদের কবি সাহিত্যকদের লেখায় ইসলামের গৌরবময় ঐতিহ্য ওঠে আসে না৷ গত শতকের নব্বয়ের দশক পর্যন্ত একই চিত্র৷

lll2

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহিত্যের নতুন দিকপাল৷ এরও আগে মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা নূর মুহাম্মদ আজমী, মাওলানা আকরাম খাঁ, মাওলানা আব্দুর রহীম, ইসলামী রেনেঁসার কবি ফররুখ আহমদ, কবি গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ আলী আহসান, কাজী দীন মুহাম্মদ, দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ, অধ্যাপক শাহেদ আলী ইসলামী সাহিত্যের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ আরও অনেকই আছেন যারা ইসলামী ইতিহাস ঐতিহ্যের পাহারাদার ছিলেন৷
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ ১৯৬২ সাল থেকে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত ইসলামী সাহিত্যের মিনারে মুআজ্জিন ছিলেন৷

দুই.

স্বাধীনতার পর আমাদের বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন আরও কয়েকজন বিদ্ধগ্ধ আলেম৷ মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, মাওলানা আব্দুর রহীম, মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ, মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মাওলানা ইসহাক ওবায়দী, মাওলানা ইসহাক ফরিদী রহ., মাওলানা আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী, ডক্টর মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন, মাওলানা লিয়াকত আলী, , মাওলানা কবি রুহল আমীন খান, মাওলানা আব্দুল মান্নান তালেবে, প্রফেসর আব্দুল গফুর৷ নাম না জানা আরও ইসলামী চেনতাসমৃদ্ধ আলেম উলামা৷
কুরআন, হাদীস ফিকহ, সিরাহ, ইতিহাস ছাড়াও সাহিত্যের নানা শাখায় এই ঈমানদীপ্ত কাফেলা মানজিলে মাকসাদে পথ চলেন৷ যারা মরহুম তাদের প্রতি জান্নাতি জীবন কামনা করি আমরা৷ এই কাফেলায় জীবিত যারা আমরা সুখময় জীবন কামনা করি৷

তিন
গত শতকের নব্বয়ের দশকে সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানের মাধ্যেম আরও কয়েক জন লেখকের কথা আমরা জানতে পারি৷ ইসলামী সাহিত্যধারায় যেহেতু দৈনিক নাই সুতরাং সাপ্তাহিক ও মাসিক ম্যাগাজিন লেখক তৈরির কাজে বড় অবদান রেখেছে৷

মাসিক পত্রিকাগুলোর অবদান নিয়ে পৃথকভাবে লিখার ইচ্ছে৷ সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানে কর্মরত ছিলেন মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ৷ মাওলানা শহীদুল ইসলাম নামে আরও একজন লেখক অনুবাদক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতেন৷ জহুরী নামে আরেক জন ছিলেন৷ আরও অনেকই যাদের সম্পর্কে আমি ততটা জানি না৷ এটি আমার ব্যর্থতা৷

মুসলিম জাহানে সংবাদ পরিবেশন, বিশ্লেষণ বিদেশী পত্রিকা থেকে অনুবাদ নানা আর্টিকেল লিখে ইসলামীধারায় নতুন লেখকদের যাত্রা শুরু৷
মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী আরবী উর্দু থেকে অনুবাদ করেন৷ স্মৃতিমূলক লেখা লিখেন৷ কলামও লিখেন৷ একাধিক বই প্রকাশিত৷ তিনি ইতিহাস বিষয়ে দক্ষ লেখক৷

lll4
মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন আরবী সাহিত্যেও দক্ষ৷ তিনি দেওবন্দে পড়েছেন৷ উর্দু থেকে দক্ষ অনুবাদক৷ মৌলিক লেখকও তিনি৷ সাহিত্যের ক্লাস, বক্তৃতার ক্লাস তাঁর সাহিত্যের পাঠশালায় চমৎকার সংযোজন৷ তাঁর গদ্যশৈলী অনন্য৷ তিনি দক্ষ প্রবন্ধকার৷ খতীব ও হাদীসের উস্তাযও৷ সাবলীল ভাষায় আলোচনা করেন৷
মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ প্রতিভাবান আলেম৷ সালিছ উর্দু বলতে পারেন৷ বলতে পারেন আরবীও৷ কলাম, সাক্ষাৎকার, অনুবাদ, সংবাদ বিশ্লেষণও তিনি দক্ষ৷ নিরেট সাহিত্যও তিনি দক্ষ৷ তাঁর কথা বলার উসলুব ও লেখার শৈলী অনুপম৷ গদ্যে অন্যেরচে পৃথক৷ চলনে বলনে লিখনে আভিজাত্য৷ সাহাবায়ে কেরামের গল্প, সবুজ গম্বুজের ছায়া তাঁর সাহিত্যর এক ঝলক৷

এই তিন তারকার জগতে সাহিত্যর আকাশে আরও কয়েকজন তারকা হলেন মাওলানা ইয়াহইয়াহ ইউসুফ নদভী৷ সাহিত্যের পুরো মজা তাজারুপে অনুভূত হয় তার গদ্যে৷ তিনি আরবীতে লিখেন আরবদের মতো৷ বাংলায় তিনি ভিন্নধারার গদ্যের জন্ম দিচ্ছেন৷ পাথরশিশু তাঁর সর্বশেষ বই৷ lll1

এই চারজনের তিন জন ময়মনসিহের৷ ময়মনসিহের গীতিকার শহরের লোক৷ মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীনের কর্মজীবন শুরু ময়মনসিহের৷ মুন্সিগঞ্জের অধিবাসী তবে সাহিত্যর রাজধানীর রাজা৷
এই তারকালোকের বাসিন্দাদের আরেক জন হলেন মাওলানা মাওলানা নাসীম আরাফাত৷ তিনি পাঠ্যবই রচনায় দক্ষ৷ দক্ষ অনুবাদেও৷ আরবীতে তিনি একাধিক কিতাব লিখেছেন৷ শিশু সাহিত্যে আগামী দিনে আরও বড় অবদান রাখবেন তিনি৷ জীবনী সাহিত্যে তিনি গঠনমূলক কাজ করে যাচ্ছেন৷ আরও অনেকই আসতে পারেন এই তালিকায় কিন্তু এই পাঁচতারা আমাদের সাহিত্যের আকাশে দ্রুবতারা৷ উজ্জল৷  বাংলা সাহিত্য এই কাফেলা নতুনধারার জন্ম দিচ্ছেন৷ প্রকাশিত হচ্ছে তাদের বই৷ পাঠক নতুন কিছু পাচ্ছেন৷ সম়দ্ধ হচ্ছে আমাদের বাংলা সাহিত্য৷

আআ

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ