বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


যারা বলেন দেশে গণতন্ত্র নেই; তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়: মোকতাদির চৌধুরী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

muktadir_chawdhuri

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। একজন প্রবীন রাজনীতিবিদ, ছাত্র রাজনীতির সিঁড়ি বয়ে এসেছেন এ পর্যন্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই তার রাজনীতিতে আসা। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। বাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ইমেজ, সাংগঠনিক অসাধারণ দক্ষতা ও সাবেক আমলা হিসাবে বেশ খ্যাতি আছে তার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিবও ছিলেন তিনি। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এই নেতা উৎসবমুখর কাউন্সিলের একাধিক উপকমিটির মেম্বার। প্রবীন এই নেতার কাছে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান  

রোকন রাইয়ান:  পাক্ষিক মত ও পথের সম্পাদক ও একাধিক বইয়ের রচয়িতা আপনি। এক সময়ের লেখক জীবন থেকে এখন রাজনৈতিতে। তো আপনি কোন জীবনকে প্রাধান্য দেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমার লেখার জীবনটা মূল না। আমি কদাচিৎ লিখি। আমি মূলত রাজনীতি করি। আমি লেখক থেকে রাজনীতিতে আসিনি। রাজনৈতিক জীবনই হলো আমার আসল জীবন। অবশ্য মাঝে আমি সরকারি চাকরিও করেছি। সরকারি কর্মকর্তা ছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলাম।

রোকন রাইয়ান: আপনার কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস ঐতিহ্য ও গৌরবের কথা জানতে চাই।
মোকতাদির চৌধুরী: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ হিসাবে জন্ম গ্রহণ করে। জন্মের সময় সভাপ্রতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি এবং শামসুল হক নামে একজন তরুণ রাজনীতিবিদ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে ছিলেন। কারাগার থেকেই তাকে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাধারণ যগ্ম সম্পাদক হিসাবে নির্বাচন করা হয়। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সাথে আওয়ামী লীগ যুক্ত হয়ে পরে। এই আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৪৮ সাল থেকে। এর পরে ১৯৫৪  সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়। এই  নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আরো অনেকগুলো দলের সাথে মিশে নির্বাচন করে। তার মাঝে নেজামী ইসলাম পার্টি অন্যমত। এই নির্বাচনে তারা জয় লাভ করে। তারা  সরকার গঠন করে শেরে বাংলা একেএম ফজলুল হকের নেতৃত্বে। এর পরে ১৯৫৫ সালে বিশেষ কাউন্সেলের মাধ্যমে আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম পরিবর্তন কর শুধু আওয়ামী লীগ করা হয়। কেননা মুসলিম থাকলে তো আর অন্য কোন ধর্মের লোকেরা আসতে পারে না। অথচ এই অঞ্চলে অনেক হিন্দু ছিলো খৃস্টান ছিলো। এর পরে শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয় আর আওয়ামী লীগের মাঝে একটা তারুণ্যের জোয়ার আসে। যাই হোক এরপরে বিভিন্ন চড়াই উৎড়াই যায় আওয়ামী লীগের উপর দিয়ে এর মাঝে আবার শেখ মুজিব আগরতলার মমলায় গ্রেফতারও হন। ১৯৬৭ একটা গণঅভ্যুত্থান হয়। আর এর মাধ্যমেই শেখ মুজিব ছাড়া পান। এর পরের ইতিহাস আপনাদের সবারই জানা।

[caption id="attachment_13730" align="aligncenter" width="670"]muktadi3 আওয়ামী লীগ অতীতেও মানুষের জন্য কাজ করেছে, বর্তমানেও করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তারপ্রমাণ হচ্ছে বর্তমানে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করছে যার ফলে আজ যারা অতি দরিদ্র তাদের হারও কমে গেছে।[/caption]

রোকন রাইয়ান:  অনেকেই বলেন আওয়ামী লীগ তাদের ঐতিহাসিক অবস্থান হারাতে শুরু করেছে। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মোকতাদির চৌধুরী: তাদের এই কথা আমি মানতে পারি না। আওয়ামী লীগ তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে না। বরং দিন দিন তার ঐতিহ্যকে আরো আঁকড়ে ধরছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ঐতিহ্য হলো ইতিহাসের পথ ধরে চলা। আমরা সেই পথেই চলছি।

রোকন রাইয়ান: শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, আর বর্তমানের আওয়ামী লীগ বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য কাজ করছে বলে অভিযো আছে, বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আওয়ামী লীগ অতীতেও মানুষের জন্য কাজ করেছে, বর্তমানেও করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তারপ্রমাণ হচ্ছে বর্তমানে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করছে যার ফলে আজ যারা অতি দরিদ্র তাদের হারও কমে গেছে। আওয়ামী লীগ আগেও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে এখনো তা করছে, সব সময় সংগ্রাম করতে হয়।

রোকন রাইয়ান: আওয়ামী লীগ জনগণের দল ছিলো, এখন যে পথে হাঁটছে, নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে পরিচয় দিচ্ছে তারপরও কি বলা যায় এটি জনগণের দল?
মোকতাদির চৌধুরী: এই বিষয়টা একেকজন একেকভাবে দেখবেন। কিন্তু আমি মনে করি আওয়ামী লীগ তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপরই আছে।

রোকন রাইয়ান: গত সাত বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তো মৌলিক কিছু উন্নয়নের কথা যদি বলতেন?
মোকতাদির চৌধুরী: প্রথমত শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দেশে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও আমাদের উন্নয়ন আছে। শিশু মৃত্যুরহারও কমেছে। আমরা সর্বদিক থেকেই উন্নয়ন করেছি। নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। কয়েক গুণ মানুষের বেতনবৃদ্ধি পেয়েছে এর মাধ্যমে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মোটকথা আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের উন্নয়নে গত ৭ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করে সফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে।

[caption id="attachment_13733" align="aligncenter" width="738"]muktadir শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দেশে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও আমাদের উন্নয়ন আছে। শিশু মৃত্যুরহারও কমেছে। আমরা সর্বদিক থেকেই উন্নয়ন করেছি।[/caption]

রোকন রাইয়ান: এতো উন্নয়নের মাঝেও তো আমরা খুন, গুমের মতো ঘটনা এবং গণতন্ত্র না থাকার যে আওয়াজ পাচ্ছি এই বিষয়ে আপনি কিছু বলুন।
মোকতাদির চৌধুরী: গণতন্ত্র না থাকার কথা যারা বলে, তাদের গণতন্ত্রের উপর কতটা বিশ্বাস আছে সেই বিষয়টাই ভেবে দেখা দরকার। এই যে জতীয়তাবাদি দল তারা যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন তারা গণতন্ত্রের চর্চা করেনি। যখন তারা ক্ষমতার বাইরে গেলেন তখন তারা নাশকতামূলক কর্যক্রম শুরু করলো। কিছুদিন আগেও তারা আগুন সন্ত্রাস করেছে।

রোকন রাইয়ান: আওয়ামী লীগের কাউন্সেলের প্রস্তুতি কেমন চলছে?
মোকতাদির চৌধুরী: খুব ভালো চলছে। আমিও আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি এ সম্মেলন আওয়ামী লীগের এক মাইল ফলক হবে।

রোকন রাইয়ান: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় নারী ক্ষমতায়নের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এই কাউন্সিলে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি কেমন হবে?
মোকতাদির চৌধুরী: এবার নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি পাবে। কেননা আমরা চাই সকল ক্ষেত্রে নারীদের আমরা ৩৩ ভাগ ক্ষমতায়ন।

রোকন রাইয়ান: আপনাদের কাউন্সিলে কারা আমন্ত্রিত হবে?
মোকতাদির চৌধুরী: জামায়াত ইসলাম ছাড়া এবং যারা যুদ্ধাপরাধের সাথে সম্পর্ক রাখে তারা ছাড়া সকলেই আমন্ত্রিত হবে।

muktadir2রোকন রাইয়ান: কাউন্সিলে বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণের কথা শোনা যাচ্ছে, পরিধিটা কেমন হতে পারে?
মোকতাদির চৌধুরী: বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি দল কাজ করছে। এখনো কনফার্ম হওয়া যায়নি বিশ্বের কোন রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। ধীরে ধীরে পরিষ্কার হবে এগুলো।

রোকন রাইয়ান: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে খুব শিগগির। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনারা কাকে সাপোর্ট করছেন?
মোকতাদির চৌধুরী: দল হিসেবে নয় আমি আমার সিদ্ধান্ত দিতে পারি। ব্যক্তিগতভাবে আমি হিলারি ক্লিনটনকে সাপোর্ট করি। তাকেই পরবর্তি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাই।

রোকন রাইয়ান: কিন্তু হিলারির সঙ্গে তো ড. ইউনূসের যোগাযোগ ভালো, সম্পর্কও বেশ। এটি কোনো সমস্যার কারণ হবে না তো আপনাদের জন্য?
মোকতাদির চৌধুরী: ধুর! এসব কোনো সমস্যাই না। কোনো ব্যক্তি গোষ্ঠী আমাদের সরকারের জন্য হুমকির কারণ নয়। এগুলো ফালতু আলোচনা।

রোকন রাইয়ান: আমাদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মোকতাদির চৌধুরী: আপনাকেউ ধন্যবাদ।

এইচএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ