বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ভারতের বিরুদ্ধে কতটা তৈরি পাকিস্তান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ourislam-ip-copyআওয়ার ইসলাম : ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মিরের উরিতে হামলার পটভূমিতে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তার মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন ভারত, সীমান্ত পেরিয়ে সীমিত আকারে একটি সামরিক তৎপরতা চালাতে পারে বলে কিছুটা হলেও একটা আশঙ্কা পাকিস্তানে তৈরি রয়েছে।

"তবে সেরকম পরিস্থিতির জন্য ভারত ও পাকিস্তান- কোনো দেশেরই কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। একবার যদি এ ধরণের যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে কিভাবে তা বন্ধ করা যাবে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যাবে- তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যেই উদ্বেগ রয়েছে।'' বলছেন ইসলামাবাদে নিরাপত্তা এবং সামরিক বিশ্লেষক ড: আয়েশা সিদ্দিকা।

দুই চির-বৈরী দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে গত সপ্তাহের জঙ্গি হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর। ভারত এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে, এমন জল্পনা চলছে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে। এরকম আশংকা থেকে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ দেশটির উত্তরাঞ্চলের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কাশ্মিরের সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার জন্য ভারত দায়ী করছে পাকিস্তানকে, আর পাকিস্তান পাল্টা অভিযোগ করছে কাশ্মীরে তীব্র সহিংস গণবিক্ষোভ থেকে দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা করছে ভারত।

ভারতের ভেতরে জঙ্গি হামলার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার কাশ্মীরে উরিতে হামলার পর যেভাবে যুদ্ধের কথা ভারতের মধ্যে থেকে শোনা যাচ্ছে, তার নজির খুব কম। ভারতের রাজনৈতিক এবং সামরিক মহলের একটা বড় অংশ গত কয়েক দিন ক্রমাগত বলছেন, পাকিস্তানকে একটা শিক্ষা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আরো একটি যুদ্ধ কি আসলেই হতে পারে? পাকিস্তান কি সেরকম কোনো আশঙ্কা করছে? ড: আয়েশা সিদ্দিকা বলছেন পাকিস্তানের ভেতর একটা চিন্তা কাজ করছে, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা যেখানে রয়েছে, সেখানে ভারত, পাকিস্তানের ভেতর দুঃসাহসিক কোনো অভিযানের আগে দশবার চিন্তা করবে। কিন্তু তারপরও পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে এরকম কথা ঘোরাফেরা করছে যে ভারত হয়তো সামরিক পন্থা নিতেও পারে। পাকিস্তানের এরকম আশঙ্কার একটা কারণ যে কাশ্মিরে বিপুল সৈন্য সমাবেশের খবর ।

ভারত যদি সীমিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা হবে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি। দু তিনটি সম্ভাব্য টার্গেট হয়ত ভারতের থাকবে। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি জায়গাগুলোতে কোনো জঙ্গি শিবির আছে কিনা সেটা ভারত খুঁজে ধ্বংস করতে চাইবে। উরিতে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে এই ভারতীয় সেনা ব্যারাকেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৮ ভারতীয় সৈন্য। এছাড়া লস্কর-ই-তইবা'র বেশ কিছু সদর দপ্তর হয়তো সম্ভাব্য টার্গেট হতে পারে। তবে এগুলোর সবগুলোই ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায়।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এসব নিয়ে প্রস্তুত। তবে পাকিস্তান যদি পাল্টা হামলা করে এবং ভারত যদি পাকিস্তানের ভেতরে কিছু সৈন্য হারায়, তাহলে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী হবে - সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ভারত কোনো সামরিক অ্যাডভেঞ্চারে যাবে- এখনো তার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই। বরঞ্চ যত দিন যাচেছ আশঙ্কা তত দূরে সরে যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন ভারত বরঞ্চ এখন চাইছে কাশ্মিরের এই ঘটনা নিয়ে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে একঘরে করে ফেলতে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের সামনে বিকল্প কী?

ড: আয়েশা সিদ্দিকা বলছেন, তিনি মনে করেন পাকিস্তানের জন্য এখন যেটা জরুরি সেটা হলো আফগানিস্তান বা বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট করা। তবে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সামনে পথ চীন এবং মুসলিম কিছু দেশের শরণাপন্ন হওয়া। তার বাইরে রয়েছে তুরস্ক। পাকিস্তান এখন আন্তর্জাতিক ফেরামে বোঝাতে চাইছে যে কাশ্মিরে ভারত যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তার থেকে দৃষ্টি ফেরাতে উরির এই ঘটনা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ভারত তা নিয়ে এত চেঁচামেচি করছে। সেটাই এখন পাকিস্তানের কৌশল।

সূত্র : বিবিসি

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ