শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


ভিক্ষুক হতে তদবির!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

fokir-300x216খালিদ হাসান, ঝিনাইদহ থেকে

৯৮ বছরের বৃদ্ধ একদিল মন্ডল, তার বাড়ি শৈলকুপার দেবতলা গ্রামে। ছেলে-মেয়ে তাদের দেখভাল করে না। তাই এই বয়সেও ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাকে, সাথে আছেন বৃদ্ধা স্ত্রী। গত ৪ বছর ধরে ভিক্ষা করছেন। সরকারিভাবে ভিক্ষুক তালিকা ফরম পূরণ হচ্ছে, অথচ তার নাম সেই তালিকাতে নেই। তাকে কেউ বলেওনি।

৮০ বছরের বৃদ্ধা আউশিয়া গ্রামের বিবিজান, তিনিও প্রায় ২৫ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু জানেন না সরকার পূনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন ভিক্ষুকদের। এমন অসংখ্য ভিক্ষুক রয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায়। শুধু শৈলকুপা নয় জেলা জুড়েই তালিকায় নাম লেখাতে ব্যস্ত সুযোগ সন্ধ্যানী কিছু মানুষ। আর এতে নিবন্ধনে বাদ পড়তে হচ্ছে প্রকৃতি ভিক্ষুকদের।

ভিক্ষুক সমিতির হিসাব মতে শৈলকুপায় প্রায় সাড়ে ৩শ ভিক্ষুক রয়েছে। অথচ ৬’শতাধিক মানুষ এই ভিক্ষুক তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে ইতিমধ্যে। এ তালিকা রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে। যারা কোনদিনও ভিক্ষাবৃত্তি বা অসহায় জীবনযাপন করেনি এমন মানুষের নামেই পরিপূর্ণ ভিক্ষুক তালিকা ফরম। এনিয়ে খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ইতিমধ্যে ভিক্ষুক তালিকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে । তালিকায় ৬’শ জনের নাম অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। এদের অর্ধেকই ভিক্ষুক নয় বলে প্রকৃত ভিক্ষুকদের অভিযোগ। সরকার কিছু সুযোগ-সুবিধা দিবে ভিক্ষুকদের তাই অনেক সাধারণ মানুষ, স্বচ্ছল মানুষ রীতিমতো ধর্না ধরে, তদবির করে, লড়াই করে তালিকায় নাম দিয়েছে। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ তালিকা সম্পন্ন করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিস।

শৈলকুপার পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। তালিকা অনুসারে পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডেই ১’শ ৪৭জন অন্তর্ভূক্তি হয়েছে। এছাড়া ত্রিবেণী ইউনিয়নে ৩১ জন, মির্জাপুর ইউনিয়নে ৫৫জন, দিগনগর ইউনিয়নে ১৫জন, কাঁচেরকোল ইউনিয়নে ২৭জন, সারুটিয়া ইউনিয়নে ৩৫জন, হাকিমপুর ইউনিয়নে ৩০জন, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নে ৩৭জন, মনোহরপুর ইউনিয়নে ৩৮জন, বগুড়া ইউনিয়নে ২৯ জন, আবাইপুর ইউনিয়নে ৩৮জন, নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নে ১৮জন, উমেদপুর ইউনিয়নে ৩৬জন, দুধষর ইউনিয়নে ৪৭জন ও ফুলহরী ইউনিয়নে ২৩ জনের নাম ভিক্ষুক তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

শৈলকুপা ভিক্ষুক সমিতি নামে ভিক্ষুকদের একটি সংগঠন রয়েছে। যারা বিভিন্নভাবে ভিক্ষুকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে। এই সংগঠনের একজন সদস্য আউশিয়া গ্রামের ইনতাজ শেখ। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, তালিকায় তার নাম দেয়া হয়েছে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা ভিক্ষুক না এমন নাম দেয়া হয়েছে। তাদের ভিক্ষুক সমিতির সবার নাম দেয়া হয়নি তালিকায়।

শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান জানান, তাদের ইউনিয়নে ২১টি গ্রাম রয়েছে, এসব গ্রাম থেকে বেঁছে মাত্র ৩৫ জনের নাম দেয়া হয়েছে। যারা প্রকৃতভাবেই ভিক্ষুক।

১২ নং নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জানান, তালিকা হয়েছে তবে কারা অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, তা বলতে পারছেন না।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. দিদারুল আলম এ প্রসঙ্গে জানান, ভিক্ষুকদের পূনর্বাসনের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তাদের দেয়া তালিকা মতে ৬০৬ জনের নাম দেয়া হয়েছে। তবে এই তালিকার নাম নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, প্রকৃত অনেক ভিক্ষুকের নাম বাদ পড়েছে ওই তালিকায়।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ