শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


বাংলাদেশ থেকে যারা অংশ নিচ্ছেন অলিম্পিকে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

rio

শামীম হোসেন: রিও অলিম্পিকের পর্দা উঠতে আর কয়েক ঘণ্টা বাকি। শুক্রবার ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হবে এর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এবারের অলিম্পিকে ভিন্ন ভিন্ন ইভেন্টে লড়বেন সাত বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ। ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় এই টুর্নামেন্টে এবারই বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করছেন। তাই কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমীদের প্রত্যাশাও বেশি। তবে অলিম্পিকের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে তাঁরা নিজেদের সেরাটা দেয়ার কথা বলেছেন। এবার একনজরে দেখে নেয়া যাক বাংলাদেশি সাত ক্রীড়াবিদের সাফল্য-সম্ভাবনা।

গলফ: সিদ্দিকুর রহমান 

প্রথম বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাও বহন করবেন তিনি। দেশের প্রথম পেশাদার গলফার সিদ্দিকুর এ পর্যন্ত দুটো এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জিতেছেন। এবার তাঁর সামনে অলিম্পিকে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার সুযোগ।

শ্যুটিং: আব্দুল্লাহ হেল বাকি 

২০০৮ সালে ইসলামাবাদ সাফ শ্যুটিংয়ে প্রথম অংশ নিয়ে দলগত বিভাগে স্বর্ণপদক জিতেন শুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকির। এরপর টানা চার বছর ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে স্বর্ণ জেতেন তিনি। বাকির ক্যারিয়ারের সবচেয়ের সেরা সাফল্য ২০১৪ গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে। ভারতের অভিনব বিন্দ্রার কাছে হেরে রুপা জেতেন তিনি। অবশ্য এই বিন্দ্রাকে হারিয়েই কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণ জিতেছিলেন আসিফ।সেই বাকি এবারের অলিম্পিকের শ্যুটিংয়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অংশ নিচ্ছেন। কমনওয়েলথ গেমসে সাফল্য পাওয়ায় এবারের অলিম্পিকেও তাঁর প্রতি দৃষ্টি থাকবে সবার।

অ্যাথলেটিকস: মেজবাহ আহমেদ 

২০০৯ সালে জাতীয় জুনিয়র মিটে প্রথম অংশ নিয়ে চমকে দেন মেজবাহ আহমেদ। জিতে নেন ১০০ ও ২০০ মিটারে দৌড়ে স্বর্ণ পদক। তখনই জানিয়ে দেন ভবিষ্যতে কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা রাখেন তিনি। সে ধারাবাহিকতায় মেজবাহ দারুণ কিছু সাফল্য এনে দিয়েছেন দেশকে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসে প্রথমবার অংশ নিয়েই দ্রুততম মানব হন। এরপর টানা তিনটি জাতীয় মিটে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রেখেছেন বাগেরহাট থেকে উঠে আসা এই ক্রীড়াবিদ।

তাই এবার সুযোগ পেলেন অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার। উসাইন বোল্টকে দেখেই অলিম্পিকে অংশ নেয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন, এবার তাঁর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। হয়তো নিজের স্বপ্নের নায়ককে কাছ থেকে দেখারও সুযোগ পাবেন।

অ্যাথলেটিকস: শিরিন আক্তার 

টানা দুই মৌসুম দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। সেই সুবাদে এবারের অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেন তিনি। নিজের প্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার দৌড়ে দেশেকে সাফল্য এনে দিতে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে গেলেন সাতক্ষীরা থেকে উঠে আসা এই অ্যাথলেট। বিকেএসপিতে পড়ার সময় শিরিন স্বপ্ন দেখতেন একদিন অলিম্পিকে অংশ নেবেন। এবার তাঁর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে।

সাঁতার: মাহফিজুর রহমান 

বাংলাদেশের হয়ে পর পর দু’টি অলিম্পিকে অংশ নেয়া এবারের একমাত্র ক্রীড়াবিদ সাতারু মাহফিজুর রহমান। ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে অংশ নেবেন মাহফিজুর রহমান।গত লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে পতাকাও বহন করেছিলেন তিনি। পাবনা থেকে উঠে আসার এই সাঁতারু ২০০৩ সালে জাতীয় সাঁতারে প্রথম অংশ নিয়েই স্বর্ণপদক জেতেন।

ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে বহু সাফল্য এনে দিয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই সাঁতারু। এ ছাড়া ২০১২ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে, ২০১৩ সালে স্পেনের বার্সেলোনায় ইস্তাম্বুলে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে ও ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নিয়েছেন মাহফিজুর।

সাঁতার: সোনিয়া আক্তার 

সাঁতারের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে অংশ নেবেন সোনিয়া আক্তার। এবারই প্রথম অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ২০০৬ সালে জাতীয় জুনিয়র সাঁতারে অংশ নিয়ে ১১টি স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। আর ২০১০ সালে ১১টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে ১০টি স্বর্ণপদক জিতেছিলেন তিনি। যাতে নয়টি জাতীয় রেকর্ড ছিল। প্রথম আন্তর্জাতিক মিটে অংশ নেন ২০১০ সালে সিঙ্গাপুরে যুব অলিম্পিক গেমসে। ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যে যুব কমওয়েলথ গেমসে এবং ২০১৫ সালে রাশিয়ার কাজানে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছেন তিনি।

আর্চারি: শ্যামলী রায়

প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছেন শ্যামলী রায়। অলিম্পিকে তিনি আর্চারির রিকার্ভ বো ইভেন্টে অংশ নেবেন। অবশ্য বড় মঞ্চে এর আগেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে তুরস্কে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে, একই বছরে ব্যাংককে এশিয়া কাপ ও ইনচন এশিয়ান গেমসে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই ক্রীড়াবিদ।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে রিও অলিম্পিক শেষ হবে আগামী ২১ আগস্ট। এবারের অলিম্পিকে পৃথিবির বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করবেন। অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেট, অফিসিয়াল, সাংবাদিক ও পর্যটকদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে রিওতে ৮৫ হাজার নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হবে। যার মধ্যে থাকবে ৪৭ হাজার পুলিশ ও ৩৮ হাজার সেনা সদস্য।

এআর


সম্পর্কিত খবর