বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


‘রমজানে আলেমরা ফ্রি কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

harun or rashid copyমুফতি হারুন আর রশিদ। বিশিষ্ট আলেমে দীন। ঢাকা সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্ট্যাডিজ এর বিভাগীয় প্রধান। রোজা ও রমজান সম্পর্কে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি দিদার শফিক

অপরাধমুক্ত জীবন গঠনে রোজার প্রভাব মূল্যায়ন করুন।
নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ অপরাধমুক্ত জীবন গঠনে রোজার প্রভাব ব্যাপক। যথার্থভাবে সিয়াম সাধনা করা হলে রোজা পালনকারীর উপর রোজার প্রভাব পড়বে নিঃসন্দেহে। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই রোজাদার রোজা রাখে। পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকে। ফলে রোজাদার ধৈর্য ও সংসমতা শিখে। রিপু দমনের প্রশিক্ষণ পায়। আর রিপু দমিত হলেই মানুষের পক্ষে সম্ভব অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা। সুদ-ঘুষ জিনা-ব্যভিচারসহ যাবতীয় অনৈতিক কাজকর্ম থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার এক ফলপ্রসূ-কার্যকর প্রশিক্ষণ হল রোজা। হাদিসে এসেছে, রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢালস্বরূপ। পাপমুক্ত জীবন যাপিত হলেই তো জান্নাতের পথ উন্মোচিত হয়। অন্য এক হাদিসে এসেছে, সে তোমাকে গাল-মন্দ করলে বা বিবাদে লিপ্ত হতে চাইলে তুমি বলো, আমি সায়েম; রোজাদার।

রোজা রাখা বা না-রাখার বিধান কী?
প্রাপ্ত বয়স্ক, মুকিম, সুস্থ হলে রোজা রাখা ফরজ। ফরজ মানেই হল অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, দহে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ রাসুল সা. বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচ জিনিসের উপর স্থাপিত। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, মুহাম্মদ সা. তার বান্দা ও রাসুল এ কথার স্বাক্ষ্য দেওয়া, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত দেওয়া, রমজানের রোজা রাখা ও বায়তুল্লাহর জিয়ারত করা। রোজা ইসলামের একটি মৌলিক বিধান। রোজা না-রাখা মারাত্মক গোনাহ। কবিরা গোনাহ।

যারা স্বেচ্ছায় রোজা রাখে না এবং যারা রোজা রাখতে অক্ষম ইসলাম তাদের ব্যাপারে কী বলে?
রোজা ফরজ হয়েছে এমন কেউ স্বেচ্ছায় রোজা না রাখলে রোজার কাজা ও কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। এক বা একাধিক রোজা না রাখলে কাফফারা বা শাস্তিস্বরূপ লাগাতার ৬০টি রোজা রাখতে হবে। আর রোজাকে হেয় জ্ঞান করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বা ইসলামকে কটাক্ষ করে কিংবা রোজাকে অস্বীকার করে না-রাখলে ইমান থাকবে না। কাফের হয়ে যাবে। ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। তবে অসুস্থতা, বার্ধক্য বা অন্য কোনও কারণবশত রোজা রাখতে অক্ষম হলে এবং রোজাকালিন সক্ষমতা ফিরে না এলে রোজা না-রাখার অনুমতি আছে। কিন্তু পরে সক্ষমতা ফিরে এলে ছুটে যাওয়া রোজার কাজা করতে হবে। সক্ষমতা ফিরে না এলে রোজার ফিদইয়া দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফিদইয়া কেবল সে ব্যক্তির জন্যই প্রজোয্য যে আর রোজা রাখার সক্ষমতা ফিরে পাবে না বলে প্রবল ধারণা হয়। এখানে অনেকে ভুল করে, মনে করে রোজা না রেখে ফিদইয়া দিয়ে দিবো। এটা ভুল ধারণা। সঠিক কথা হল, সুস্থ মানুষের ফিদইয়া দেওয়ার নিয়ম নেই। রমজানে নারীদের মাসিক হলে মাসিক চলাকালিন রোজা রাখা হারাম। মাসিক শেষ হলে রোজা রাখবে এবং মাসিককালিন ছুটে যাওয়া রোজাগুলো রমজান পরবর্তী সময়ে রাখতে হবে।

রোজাকে হেয় জ্ঞান করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বা ইসলামকে কটাক্ষ করে কিংবা রোজাকে অস্বীকার করে না-রাখলে ইমান থাকবে না। কাফের হয়ে যাবে। ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। তবে অসুস্থতা, বার্ধক্য বা অন্য কোনও কারণবশত রোজা রাখতে অক্ষম হলে এবং রোজাকালিন সক্ষমতা ফিরে না এলে রোজা না-রাখার অনুমতি আছে।

রমজানে কোন কোন আমল অবশ্যই করতে হবে?
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২০ রাকাত তারাবিহ এর সালাত এবং রোজাগুলো তো অবশ্যই রাখতে হবে। তবে রমজানে সময়গুলো বেশি বেশি ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ, রমজান ইবাদতের মাস। অল্প আমলে বেশি সওয়াবপ্রাপ্তির মাস।

রমজানে বিশেষভাবে কী আমল করা যেতে পারে?
রাসুল সা. এর উপর দরুদ পাঠ ও কোরআন তিলাওয়াত রমজানের বিশেষ আমল হতে পারে।

‘সমাজ ভাবনা’ থেকে আলেম এবং বিত্তবান সমাজের রমজানকেন্দ্রিক কোন শিক্ষা বা কল্যাণমূলক উদ্যোগ নেওয়া যায় কি?
অবশ্যই, অনেক কিছু করার আছে। আলেমগণ মহল্লায়-মহল্লায় বা মসজিদকেন্দ্রিক সাধারণ মানুষকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শেখানোর উদ্যোগ নিতে পারেন। ‘দীন শিখি’ শিরোনামের আওতায় প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের একটি আলোচনা সভা করতে পারেন। জরুরি মাসয়ালা মাসায়েল, নামাজ-রোজা, ওজু-গোসল, পাক-নাপাক সংক্রান্ত নিত্য প্রয়োজনীয় মাসায়েল বর্ণনা বা প্রতিদিন ২টি কুরআনের আয়াত এবং দুটি হাদিস এর তালিম হতে পারে এ আলোচনা সভার আলোচ্যবিষয়। দান তো কমবেশ সবাই করে। তবে রমজানে বিত্তবানদের দানের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। জাকাত-ফেতরা তো আদায় করবেই। দারিদ্যবিমোচনে তাদের বড় ভূমিকা রাখা দরকার। দরিদ্র, অসহায় প্রতিবেশীকে ঈদের পোশাক, দু মুঠো ভাতের জোগাড় নেই এমন দরিদ্রদের ঘরে একটু আন্তরিক হলেই পাঠিয়ে দিতে পারে চালের বস্তা। রমজানে সাহরি ইফতারের জন্য কিছু নগদ টাকাও দিতে পারে। বেশি বেশি দান সদকা করার মাধ্যমে দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারে।

আওয়ার ইসলামকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ