মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :

ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

A-07খ্যাতিমান টিভি আলোচক অধ্যাপক ড. খোন্দকার আ ন ম আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর আর নেই । গতকাল বুধবার (১১ মে) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকায় আসার পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাগুরা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহ রাজিউন । প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঝিনাইদহ থেকে ঢাকাগামী মাগুরার বাস টার্মিনালের পাশে পারনান্দুয়ালী পৌঁছলে তার ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারের সঙ্গে একটি কাভার্টভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ও গাড়িচালক সেন্টু। এছাড়া আহত হয়েছেন আসাদ ও বাহাউদ্দিন নামে দু’জন।

ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ছিলেন একাধারে ইসলামী চিন্তাবিদ, টিভি আলোচক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক আলেম, গবেষক ও লেখক । তিনি পিস টিভি, ইসলামিক টিভি, এটিএন ও এনটিভিসহ বিভিন্ন টিভিতে ইসলামের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। ফরেন টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভি ইউএস-এর উপদেষ্টা ছিরেন তিনি । এছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সিম্পোজিয়াম, সেমিনার, মসজিদের খুতবায় ও টিভি আলোচনায় খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে দেশের সহজ-সরল মুসলমানদের ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়গুলো আলোচনা করে জনসচেতনতা তৈরি করে আসছিলেন।

এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বের জন্ম হয় ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে। তার পিতা খোন্দকার আনওয়ারুজ্জামান ও মা বেগম লুৎফুন্নাহার।তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন । এরপর একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৭৫ সালে আলিম এবং ১৯৭৭ সালে ফাজিল ও ১৯৭৯ সালে হাদিস বিভাগ থেকে কামিল পাস করার উচ্চতর শিক্ষার জন্যে সৌদি আরব গমন করেন। রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮৬ সালে অনার্স, ১৯৯২ সালে মাস্টার্স ও ১৯৯৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. জাহাঙ্গীর ছাত্র জীবনে তুখোড় মেধাবী হিসেবে পরিচত ছিলেন । রিয়াদের মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নলে তিনি বর্তমান সৌদি বাদশা ও তৎকালীন রিয়াদের গভর্নর সালমান বিন আব্দুল আজিজের হাত থেকে পর পর দু’বার সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায, বিন উসায়মিন, আল জিবরিন ও আল ফাউজানের মতো বিশ্ববরেণ্য স্কলারদের সান্নিধ্য লাভে সক্ষম হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি উত্তর রিয়াদ ইসলামি সেন্টারে দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে ইসলামি উন্নয়ন ও আরবি ভাষা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকার দারুস সালাম মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শায়খুল হাদিস হিসেবেও পাঠদান করতেন। বাংলা ইংরেজি ও আরবি ভাষায় সমাজ সংস্কার, গবেষণা ও শিক্ষামূলক প্রায় অর্ধশত গ্রন্থ গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইংরেজি ভাষায় A Woman From Desert (1995), Guidance For Fasting Muslims 1997), A Summary of Three Fundamentals of Islam (1997); আরবি ভাষায় লিখিত ‘আদাবুল হাদিস’ (২০০৭); বাংলায় রোযা (১৯৯৫), ইসলামের তিন মূলনীতি (১৯৯৭), একজন জাপানি নারীর দৃষ্টিতে হিজাব, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, এহইয়াউস সুনান, কোরআন সুন্নাহর আলোকে পোশাক প্রভৃতি । এ ছাড়া তিনি মুসনাদে আহমাদসহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন।

ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অত্যন্ত সদালাপী, বিনয়ী ও যুগসচেতন মানুষ । মুসলিম উম্মাহর জন্য অভাবনীয় দরদ পোষণ করতেন তিনি এবং উম্মাহর ঐক্য নিয়ে তার ভাবনা ছিলো সীমাহীন । ব্যক্তি জীবনে হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটি ফুরফুরা শরীফের বড় হুজুর কেবলার বড় সাহেবজাদা ঢাকার দারুসসালামের আনসার সিদ্দিকীর জামাতা। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলে ওসামা খন্দকার সৌদি আরবের রিয়াদ ইউনিভার্সি টিতে অধ্যায়নরত।

ঝিনাইদহ শহরের গোবিন্দপুরে আল ফারুক একাডেমি ও আস সুন্নাহ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন বরেণ্য এই ইসলামী ব্যক্তিত্ব। সেখানে ছেলেমেয়েদের হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব হিসেবে কাজ করেছেন শিক্ষা ও ঝিনাইদহের চ্যারিটি ফাউন্ডেশনে, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইনস্টিটিউটের। তিনি ঝিনাইদহ জামে মসজিদের খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দেশজুড়ে তার হাজার হাজার গুণগ্রাহী ও ভক্ত রয়েছেন। তার মৃত্যুর খবরে ছড়িয়ে পড়লে ঝিনাইদহ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এবং সারা দেশে তার ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ইবি শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন শিক্ষক-সংগঠন ও পেশার মানুষ।

একমাত্র ছেলে ওসামা সৌদি থেকে ফেরার পর আজ বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব জানাজা অনুষ্ঠিত হবে । পরে তার নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান আস সুন্নাহ ট্রাস্ট মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং জনপ্রিয় এ আলেমকে। ঝিনাইদহ বয়েজ স্কুল মাঠে জানাজা হবে। জানাজা পড়াবেন স্যারের ছেলে ওসামা খোন্দকার।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ