গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো: আজমত উল্লা খান।
আজ রোববার (২১ মে) সকালে শহরের প্রকৌশলী ভবন মিলনায়তনে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
ঘোষিত ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ সিটি করপোরেশন গঠন ছাড়াও নাগরিক সেবায় নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। নাগরিকদের হোল্ডিং কর সহনীয় করা, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি সরবরাহ, যানজট নিরসনে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন ইশতেহারে।
এ সময় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, অ্যাডভোকেট ওয়াজউদ্দিন মিয়া, আফজাল হোসেন সরকার রিপন, অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, ইলিয়াস আহমেদ, মজিবুর রহমান, আব্দুল হাদী শামীম, অ্যাডভোকেট রিনা পারভীন, মাসুদ রানা এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।
আজমত উল্লা খান বলেন, তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে ইশতেহারে ঘোষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে “সপরামর্শক কমিটি/নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি” গঠন করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কল্পে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া স্বল্পমূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মৃত্যুর পর প্রয়োজন অনুযায়ী কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিসহ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকার্ড/লাল কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণসহ সরকারের সহযোগিতায় সমগ্র গাজীপুরে সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন এবং সহজ পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বর্জ্যকে জ্বালানি শক্তিতে রুপান্তরিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে বর্জ্য ও দুর্গন্ধমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২৮ দফা ইশতেহারের মূল কথা : নির্বাচনী ইশতেহারে আজমত উল্লা খান যে ২৮ টি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন, তা হচ্ছে- পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে পরামর্শ কমিটি/নগর উন্নয়ন সমন্বয়ক কমিটি গঠন, সেবার মান বৃদ্ধিকরণ, হোল্ডিং কর, অধিগ্রহণকৃত ভূমির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজনের নামে রাস্তার নামকরণ ও নির্মাণ কাজের গুণগতমান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন।
যানজট নিরসন, পার্কিং-ফুটপাতসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক, শ্রমিক কর্মচারী ও বস্তিবাসীদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ। শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ী সামাজের ভোগান্তি কমাতে জিসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে হেল্প-ডেক্স তৈরি, ওয়ার্ড সেন্টার ও ডিজিটাল কামান্ড সেন্টার নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসারের উদ্যোগ, ক্রীড়া উন্নয়ন, সাংবাদকর্মীদের সহায়তা, বয়স্ক-প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তা প্রদান, পার্ক-উদ্যান নির্মাণ ও উন্নয়ন, ঈদগাহ-কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা, জলাশয় দখলমুক্ত-নদী ও পরিবেশ রক্ষা, মশক নিধন, জিসিসির কাঁচা বাজার ও মার্কেট আধুনিকীকরণ ও হকারদের পুনর্বাসনের বাবস্থা, বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, গাজীপুরের ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা, নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টি ও স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৮ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ২৪৭ জন কাউন্সিলর ও ৭৯ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
টিএ/