সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া শামীমাবাদের ১৪৪৪-৪৫ হিজরী শিক্ষাবর্ষের 'ইফতিতাহ দরস' জামেয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
আজ সকাল ১০:৩০ মিনিটে জামেয়ার শিক্ষক হাফিয মাওলানা আবু সুফিয়ান নাছিমের সঞ্চালনায় শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত করেন জামেয়ার হিফয বিভাগের শিক্ষক হাফেয তোফায়েল আহমদ হাফি.।
উদ্বোধনী বক্তব্য পেশ করেন জামেয়ার সদরুল মুদাররিসীন মুফতী সায়েম কাসেমী দা. বা.। তিনি তাঁর বক্তব্যে হাদীসের সূত্র ধরে ছাত্রদেরকে অভিবাদন জানান। তিনি বলেন;
প্রিয় তালেব ইলম ভাইয়েরা! দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে আপনারা এখানে এসেছেন। ইফেতেতাহী মজলিসের সূচনা বক্তব্য সকল আসাতিযাদের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের খেদমতে কিছু কথা আরজ করতে চাই।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা.নির্দেশ পালনার্থে হযরত আবু সাইদ খুদরি রা. যেকথা বলেছিলেন, আমরাও আজ হুবহু সে কথাই বলছি, মারহাবান বিওয়াসিয়্যাতি রাসুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম..(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওসীয়তের লোকদেরকে স্বাগতম)
প্রত্যেক জামাতেই বিভিন্ন অঞ্চল, বিভিন্ন পরিবেশ ও মেজাজের তালাবা একত্রিত হয়েছেন। প্রত্যেকেই দুইটি বিষয় লক্ষ্য রাখবো ১. ক্লাসের কেউ আমার বন্ধু ও নয় শত্রু ও নয় । ২. আমি যেন সবচেয়ে ভালো হই। আমার যদি কোন ভালো অভ্যাস থাকে তাহলে সেটা ধরে রাখা, এবং অন্যান্য যাদের মধ্যে যে ভালো গুণ আছে সেটা নিজে ধারণ করা।
মূল অনুষ্ঠানে তালীমাত সংক্রান্ত নীতিমালা পেশ করেন, জামেয়ার নাযিমে তালীমাত মুফতী খাইরুল ইসলাম হবিগঞ্জী। ছাত্রদের সামনে সবিস্তারে এসব নীতিমালা পেশ করে সবাইকে যুগ সচেতন আদর্শ তালিবুল ইলম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন।
আবাসিক নীতিমালা সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পেশ করেন জামেয়ার নাযিমে দারুল ইকামা মুফতী আবদুল কাইয়ুম সাহেব। তিনি তাঁর বক্তব্যে আবাসিক নীতিমালার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে ইলমে-আমলে উন্নতি সাধনের প্রতি আগ্রহী হওয়ার কথা বলেন।
মোবারক এই মজলিশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন, জামেয়া দরগাহ'র মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস মুফতী মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী দা.বা.। তাঁর বয়ানের পূর্বে জামেয়ার মুহতামিম হাফিয মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ সাহেব ছাত্রদেরকে তারবিয়াতী নাসীহা পেশ করেন। তিনি বলেন; ভর্তির নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কোটা পূর্ণ হয়ে যাওয়া এবং যথাসম্ভব দ্রুত সবক শুরু করতে পেরে আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। এখনো সিলেটের অনেক মাদরাসায় ভর্তি কার্যক্রম চলছে। জামেয়া শামীমাবাদের অনন্য বৈশিষ্ট যে; আমরা কালবিলম্ব না করে সময়ের গুরুত্ব দিয়ে ১৫ই শাওয়ালই দরস শুরু করতে পেরেছি।
সর্বশেষ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রতি জামাতের ছাত্রদের সবকের ইফিততাহ করেন। পরে তিনি ছাত্রদেরকে গুরুত্বপূর্ণ নাসীহা পেশ করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন; তালিবে ইলম এর সমপরিমান মর্যাদা আসমানের নীচে ও যমীনের উপরে আর কারো নেই। তবে এজন্য শর্ত হলো; সত্যিকারের তালিবে ইলম হতে হবে।
সত্যিকারের তালিবে ইলম হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে মাদরাসার সকল কানুন পরিপূর্ণ রূপে পালন করতে হবে— চাই তা আমার বুঝে আসুক আর না আসুক। এখলাসের কথা বলতে গিয়ে বলেন, হযরত শাইখুল হিন্দ রহ. বলেন যদি আল্লাহর জন্যে পড়ো এবং আল্লাহর জন্যই পড়াও তাহলে দুনিয়াতে কোন পেরেশানি থাকবে না। আমাদের বড়দের তো জুতার ভিতরেও মানুষ টাকার বান্ডিল রেখে দিত। অতএব ছাত্র জীবনে মেহনত করো, অত:পর তাযকিয়ায়ে নফসের মেহনত করো। আল্লাহর ওয়াদা তিনি অবশ্যই সকল রাস্তা খুলে দিবেন।
তিনি তাঁর বয়ানে সামনের সবক মুতালার গুরুত্ব প্রদান করেন এবং সর্বশেষ নফল নামাজের প্রতি তাগিদ দিতে গিয়ে বলেন; দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সাথে যেসব নফল রয়েছে সেগুলো আদায় করাই যথেষ্ট। এতে লাভ হবে আপনি আপনার কাজে যথেষ্ট ফায়দা পাবেন, এবং নিয়মিত নফল আদায় করলে মুস্তাজাবুদ্দাওয়া হয়ে যাবেন।
পরিশেষে হযরত গাছবাড়ী হুজুর দা.বা. এর আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে মজলিসের সমাপ্তি হয়।
উল্লেখ্য যে; এবছর জামেয়ায় আদব বিভাগে ৫২ জন, কিতাব বিভাগ (ইবতেদাইয়াহ ৫ম–মেশকাত) ২২৪জন, হিফয বিভাগে ১৭০ জন,নূরানী বিভাগে ১৪০ জন মোট ৫৮৬ জন ছাত্র ভর্তি হয়েছে।