মসজিদ ও মাদ্রাসা দ্বীনের মারকায বা কেন্দ্র। যারা মসজিদ মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন, তারা দ্বীনের মারকায পরিচালনার মত গুরু দায়িত্ব পালন করেন। আর যে দায়িত্ব যত গুরুবহ সে দায়িত্ব নিয়ম মোতাবেক সুষ্ঠভাবে পালন করলে যেমন ছওয়াব বেশি, তেমনি সে দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে অনিয়ম ও ত্রুটি করলে পাপের মাত্রাও বেশি।
অথচ দুঃখের বিষয় হল আমাদের দেশের প্রচুর সংখ্যক মসজিদ মাদ্রাসায় পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন অর্থাৎ, পরিচালনা কমিটিতে যারা থাকেন তারা মসজিদ মাদ্রাসা পরিচালনার মাসআলা মাসায়েল সম্বন্ধে সম্যক অবগত নন। ফলে অনেক কিছুই তারা নিজেদের খেয়াল খুশিমত করেন, মাসআলা মাসায়েলের খেলাফ করেন। আরও দুঃখের বিষয় হল অনেক স্থানে কমিটিকে ভুল ধরিয়ে দিলেও তারা ভুল সংশোধন না করে ভুলের উপরই গোঁ ধরে থাকেন। এভাবে তারা মসজিদ মাদ্রাসা কমিটিতে আসেন ছওয়াব কামাই করার জন্য, কিন্তু কামাই করে যেতে থাকেন গোনাহ।
এরকম গোনাহ কামাইয়ের একটা হল মসজিদ মাদ্রাসার স্টাফদের বেতন ভাতায় অবিচার করা। যেসব মসজিদ মাদ্রাসায় ফান্ডের ঘাটতি থাকার ফলে পরিচালনা কমিটি আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্টাফের উপযুক্ত বেতন-ভাতা দিতে পারেন না, তারা আশা করা যায় চেষ্টা করে যাওয়ার শর্তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেয়ে যাবেন। কিন্তু ফান্ডের ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও যেখানে পরিচালনা কমিটি স্টাফের উপযুক্ত বেতন-ভাতা দিতে ত্রুটি করবে, অবহেলা বা গোঁয়ার্তুমি করে স্টাফের প্রতি এভাবে অবিচার চালিয়ে যাবে, নি:সন্দেহে সেই পরিচালনা কমিটির লোকজন বান্দার হক নষ্ট করার কারণে কবীরা গোনাহে আক্রান্ত হবেন। যদি তারা এটাকে গোনাহই মনে না করেন, তাহলে তা হবে আরও মারাত্মক গোনাহ। আরও মনে রাখতে হবে এটা বান্দার হক নষ্ট করার কারণে গোনাহ। আর বান্দার হক নষ্ট করা এমন গোনাহ যে, সংশ্লিষ্ট বান্দাহ সেটা মাফ না করলে আল্লাহও তা মাফ করবেন না।
মসজিদ মাদ্রাসা কমিটির লোকজন এমনকি কিছু মাদ্রাসার মুহতামিমদেরও দেখা যায় তাদের মানসিকতা হল- ইমারত নির্মাণ প্রভৃতি বৈষয়িক কাজে ব্যয় করতে পারাকে তারা কাজের কাজ মনে করেন। পক্ষান্তরে স্টাফের বেতন-ভাতা দেওয়া যেন তাদের কাছে একটা গুরুত্বহীন কাজে ব্যয় করা। এ কারণে জেনারেল ফান্ডের অর্থ -যা দিয়ে স্টাফের বেতন-ভাতা দেওয়া যায়- এলেই তা ইমারত নির্মাণ প্রভৃতি বৈষয়িক কাজে ব্যয় করে ফেলেন। ফলে স্টাফের বেতন-ভাতা প্রদানের মত অর্থের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। এটাও ভারসাম্যহীনতা। সকলকেই মনে রাখতে হবে স্টাফের বেতন-ভাতা প্রদান করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে ইমারত নির্মাণ প্রভৃতি বৈষয়িক জাঁকজমক ফরয ওয়াজিব পর্যায়ের বিষয় নয়। এসব ক্ষেত্রে যতটুকু একান্তই না হলে নয় ততটুকু সম্পন্ন হওয়ার পর জেনারেল ফান্ডের অর্থ দিয়ে আগে স্টাফের বেতন ভাতা পরিশোধ করে নেওয়া চাই। এটাই মাসআলা। মনে রাখা চাই কমিটিও মাসআলার ঊর্ধে নয়, মুহতামিমগণও মাসআলার ঊর্ধে নন। তবে হ্যাঁ, খাস কনস্ট্রাকশন খাতের জন্যই যদি কোন অর্থ আদায় হয়ে থাকে তাহলে সেটা সেই খাতেই ব্যয় হবে।
মসজিদ মাদ্রাসার স্টাফদের উপযুক্ত বেতন-ভাতা না দেয়ার ফলে স্টাফের অনেকে দায়িত্ব পালনে অনীহার শিকার হয়, অনেকে অনন্যোপায় হয়ে আরও কিছু উপার্জনের তাগিদে যে সময় ও মেধা প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় করতে পারত তা অন্যভাবে উপার্জনের পেছনে ব্যয় করে। এভাবে দ্বীনী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেকে না-জায়েয বা গায়র মুনাসেব তরীকায় উপার্জনের পথে অগ্রসর হয়। অনেক মেধা দ্বীনী লাইন ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। এই সব নেতিবাচ্যতার দায়ও পরিচালনা কমিটি বা মুহতামিমগণ একেবারেই এড়াতে পারেন না।
যে সমস্ত এলাকায় মসজিদ মাদ্রাসার স্টাফদের বেতন-ভাতায় অবিচার হচ্ছে, সেখানকার অধিবাসীদেরও দায়িত্ব মাসআলাগত কারণে এবং মানবিক কারণে এরূপ অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। বিশেষত দ্বীনদার যুবসমাজ এ ব্যাপারে খাস ভূমিকা রাখতে পারে।
আমি বলছি না মসজিদ মাদ্রাসার স্টাফের একেকজনের মাসিক বেতন-ভাতার পরিমাণ ঠিক কী হওয়া চাই। অবস্থা ও কাল ভেদে সেটা পরিবর্তনশীল। সুবিবেচনাই এ ক্ষেত্রে সঠিক ফয়সালা এনে দিবে। তবে বর্তমান সময়ে (2023 সালের কথা বলছি) শহরের জীবনে দশ বার হাজার টাকা যে মোটেই যথেষ্ট নয় তা বলাই বাহুল্য।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সুমতি দান করুন, ভারসাম্য দান করূন। আমীন!
কেএল/